করোনা সংক্রমণ রোধে সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউনে বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় অব্যাহত ছিল প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা। গতকাল শনিবারও পুলিশ-সেনাবাহিনীর টহল ছিল জোরদার। এদিকে কঠোর লকডাউনের মাঝেও নানা অজুহাতে মানুষকে ঘর থেকে বের হতে দেখা গেছে। এতে করে জরিমানার মুখে পড়তে হয়েছে অনেককে।
সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি জানান, করোনা মহামারী প্রতিরোধে কঠোর লকডাউনে অভিযান অব্যাহত রেখেছে সীতাকুণ্ড উপজেলায় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। মহাসড়কে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর টহল ছিল জোরদার। গতকাল শনিবার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহাদাত হোসেনের নেতৃত্বে দিনব্যাপী অভিযান পরিচালিত হয়। এরপরও নানা ছুতোয় মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে। এছাড়া সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে শ্রমজীবী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও নিম্ন আয়ের মানুষের বাইরে চলাচল ছিল চোখে পড়ার মতো। বিকাল ৫টার পর দোকান খোলা রাখার অভিযোগে উপজেলার সীতাকুণ্ড পৌর সদর বাজার, শুকলালহাট, বাড়বকুণ্ড বাজার, বাঁশবাড়িয়া, মগপুকুর, কুমিরা, জোরামতল, ফুলতলা, বারআউলিয়া, বড় কুমিরা, ভাটিয়ারী, ফৌজদারহাট, জলিল, ছলিমপুর ওভারব্রিজ এলাকায় অভিযান চালানো হয়। বিকাল ৫টার পর খোলা রাখা এবং রেস্টুরেন্টের ভেতরে বসিয়ে কাস্টমারকে খাওয়ানোর অভিযোগে ৯টি মামলায় ৩৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহাদাত হোসেন জানান, সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
বাঁশখালী প্রতিনিধি জানান, লকডাউন কার্যকর ও স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে বাঁশখালী উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সমন্বয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়। এ সময় সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মুল) আইন- ২০১৮ এর আওতায় ১৪টি মামলা দায়ের করে ২ হাজার ৪০০শত টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। বাঁশখালীতে লকডাউনে কঠোর নজরদারির অংশ হিসাবে বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুজ্জামান চৌধুরী ও বাঁশখালী সহকারি কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ মাযহারুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সমন্বয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে। এ সময় অকারণে বের হওয়া সিএনজি অটোরিক্সা, মোটরসাইকেল ও বিভিন্ন দোকানিকে ১৭ টি মামলায় ২ হাজার ৪০০শত টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। এ ব্যাপারে বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, সারাদেশে করোনা পরিস্থিতি দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। তাই এ ব্যাধি থেকে রক্ষা পেতে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহবান জানান তিনি। এদিকে করোনা ও লকডাউন চলাকালীন সময়ে পূর্বের ১৩৩টি ও গতকালের ১৭টি মিলে মোট ১৫০টি মামলা এবং পূর্বের ৫৬ হাজার ৩৫০ টাকা জরিমানাসহ গতকালের ২৪০০ মিলে ৫৮ হাজার ৭৫০ টাকা মোট জরিমানা করা হয় বলে তিনি জানান।
রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি জানান, সারাদেশে চলমান কঠোর লকডাউনের দশম দিন রাঙ্গুনিয়ার বিভিন্ন অলি-গলিসহ মহাসড়কগুলোতে বেড়েছে যানবাহন এবং মানুষের চলাচল। পুলিশের চেকপোস্টগুলোতে প্রথমদিকে কড়াকড়ি থাকলেও এখন অনেকটা শিথিলতা দেখা যাচ্ছে। তবে অব্যাহত রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর টহল কার্যক্রম। অন্যদিকে লকডাউন ও স্বাস্থ্যবিধি বাস্তবায়নে প্রতিনিয়িত একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছে উপজেলা প্রশাসন। গতকাল শনিবার সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার বিভিন্ন সড়কে রিকশা, অটোরিকশা, মোটরসাইকেল এবং ব্যক্তিগত ও পণ্যবাহী যান চলাচল করছে কোনো যাচাই ছাড়াই। সকালের দিকে উপজেলার রাণীরহাট বাজারে ব্যাপক ভিড় দেখা গেছে। চট্টগ্রাম-রাঙামাটি মহাসড়কের পাশেই চায়ের দোকানে বসে আড্ডা ও বাজারে ঘুরাফেরা করতে দেখা গেছে সাধারণ মানুষকে। এসময় কারোরই স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা করতে দেখা যায়নি। একই অবস্থা দেখা যায় ধামাইরহাট, আলমশাহপাড়া, মোগলের হাট, শান্তিনেকেতনসহ বিভিন্ন এলাকায়। তবে কাপ্তাই সড়কের মরিয়মনগর চৌমুহনী এলাকায় সড়কে তল্লাশিচৌকি বসিয়ে অভিযান চালাতে দেখা যায় রাঙ্গুনিয়া থানার ওসি মো. মাহবুব মিল্কীকে। তিনি গাড়িতে তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন এবং বিধিনিষেধ অমান্যকারীদের সতর্ক করেছেন। এসময় তিনি মাস্ক বিতরণ করেন। অভিযানকালে এই স্থানে সড়ক অনেকটা ফাঁকা হয়ে যায়। তবে তল্লাশিচৌকির অদূরে গাড়িতে যাত্রী উঠানামা ও মানুষের আনাগোনা দেখা গেছে। এ সময় জানতে চাইলে রাঙ্গুনিয়া থানার ওসি মাহবুব মিল্কী বলেন, সড়কে প্রথম থেকেই কঠোর অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। অপ্রয়োজনীয় কাউকে বাইরে পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এইকাজে পুলিশের ৬টি তল্লাশিচৌকি এবং ভ্রাম্যমাণ দল নিয়মিত কাজ করছে বলে তিনি জানান।
এ বিষয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাজীব চৌধুরী বলেন, সড়কে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে। বিধিনিষেধ অমান্য করায় এখন পর্যন্ত লক্ষাধিক টাকার জরিমানা আদায় করা হয়েছে। তবে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় মানুষকে নিজে থেকে সচেতন হতে হবে বলে তিনি জানান।