নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। উপজেলার ৫ ইউনিয়নে এ সংকট দেখা দিয়েছে। বহু নলকূপ, রিং ওয়েল অচল হয়ে পড়েছে। মানুষের এমন দুর্ভোগে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার জনস্বাস্থ্য বিভাগ তদারকি করেও কোনো কাজে আসছে না।
উপজেলার সীমান্তবর্তী ইউনিয়ন ঘুমধুমের ফাত্রাঝিরি, সদর ইউনিয়নের চাকড়ালা, উপজেলা সদর, বাগান ঘোনা, সোনাইছড়ি ও দোছড়ি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে খাবার পানির এ তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী শাহ মো. আজিজ বলেন, প্রচন্ড গরমে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় এ ৫ ইউনিয়নে অন্তত দেড় থেকে দুই শতাধিক রিংওয়েল, নলকূপ অকেজো হয়ে পড়েছে। এতে করে পাহাড়ি বাঙালিদের ঘরে ঘরে খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দেয়। এতে করে দুর্ভোগে পড়েছেন তারা।
ঘুমধুম তুমব্রু গ্রামের বাসিন্দা আবদু জাব্বার বলেন, খাবার পানির অভাবে গ্রাম ছেড়ে অন্য স্থানে অবস্থান করছি। আমাদের আশপাশের খাল–নালা, পুকুর, রিং ওয়েল সব শুকিয়ে গেছে। এ সরকারের আমলে অনেক রাস্তা ঘাটসহ নানা উন্নয়ন হলেও এখানো পানির সমস্যা নিরসন হয়নি। এছাড়াও অনেকে লেক, পুকুর ও ছড়ার ময়লা যুক্ত পানি খেয়ে ডায়েরিয়া, টাইফয়েডসহ নানা পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে এসব এলাকার মানুষ।
নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল আবছার ইমন বলেন, আমার ইউনিয়নের পানির সমস্যা দীর্ঘ দিনের। এ সমস্যা মাননীয় মন্ত্রীর মাধ্যমে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. শফিউল্লাহর প্রচেষ্টায় শীঘ্রই নিরসন হতে যাচ্ছে।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. শফিউল্লাহ বলেন, প্রচন্ড গরমে শুষ্ক মৌসুমের তিন মাস এসব পাহাড়ি এলাকায় খাবার পানির তীব্র সংকট দীর্ঘদিনের। গত ২০২১ সালে পার্বত্য বিষয়ক মন্ত্রণালের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপির আন্তরিকতায় নাইক্ষ্যংছড়িতে পানি সংকট নিরসনের কাজ শুরু হয়, যা এখনও চলমান রয়েছে। প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালের অধীনে চলমান এ কাজ দুই দাফ শেষ হয়ে তৃতীয় দাফ চলছে। যে কাজ আগামী অর্থবছরে শেষ হবে বলে জানান তিনি। এ প্রকল্পের কাজ শেষ হলে সদর ইউপির কোথাও পানির সমস্যা হবে না। এছাড়া পার্যায় ক্রমে উপজেলার সব এলাকার পাহাড়ি–বাঙালিদের পানির চাহিদা পূরণ করার আশ্বাস প্রদান করেন।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার রোমেন শর্মা বলেন, বন উজাড়, পাহাড় কাটা, ঝিরিতে বাঁধ দেয়াসহ যে সকল মানবসৃষ্ট কারণে প্রকৃতি বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে সে সবের বিরুদ্ধে প্রশাসন সব সময়ই অভিযান চালিয়েছে। কিন্তু জনতার জাগরণ না হলে কেবল অভিযান পরিচালনা করে প্রশাসনের পক্ষে পরিবেশ বাঁচানো প্রায় অসম্ভব। নিজেদের স্বার্থে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বার্থে প্রাণ–প্রকৃতিকে রক্ষা করি। সবাই যার যার অবস্থান থেকে প্রকৃতি–পরিবেশ রক্ষায় এগিয়ে আসি, গড়ে তুলি সবুজ বেষ্টনী। গাছের গোড়ায় কুড়াল মারার সময় একবারের জন্য হলেও ভাবি, নিজের পায়ে কুড়াল মারছি না তো? তাই পানির সংকট দূর করতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।