সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী নানা সীমাবদ্ধতা ও সীমিত সামর্থ্যের মধ্যেও নাগরিক সেবা নিশ্চিত করে শহরকে সুন্দরভাবে সাজানোর চেষ্টা করছেন বলে জানিয়েছেন। দায়িত্ব পালনকালে কৃচ্ছ্রতাসাধন করে চসিকের সাড়ে ৫০০ কোটি টাকা দেনা পরিশোধ করেছেন বলেও জানান তিনি। গত বুধবার সকালে টাইগারপাসস্থ চসিকের অস্থায়ী কার্যালয়ে সংস্থাটির প্রাক বাজেট (২০২৪–২৫ অর্থবছর) আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
মেয়র বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে বছরে আমাদের ৪০ কোটি টাকা দেয়া হয়, তাও হোল্ডিং ট্যাক্স। অথচ এই বন্দরের টাকা বিভিন্ন খাতে ব্যয় হয়। আর চট্টগ্রামের দুরবস্থা। অর্থের জন্য আমাদের তীর্থের কাকের মত চেয়ে থাকতে হয়।
তিনি বলেন, আমি নৌ–পরিবহন মন্ত্রীকে বলেছি, বন্দরের আয় থেকে ১ শতাংশ দেওয়ার বিষয়টি আইনগত বাধার জন্য হচ্ছে না। কিন্তু চট্টগ্রাম বন্দরে আনলোড করা প্রতিটি কন্টেনার থেকে সিটি ডেভেলপমেন্ট চার্জ দিতে হবে। যত ট্রাক–লরি বন্দর থেকে বের হবে সেখানে টোল আদায় করতে হবে এবং সিটি কর্পোরেশনকে দিতে হবে। এতে সিটি কর্পোরেশন বছরে ১৫০–২০০ কোটি পাবে। কাস্টমসে বিল অব এন্ট্রিতে বিভিন্ন চার্জ আদায় করা হয়, সেখানে কর্পোরেশনের জন্য যদি সিটি ডেভেলপমেন্ট চার্জ যুক্ত করা হয় কর্পোরেশনের আয় বাড়বে। সিটি কর্পোরেশন এমনিতেই এগিয়ে যাবে।
মেয়র বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে বলেছি– প্রকৃতির লীলভূমি চট্টগ্রাম। কিন্তু চট্টগ্রামের মানুষের নিঃশ্বাস ফেলার জায়গা নেই। একটা পার্ক নেই আমাদের। সবাই আমাদের লজ্জা দেয়। প্রধানমন্ত্রী পার্কের জায়গা বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছেন। এ সময় মেয়র নগরের প্রতিটি ওয়ার্ডে শিশুদের খেলার মাঠ করার চেষ্টা করছেন উল্লেখ করে বলেন, চান্দগাঁও, বাকলিয়াসহ কয়েক জায়গায় করে দিয়েছি। সামান্য জায়গা পেলেও ব্যবস্থা করব। ইন্টারন্যাশনাল মাল্টিপারপাস কনভেনশন হল ও ওশান অ্যামিউজমেন্ট পার্ক করারও চিন্তা আছে। সিটি কর্পোরেশন জেনারেল হাসপাতালে ডেডিকেটেড শিশু হাসপাতাল করার পরিকল্পনা আছে। অনেক কিছু করার ইচ্ছে আছে। আয়বর্ধক কিছু করতে গেলে পারমিশন নিতে নিতেই সময় চলে যাচ্ছে। তারপরও আমরা সীমিত সামর্থ্যে চেষ্টা করছি।
এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যাবে যে, ‘বাংলাদেশের উন্নয়নে আমাদের প্রায় অর্ধশত শতাব্দী যাত্রার জন্য আমরা সত্যিই গর্বিত। এটি আমাদের সার্বিক চমকপ্রদ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে দৃশ্যমান। কৃষি খাতে বৈচিত্র্য দৃশ্যমান। শিল্প খাতের অগ্রগতিও আশাব্যঞ্জক। অবকাঠামোতে ভালো রকমের উন্নতি হয়েছে। আরো তাৎপর্যপূর্ণভাবে উন্নয়ন ঘটেছে মানুষের জীবনমানে ও মানব উন্নয়ন সূচকে।’
দেশ যেভাবে এগিয়ে গেছে, ঠিক সেভাবে এগিয়ে যাওয়ার কথা ছিলো চট্টগ্রামের। ভাষা আন্দোলন, স্বাধিকার আন্দোলন ও স্বাধীনতা সংগ্রামে চট্টগ্রামের বিশেষ অবদান রয়েছে। স্বাধীনতার ৫০ বছরের দিকে দৃষ্টিপাত করলে সেই অনুপাতে চট্টগ্রামবাসী প্রত্যাশিত কিছু পেয়েছে বলে মনে হয় না। চট্টগ্রাম বন্দর ও চট্টগ্রামের শিল্পাঞ্চল দেশের অর্থনীতিতে যেভাবে অবদান রাখছে সে অনুপাতে চট্টগ্রামবাসীর সামাজিক এবং অর্থনৈতিকভাবে আরও বেশি মূল্যায়িত হওয়া দরকার ছিল; কিন্তু সেটি হয়নি। চট্টগ্রামের যে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সেটিও অক্ষত রাখতে পারিনি। চট্টগ্রামকে বাণিজ্যিক রাজধানী বলে থাকি। এটি কেবল বলার খাতিরে বলা। তার বাস্তব প্রয়োগ নেই। যদিও চট্টগ্রামবাসী তার প্রয়োগ দেখতে চায়। চট্টগ্রামকে তার যোগ্য মর্যাদা দিতে প্রায় সকলে বলে থাকেন। প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামের উন্নয়নকে নিজ হাতে তুলে নিয়েছিলেন। তারপরও আমরা বেশ কিছু বিচ্ছিন্ন উন্নয়ন প্রত্যক্ষ করি। প্রধান প্রধান সমস্যা নিরসনে তাঁদের আন্তরিকতা দেখি। চট্টগ্রাম বাংলাদেশের প্রাণভোমরা। তাই দেশের স্বার্থেই চট্টগ্রামের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন করতে হবে এবং পরিকল্পিত ও সমন্বিত পরিকল্পনার মাধ্যমে এই কাজ করতে হবে। বিগত কয়েক বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ অনেক দূর এগিয়েছে। আগেই বলা হয়েছে, চট্টগ্রামেও এই উন্নয়নের ছোঁয়া রয়েছে। তবে আমাদের মনে হয় এখানে পরিকল্পিত উন্নয়ন কম হয়েছে। প্রত্যাশার চট্টগ্রাম গড়তে সরকারকে আরো এগিয়ে আসতে হবে। পাশাপাশি আমাদেরও এ বিষয়ে ভাবতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, চট্টগ্রামের উন্নয়ন হচ্ছে না, তা বলা যায় না। তবে চট্টগ্রাম যেন বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠছে। কোনও চিন্তা–ভাবনা ছাড়াই পাহাড়–টিলা কেটে ভবন তৈরি, এদিকে বস্তির সারি, খাল–ছড়া ও নালার ওপর মার্কেট ও ঘরবাড়ি, পুকুর–দীঘি ভরাট করে নগরীর শোভা হারিয়ে ফেলা– সব নেতিবাচক উদাহরণ। চট্টগ্রামে জনসংখ্যা বেড়ে চলেছে। সে তুলনায় আবাসন বাড়ছে না। যা হচ্ছে তার বেশিরভাগই অপরিকল্পিত। বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, সড়ক, পার্ক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, পানি ও বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থা, গণপরিবহনসহ নাগরিক সুবিধাগুলো কমে গেছে। সব মিলিয়ে নগরবাসী আছেন অস্বস্তিতে। এগুলো নিয়ে সিটি মেয়রকে ভাবতে হবে।