নাইট গার্ডের নেতৃত্বে ইয়াবা সিন্ডিকেট !

প্রতিবন্ধী ছেলেও জড়িত পতেঙ্গায় গ্রেপ্তার ৫, এক লাখ পিস উদ্ধার

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ১৭ অক্টোবর, ২০২২ at ৩:৫৯ পূর্বাহ্ণ

সকলেই তাকে চিনত পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের নাইট গার্ড হিসেবে। গতকাল র‌্যাবের হাতে ধরা পড়ার পর সকলের চোখ ছানাবড়া। কারণ তাদের চেনাজানা নাইট গার্ড আনোয়ারা উপজেলার গহিরা এলাকার বাসিন্দা আব্দুল মালেকের নেতৃত্বে রীতিমতো একটি ইয়াবা সিন্ডিকেট পরিচালিত হয়। তার সংকেতের ওপর ভিত্তি করেই স্পিডবোটের মাধ্যমে ইয়াবা নিয়ে সৈকতে আসেন মাদক ব্যবসায়ীরা। এরপর তাদের কাছ থেকে ইয়াবার চালানগুলো বুঝে নিয়ে তিনি বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও উপজেলায় বিক্রি করেন।
মালেক একা নন, তার সঙ্গে এই ব্যবসায় জড়িত হয়েছে তার ছেলে মো. ইমরান হোসেনসহ ৫ জন। তারা পরস্পরের যোগসাজশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপতার মুখে প্রতিবন্ধীদের ব্যবহার করে ইয়াবার বড় চালানগুলো টেকনাফ থেকে সাগরপথে মহেশখালী-কুতুবদিয়া হয়ে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে নিয়ে আসে। অবশেষে স্পিডবোটে ইয়াবার চালান আনার সময় ধরা পড়েছে ‘ইয়াবা সম্রাট’ মালেকসহ ৫ জন।
গত শনিবার ভোর ৬টার দিকে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের মেইন পয়েন্ট ঘাটে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে র‌্যাবের সদস্যরা। আটক ৫ জন হলেন নাইট গার্ড মো. আব্দুল মালেক (৫২), তার ছেলে মো. ইমরান হোসেন (২০), মো. ওমর ফারুক (৪০), মো. নিজাম উদ্দিন (৩০) ও মো. হাসান মিয়া (২১)।
র‌্যাব জানায়, ইয়াবা ট্যাবলেটের একটি বড় চালান নিয়ে স্পিডবোটযোগে সাগরপথে পতেঙ্গা সী-বিচের দিকে আসছিল মাদক ব্যবসায়ীরা। তারা ওই চালান থেকে কিছু অংশ পতেঙ্গা সী-বিচ মেইন পয়েন্ট ঘাটের কিছুটা অদূরে সাগরে একটি লাইফ বোটের লোকজনের কাছে, বাকিগুলো অন্য কোথাও দেওয়ার কথা ছিল। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খবর পেয়ে পতেঙ্গা সী-বিচ মেইন পয়েন্ট ঘাটে অভিযান চালায় র‌্যাবের সদস্যরা। র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে নোঙর করা অবস্থায় ১টি লাইফ বোট ও স্পিডবোট করে কয়েকজন পালানোর চেষ্টা করলে র‌্যাব সদস্যরা ওই স্পিডবোটে থাকা ২ জন ও লাইফ বোটে থাকা ৩ জনকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় তাদের দুটি ট্র্যাভেল ব্যাগ তল্লাশি করে ১ লাখ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়, যার আনুমানিক মূল্য ৩ কোটি টাকা।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, আটক ৫ জনের মধ্যে আব্দুল মালেক পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের নাইট গার্ড, মো. হাসান মিয়া তার ছেলে। মালেক আট বছরের বেশি সময় ধরে নাইট গার্ড হিসেবে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে কর্মরত। প্রায় একই সময় থেকে ইয়াবা পাচারে জড়িত। তার সংকেত পেলেই ইয়াবা ভর্তি স্পিডবোট সমুদ্র সৈকতের ঘাটে নোঙর করে। তিনি মাদকদ্রব্যের চালান গ্রহণ করে তা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন। তার ছেলে হাসান প্রতিবন্ধী। তিনি বেশিরভাগ সময় টেকনাফে থাকেন এবং ইয়াবার চালান আনার জন্য টেকনাফ থেকে সবকিছু গুছিয়ে দেন। এখানেই শেষ নয়। মাদক আনা-নেওয়ার কাজে তার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন স্পিডবোটের কয়েকজন মালিক ও চালক।
অন্যদিকে নিজাম ছিলেন স্পিড বোট চালক। কয়েক মাস ধরে গার্মেন্টসে চাকরি নেন এবং ছুটির দিনে অবৈধ মাদক আনার বাহক হিসেবে কাজ করেন। ওমর ফারুক ওরফে প্যাকেজ ফারুক স্পিডবোটের মালিক। তার অনেকগুলো বোট থাকলেও মাদক চোরাচালানের কাজে একটি মাত্র বোট ব্যবহার করতেন।
র‌্যাবের সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) মো. নূরুল আবছার বলেন, তারা পরস্পরের যোগসাজশে ইয়াবার বড় চালানগুলো টেকনাফ থেকে সাগরপথে মহেশখালী-কুতুবদিয়া হয়ে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে নিয়ে আসত। এরপর চট্টগ্রাম, কঙবাজারসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে। এছাড়া তারা এলাকায় বিভিন্ন কাজের আড়ালে মাদক পরিবহনের কাজেও জড়িত ছিল। আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধব্রুনেই চাইছে হালাল মাংস-মাছ, বাংলাদেশ চাইল জ্বালানি
পরবর্তী নিবন্ধবাসায় না জানিয়ে বন্ধুদের সাথে গেল ঘুরতে, ঝরনায় ডুবে মৃত্যু