নাটকীয় ম্যাচে নেপালকে হারিয়ে শিরোপার পথে বাংলাদেশ

সাফ অনূর্ধ্ব-২০ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ

ক্রীড়া প্রতিবেদক | সোমবার , ১৪ জুলাই, ২০২৫ at ৭:৫৪ পূর্বাহ্ণ

সদ্য এশিয়া কাপ খেলা নিশ্চিত করা বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল নিজেদের মাঠে সাফ অনূর্ধ্ব২০ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে মাঠে নেমেছিল ফেভারিট হিসেবে। শুরুটাও যথারীতি ছিল ফেভারিটের মতই। শ্রীলংকাকে গোল বন্যায় ভাসিয়ে শুরু করেছিল স্বপ্নারা। দ্বিতীয় ম্যাচে এসে অনেকটাই হোঁচট খেতে বসেছিল। তবে একেবারে শেষ মুহূর্তের গোলে নেপালকে হারিয়ে শিরোপার পথে আরো একধাপ এগিয়ে গেল টুর্নামেন্টের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন বাংলার নারীরা।

এবারের আসরে ভারত অংশ না নেওয়ায় বাংলাদেশ দলের মূল প্রতিপক্ষ মানা হচ্ছিল এই নেপালকে। সেই নেপালকেই গতকাল নাটকীয় ম্যাচে হারিয়েছে বাংলাদেশ। বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় অনুষ্ঠিত নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে নেপালের বিপক্ষে ৩২ গোলে জয় পেয়েছে আফঈদা খন্দকারের দল। ম্যাচের প্রথমার্ধে ২০ গোলে এগিয়ে ছিল তারা। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে দুই গোল হজম করে বসে স্বাগতিকরা। ম্যাচ যখন নিশ্চিত ড্রয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, শেষ বাঁশি বাজার ঠিক আগ মুহূর্তে তৃষ্ণা রানীর গোলে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ। এই জয়ের ফলে টানা দুই ম্যাচে জিতে ৬ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট তালিকার সবার উপরে বাংলাদেশ। ম্যাচের শুরু থেকেই নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করে খেলতে থাকে বাংলাদেশ। ম্যাচের তৃতীয় মিনিটে কর্নার থেকে আসা বল কেড়ে নিতে বক্সের ভেতর সৃষ্টি হয় জটলা। সেখানে নেপাল গোলরক্ষক সুজাতা তামাংকে একা পেয়ে গোল করতে পারেননি আগের ম্যাচে হ্যাটট্রিক করা সাগরিকা। অষ্টম মিনিটে রিতার পাসে মাথা ছোঁয়াতে ব্যর্থ হন সিনহা জাহান শিখা। একের পর এক আক্রমণে নেপালকে চাপে রাখার সুফল বাংলাদেশ পায় ১৪ মিনিটে। বাঁ প্রান্ত দিয়ে সাগরিকার পাস ধরে বক্সে ঢুকে পড়েন মুনকি। দুই ফুটবলারকে কাটিয়ে গোলরক্ষককেও পরাস্ত করেন তিনি। তার সেই শট গোললাইন থেকে ফিরিয়ে দেন নেপালের গঙ্গা রোকিয়া। কিন্তু পুরোপুরি বিপদমুক্ত করতে পারেননি। উল্টো বল ঠেলে দেন শিখার কাছে। দারুণ এক শটে বাংলাদেশকে এগিয়ে দেন শিখা। ৩৬ মিনিটে শান্তি মার্দির ক্রসে বল পেয়ে দুবারের চেষ্টায় সুজাতাকে টপকাতে ব্যর্থ হন শিখা। তবে সুযোগসন্ধানী সাগরিকা কোনো ভুল করেননি। সুজাতার হাত ফসকে বেরিয়ে যাওয়া বল দ্রুত জালে পাঠান তিনি। বিরতির পর দুই দলই গোলের জন্য মরিয়া হয়ে খেলতে থাকে। ৫০ মিনিটে মুনকির পাসে সুযোগ পেয়েছিলেন সাগরিকা। কিন্তু গতির ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেননি। ৫২ মিনিটে স্বপ্না রানির থ্রু বলে গোলরক্ষককে একা পান শিখা। কিন্তু তার শট পোস্টের অনেকটা বাইরে দিয়ে চলে যায়। ৫৫ মিনিটে লাল কার্ড দেখেন বাংলাদেশ এবং নেপালের দুই ফুটবলার। বাংলাদেশের সাগরিকার সঙ্গে হাতাহাতিতে জড়ান নেপালের সিমরান রায়। সাগরিকা বল নিয়ে ছুটছিলেন। তাকে ঠেকাতে গিয়ে মেজাজ হারিয়ে ঘুষি মেরে বসেন সিমরান। সেটার জবাব দেন সাগরিকাও। রেফারি দুজনকে লাল কার্ড দেখান। ফলে বাকিটা সময় দুই দলকেই ১০ জন নিয়ে খেলতে হয়েছে। ৭৬ মিনিটে নেপালের ফুটবলার মিনাকে বক্সের ভেতর ফেলে দেন জয়নব। পেনাল্টি পায় সফরকারীরা। স্পট কিক থেকে কোনাকুনি শটে ব্যবধান কমান আনিশা রায়। এরপর সমতা ফেরাতে আরও মরিয়া হয়ে ওঠে নেপাল। ৮৬ মিনিটে সমতায় ফেরে নেপাল। পুর্ণিমার আড়াআড়ি ক্রস বুটের তলার টোকায় স্বর্ণাকে পরাস্ত করেন মিনা। অতিরিক্ত ৭ মিনিটের খেলাও প্রায় শেষ। আহত হয়ে মাঠে পড়ে যান বাংলাদেশ দলের গোল রক্ষক। তার সেবা চলছিল। তিনি সুস্থ হয়ে ফিরলে আর আধা মিনিটের মত বাকি ছিল তখন খেলা। আর সে সময় বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করেন তৃষ্ণা রানী। ডান দিক থেকে উমহেলার আড়াআড়ি ক্রস নিখুঁত টোকায় জালে জড়িয়ে দেন তৃষ্ণা। সম্ভাব্য ড্রয়ের হতাশা ঝেড়ে জয়ের উচ্ছ্বাসে মাতে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের শেষ ম্যাচটা ভুটানের বিপক্ষে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরাজস্বের শীর্ষপদে নিয়োগের নীতিমালা হবে : ফাওজুল কবির
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬