দৈনিক আজাদীতে সংবাদ প্রকাশের জের ধরে এবার বায়েজিদের পূর্ব নাসিরাবাদ এলাকার গ্রীণ ভ্যালী হাউজিংয়ের ১০ ভবন মালিকের বিরুদ্ধে নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানায় মামলা দায়ের করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। গতকাল বুধবার পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয়ের জুনিয়র কেমিস্ট মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন বাদী হয়ে পরিবেশ আইনে মামলাটি দায়ের করেন।
নাগিন পাহাড়ের বিএস ২৮১ দাগের পাহাড় কেটে প্লট তৈরি করার অপরাধে তাদের বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয় বলে জানিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। মামলার আসামিরা হলেন, দোতলা ভবনের মালিক খোরশেদ আলম ওরফে টুকু, জারিয়া বারোস টাওয়ারের মালিক খালেদ মাহমুদ বাবুল, শোয়েব ভিলার মালিক শোয়েব, গ্রীন হাইট ভবনের মালিক জাহাঙ্গীর আলম, মনোয়ারা ম্যানসনের মালিক আবুল কালাম ও রাশেদ, খাগুতিয়া বিল্ডিংয়ের মালিক মো. মনির উদ্দিন, ৩ তলা বিল্ডিংয়ের মালিক মো. মনসুর প্রবাসী, ৬ তলা বিল্ডিংয়ের মালিক মো. আমীর হোসেন, তিনটি টিনশেড ঘরের মালিক নুরুচ্ছাবাহ এবং আরেকটি ৬ তলা ভবনের মালিক মো. ওয়াহিদুল্লাহ।
পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত ২৭ সেপ্টেম্বর পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মিয়া মাহমুদুল হক, জুনিয়র কেমিস্ট মো. ছানোয়ার হোসেন এবং পরিদর্শক মো. সাখাওয়াত হোসাইন নাগিন পাহাড় এলাকায় এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করেন। এসময় পাহাড় কেটে প্লট তৈরি করে ভবন ও স্থাপনা নির্মাণের প্রমাণ পেয়ে ১০ ভবন মালিককে নোটিশ দেন ২৯ সেপ্টেম্বর শুনানিতে হাজির হওয়ার জন্য। কিন্তু নির্ধারিত দিনে শুনানিতে হাজির হননি এবং সময়ের আবেদনও করেননি ১০ ভবন মালিক।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, পরিবেশ অধিদপ্তরের এনফোর্সমেন্ট টিম অভিযান চালিয়ে দোতলা ভবনের মালিক খোরশেদ আলম ওরফে টুকুর বিরুদ্ধে ৮ হাজার ঘনফুট, জারিয়া বারোস টাওয়ারের মালিক খালেদ মাহমুদ বাবুল ৭ হাজার ৮৭৫ ঘনফুট, শোয়েব ভিলার মালিক শোয়েব ৯ হাজার ঘনফুট, গ্রীণ হাইট ভবনের মালিক জাহাঙ্গীর আলম ২৪ হাজার ৫শ ঘনফুট, মনোয়ারা ম্যানসনের মালিক আবুল কালাম গং ও রাশেদ ৪৫ হাজার ঘনফুট, খাগুতিয়া বিল্ডিংয়ের মালিক মো. মনির উদ্দিন ১১ হাজার ২৫০ ঘনফুট, ৩ তলা বিল্ডিংয়ের মালিক মো. মনসুর প্রবাসী ১১ হাজার ২৫০ ঘনফুট, ৬ তলা বিল্ডিংয়ের মালিক মো. আমীর হোসেন ১৫ হাজার ঘনফুট, তিনটি টিনশেড ঘরের মালিক নুরুচ্ছাবাহ ২১ হাজার ঘনফুট এবং ৬ তলা ভবনের মালিক মো. ওয়াহিদুল্লাহ বিগত সময়ে ৩০ হাজার ঘনফুটসহ সবাই প্রায় ১ লক্ষ ৮২ হাজার ৮৭৫ ঘনফুট পাহাড় কেটেছেন বলে প্রমাণ পান।
পরিবেশ অধিদপ্তর মহানগর কার্যালয়ের পরিচালক মো. নূরুল্লাহ নূরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, নাগিন পাহাড় এলাকায় পাহাড় কেটে অনেক ভবন তৈরি করা হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের এনফোর্সমেন্ট টিম অভিযান চালিয়ে ১০ প্লট মালিককে শুনানিতে হাজির হওয়ার নির্দেশনা দিয়েছিল। কিন্তু বুধবার নির্ধারিত দিনে তাদের কেউ শুনানিতে হাজির হননি। তাই তাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দেওয়া হয়েছে।
বায়েজিদ থানার ওসি মো. কামরুজ্জামান দৈনিক আজাদীকে বলেন, পাহাড় কেটে ভবন নির্মাণ করার অভিযোগে একটি মামলা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। মামলাটি পরিবেশ অধিদপ্তরই তদন্ত করবেন।
প্রসঙ্গত, প্রসঙ্গত, গত ১৮ সেপ্টেম্বর দৈনিক আজাদীতে ‘নাগিন পাহাড় বাঁচবে না? রাতের আঁধারে মাটি নিয়ে যান প্রভাবশালীরা, পাহাড়ি ভূমিতে তৈরি হচ্ছে ভবন’ শীর্ষক সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর গত ২৩ সেপ্টেম্বর প্রথম এনফোর্নমেন্ট অভিযানে ৩০ জনকে নোটিশ দেওয়া হয়। তন্মধ্যে গত ২৬ সেপ্টেম্বর শুনানি শেষে ১৬ ব্যক্তির কাছ থেকে ৩২ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করে পরিবেশ অধিদপ্তর।