ভাঙা সড়কের জন্য জনদুর্ভোগ তো আছেই। তার ওপর অনেক এলাকায় জ্বলে না সড়কবাতি। এতে আরো অসহনীয় হয়ে উঠছে ভোগান্তি। এ দুই সমস্যার পাশাপাশি বহু নাগরিক সমস্যা চিহ্নিত হয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) সাধারণ সভায়। সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধানে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি এখনো শহরের অনেক খালের মুখ বন্ধ উল্লেখ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সিডিএর প্রতি আহবান জানান। গতকাল সোমবার ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত হয় চসিকের বর্তমান পর্ষদের ষষ্ঠ সাধারণ সভা। টাইগারপাসস্থ চসিকের অস্থায়ী কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষ থেকে অংশ নিয়ে মেয়র এ সভার সভাপতিত্ব করেন। সভায় অংশ নেয়া কাউন্সিলরগণ বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেন তাদের বক্তব্যে।
অবশ্য সভায় পাথরঘাটা বালক উচ্চ বিদ্যালয়কে পূর্বের মত রবীন্দ্র-নজরুল বিদ্যালয় নামকরণের প্রস্তাব করা হয়। এছাড়া দক্ষিণ কাট্টলীতে আইসোলেশন সেন্টার নির্মাণ, সাগরিকা মোড় থেকে স্টেডিয়াম পর্যন্ত দুই পাশের সড়ক ও ফুটপাত থেকে দোকানপাট উচ্ছেদ করে সৌন্দর্যবর্ধন করারও প্রস্তাব করা হয়।
এক কাউন্সিলর বলেন, ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিসের প্রজনন মৌসুম শুরু হলেও কীটনাশক ছিটানোর বহু ফগার মেশিন নষ্ট পড়ে আছে। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে পিসি রোডের একাংশ, স্ট্রান্ড রোড ও স্টেশন রোড খানাখন্দ হয়ে থাকায় জনদুর্ভোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন অন্য এক কাউন্সিলর। সরাইপাড়া মৌসুমী আবাসিক এলাকার সড়কগুলো উঁচু করা হয়েছে। এতে সেখানকার সব বাসা-বাড়ি মূল সড়ক থেকে নিচু হয়েছে। এ অবস্থায় বৃষ্টি হলেই পানি ঢুকে যাচ্ছে বাসা-বাড়িতে, এমনটাই জানিয়েছেন স্থানীয় কাউন্সিলর মো. নুরুল আমিন।
সভায় অংশ নেয়া একাধিক কাউন্সিলরের সাথে আলাপকালে জানা গেছে, দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ডে ফইল্যাতলী বাজারে দীর্ঘদিন ধরে সড়ক বাতি নষ্ট, ফ্লাইওভারের লাইট না জ্বলার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। পাহাড়তলী ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. ওয়াসিম চৌধুরী ফ্লাইওভারে পানি জমে যাওয়ার সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আহবান জানান।
ফিরিঙ্গি বাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব কোরবানি পশুর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি পরিচ্ছন্ন কার্যক্রমে আরো গতি আনতে কোরবানিদাতাদের তালিকা করার প্রস্তাব দেন। এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ফরম সরবরাহের মাধ্যমে তালিকা সংগ্রহের পর কোরবানিদাতাদের কাছে ব্লিচিং পাউডার সরবরাহ করার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, অতীতে কখনো জলাবদ্ধতা না হলেও সাস্প্রতিক বর্ষণে ফিরিঙ্গি বাজারের বংশাল রোডসহ বিভিন্ন এলাকায় তীব্র জলাবদ্ধতা হচ্ছে। গত শনিবারও স্থানীয় লোকজন বাসাবন্দী হয়ে পড়েন।
মেয়র যা বললেন :
সভায় সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রামে ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাব বিস্তার এখন পর্যন্ত ঢাকার মত প্রকট নয় এবং এখনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে। ডেঙ্গু রোগ বিস্তার প্রতিরোধে যে সকল অতীব জরুরি পদক্ষেপ নেয়া দরকার তা প্রয়োগ করতে পরিচ্ছন্ন বিভাগ ও স্বাস্থ্য বিভাগের জনবলকে সক্রিয় রাখতে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। এডিস মশা প্রজননের উৎসগুলোতে প্রতিষেধক ওষুধ ছিটানো এবং নালা-নর্দমা-খাল ও জলাশয় আবর্জনা মুক্ত রাখতে যাবতীয় কর্মপন্থা চলমান রাখা হয়েছে। এ ব্যাপারে কাউন্সিলরদের নিজ নিজ ওয়ার্ডে তদারকি ও নজরদারির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
মশক নিধন কার্যক্রম সম্পর্কে মেয়র বলেন, ব্যবহৃত তরল ওষুধের কার্যকারিতা যাচাইয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ টিমের প্রতিবেদন পাওয়া মাত্র প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।
সভায় মেয়র নগরীর আলোকায়নের ক্ষেত্রে যে-সকল ব্যত্যয়, অপ্রতুলতা ও অপর্যাপ্ততা বিদ্যমান তা নিরসনের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, অনেক স্থানে বৈদ্যুতিক বাতি অচল হয়ে আছে, কিছু এলাকায় বৈদ্যুতিক তার চুরি হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ বিভাগ আলোকায়ন পুনরায় স্থাপনে জরুরি ভিত্তিতে কাজ শুরু করবে। এ ছাড়া বৃষ্টির কারণে যে সকল অভ্যন্তরীণ সড়ক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে সে সব সড়ক বৃষ্টি কমে আসলে মেরামত করা হবে। বেশি ক্ষতিগ্রস্থ সড়কের খানা খন্দকগুলো ইটের খোয়া দিয়ে ভরাট করা হবে।
তিনি বলেন, স্ট্র্যান্ড রোডের কাজ সমাপ্তির পথে। যে অংশগুলো এখন অনুপযোগী সেগুলো দ্রুত যান চলাচল উপযোগী করা হবে। পিসি রোডের অসমাপ্ত কাজ নভেম্বরের মধ্যেই শেষ করতে হবে। এখানে নতুন ঠিকাদার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। শেখ মুজিব রোডের যে অংশে সিডিএ এলিভেটর এঙপ্রেসওয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সেখানে স্বাভাবিক যান চলাচল ব্যহত হচ্ছে। এই অংশগুলো দ্রুত মেরামত করে দিতে সিডিএকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
চসিকের মালিকানাধীন অব্যবহৃত জায়গায় কি ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যায় সে ব্যপারে কাউন্সিলরগণ মতামত ও পরামর্শ গ্রহণ করবেন বলেও জনান মেয়র। তিনি বলেন, কোভিড-১৯ মোকাবেলায় সিটি কর্পোরেশনের ৫০ শয্যার আইসোলেশন সেনটারে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আক্রান্ত রোগী পরিবহনে অ্যাম্বুলেন্স সাভির্স, অঙিজেন সিলিন্ডার প্রদানসহ সব ধরণের চিকিৎসা সেবা প্রস্তুত রাখা হয়েছে।