বাজিমাত করে দিলেন ক্ষ্যাপাটে প্রেসিডেন্ট হিসাবে বহুল পরিচিত ডোনাল্ড ট্রাম্প। সবাইকে অবাক করে দিয়ে আমেরিকার ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন কয়েকটি মামলার আসামি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২০১৬ সালে প্রথমবারের মতন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসাবে নির্বাচিত হন তিনি। রিয়েলস্টেট ব্যবসায়ী হিসাবে পরিচিতি পেয়েছেন ট্রাম্প। একজন ব্যবসায়ীকে আমেরিকানরা প্রেসিডেন্ট হিসাবে বেছে নিয়েছেন–এটা তো অত্যন্ত আশ্চর্য বিষয়। গুরুতর অভিবাসনবিরোধী এই রিপাবলিকান নেতা বরাবরই অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। আর এটি আমেরিকানরা খুব সহজে লুফে নিয়েছেন–যা ট্রাম্পের পক্ষে জয় পাওয়াটা সহজ হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে যে যুদ্ধের ডংকা চলছে তা বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি। এটি আমেরিকান মুসলিমরা ভালোভাবে নিয়েছেন। ওদিকে কমলা হ্যারিস মুখে মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিলেও তলে তলে ইসরায়েলে সামরিক সরঞ্জাম পাঠানোর ক্ষেত্রে কাপর্ণ্য করেনি–যেটি জো বাইডেনের রেখে যাওয়া পথকেই অনুসরণ করেছে মাত্র। দীর্ঘ এক বছর ধরে চলা গাজা যুদ্ধে শাহাদাত বরণ করেছেন ৪৪ হাজার নিরপরাধ নারী, শিশু ও সাধারণ মানুষ। আমেরিকার উপর ভর করেই মধ্যপ্রাচ্যের কসাই হিসাবে বিবেচিত যুদ্ধবাজ নেতা নেতানিয়াহু তার ক্ষমতা অটুট রাখতে গাজায় গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি লেবাননেও গণহত্যা চালাচ্ছে এই ফ্যাসিস্ট ইহুদিবাদী নেতা। সেখানেও ৩ হাজারের অধিক নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করেছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। প্রতিরোধ সংগঠন হিজবুল্লাহর প্রবল প্রতিরোধের মুখে পড়ে স্থল অভিযান থেকে সরে আসতে শুরু করেছে আইডিএফ। লেবাননের একটি গ্রামও তারা দখল করতে পারেনি। বীরত্বের সাথে লড়াই করে যাচ্ছে হিজবুল্লাহর যোদ্ধারা। ১২ লাখের অধিক লেবানিজ বাস্তচ্যূত হয়েছে। হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসারাল্লাহকে বাংকার ব্লাস্টার বোমার মাধ্যমে নির্মমভাবে হত্যা করে নেতানিয়াহু মনে করেছিল যে, হিজবুল্লাহ শেষ হয়ে যাবে কিন্তু ফিনিক্স পাখির মতন দ্বিগুণ শক্তিতে হিজবুল্লাহ জেগে উঠেছে। তারা জায়নবাদীদের বিরুদ্ধে দেশমাতৃকার লড়াইয়ে লড়ে যাচ্ছে বীরবেশে। ওদিকে হামাস প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে হত্যার পর নেতানিয়াহু মনে করেছিল–হামাস নিঃশেষ কিন্তু সমস্ত ধারণাকে তুচ্ছ জ্ঞান করে হামাস যোদ্ধারা বীরত্বের সাথে লড়ে যাচ্ছে কাফের গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। ইসরায়েলকে ন্যক্কারজনকভাবে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে বিশ্ব সন্ত্রাসী রাষ্ট্র আমেরিকা। জো বাইডেনের অতি উৎসাহের কারণে মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের ঘনঘটা লেগেই আছে। শুধু গাজা লেবানন নয়, সিরিয়া, ইয়েমেন সহ মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য এলাকায় হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। মধ্যপ্রাচ্যের ক্ষেত্রে আমেরিকার পররাষ্ট্রনীতি বদলে দেবার অঙ্গীকার করেছিল ডোনাল্ড ট্রাম্প। এটি আমেরিকায় বসবাসরত মুসলিম ইমিগ্রেন্টরা পজিটিভভাবে নিয়েছেন। কমলা হ্যারিসের চরম পরাজয়ের এটি একটি মূল কারণ। যদি ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্যের পররাষ্ট্রনীতি পরিবর্তনের ক্ষেত্রে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখতে পারে তবে তা হবে বিশ্বের জন্য একটি বিশাল মাইলফলক। অভিবাসননীতিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প তার প্রতিশ্রুতি রাখবে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা। আর এতে করে চরম ঝুঁকিতে পড়বে দীর্ঘদিন ধরে আমেরিকায় থাকা অভিবাসীরা আর মেক্সিকো সীমান্তে যারা আমেরিকায় ঢুকার জন্য প্রহর গুনছে তাদের কপালেও ভাঁজ পড়েছে। তারাও চরম সংশয়ে মানবেতর দিন কাটাচ্ছে সীমান্ত এলাকায়। আমরা যে যাই বলি না কেন, বিশ্ব মুসলমানদের জন্য আমেরিকা ও ইসরায়েল একটি বিষ ফোঁড়া। তাদের কথা ও কাজে কোন মিল থাকে না। হুট করে পররাষ্ট্রনীতি বদলানো তাদের পুরানো অভ্যাস। ভোটের প্রতিশ্রুতিতে ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য শান্তির কথা বললেও এখনও কার্যকর পদক্ষেপে তা প্রতিফলিত হচ্ছে কি–না সেটাই দেখার বিষয়। এর জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে আরও কয়েক মাস। এই বিশাল আকাশ জমিনের সার্বভৌমত্ব যেমনি মহাশক্তিধর আল্লাহর কাছে তেমনি বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যে ফিরে যেতে হবে তার কাছেই। মহাবিশ্বের মহাবিষ্ময় আসমানের নিচে এবং জমিনের উপর একমাত্র সত্য গ্রন্থ আল–কোরআনই দিতে পারে সমস্ত সমস্যার সমাধান। ডোনাল্ড ট্রাম্প কিংবা কমলা হ্যারিস কিংবা জো বাইডেন বিশ্বশান্তির ক্ষেত্রে কোন ভূমিকা রাখতে পারবে না, কেননা আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও ঈমান নেই তাদের। ইহুদি খ্রিস্টানদের এই ব্যাপারে আল্লাহতায়ালা ১৫০০ বছর আগেই আয়াত নাজিল করেছেন তাদেরকে বন্ধু না বানানোর জন্য। কারণ তারা মুসলমানদের শত্রু, কাফের। এটি আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে স্পষ্ট ঘোষণা। এ ব্যাপারে যাদের মনে সরিষার দানার মতো যদি সন্দেহ থাকে তবে সেই সমস্ত মুসলমানদের ঈমান নিয়ে প্রশ্ন থাকাটা স্বাভাবিক। এই পর্যন্ত আমেরিকার যতই প্রেসিডেন্ট এসেছে মুসলিমদের ব্যাপারে তাদের পররাষ্ট্রনীতি হুবহু একই। মুসলিমদের কল্যাণে তারা কখনও ভূমিকা রাখেনি এবং রাখবেও না। ফিলিস্তিনি বাসিন্দাদের উপর আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা চলছেই। অর্ধ লক্ষ ফিলিস্তিনবাসীর রক্তের বিনিময়ে এখনো স্বাধীনতা আসেনি তাদের। অথচ ১৫০০ প্রাণের বিনিময়ে বাংলাদেশে ২য় স্বাধীনতা এসেছে ৫ আগস্ট। এটি সবই আল্লাহতায়ালার অপূর্ব খেয়াল। কারো কারো কাছ থেকে তিনি অধিক পরীক্ষা গ্রহণ করে থাকেন। যে ফিলিস্তিনের বুকে মুসলমানদের প্রথম কেবলা অবস্থিত (বায়তুল মোকাদ্দাস) সেখানেই চলছে পৃথিবীর ইতিহাসে চরম হত্যাকান্ড। ২২ হাজার কিলোমিটারের একটি ক্ষুদ্র ইহুদি রাষ্ট্র এবং ৭০ লক্ষ ইহুদি বসতিতে ভরা এই দেশটি সারা বিশ্বের ২০০ কোটি মুসলিমদের নাকানি–চুবানি খাওয়াচ্ছে। বিশ্ব প্রযুক্তিতে এগিয়ে এই ইহুদি রাষ্ট্রটি। তাদের কলাকৌশলের কাছে মুসলিমরা আজ পরাজিত। শক্ত ঈমানের অভাবে আজ মুসলিমরা পর্যুদস্ত। কিছু মোনাফেক আরব বিশ্বের কারণে আজ ফিলিস্তিনবাসীদের রক্ত ঝরাতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। আরবলীগ সম্মেলন, বিশ্বশান্তি সম্মেলন, ওআইসি কনফারেন্স করে কার্যত কোন কিছুই পাওয়া যাবে না। যদি না এই বর্বর ইহুদি রাষ্ট্রটির উপর সামরিক শক্তি প্রয়োগ করা না হয়। যার ফলে হাজারো নিরপরাধ গাজার শিশু, নারী সাধারণ মানুষকে তাজা প্রাণ দিতে হচ্ছে। নিজের ভূমি রক্ষার্থে ইহুদিরা এতই বর্বর যে, এরা আল্লাহর কিতাবকে পর্যন্ত বিকৃত করে দিয়েছে। এরা বিশ্বের অনেক দাঈ ইলাল্লাহকে নির্মমভাবে শহীদ করেছে। রক্ত পিপাসু নেতানিয়াহু যেন মুসলিমদের শেষ করেই ছাড়বেন। বিশ্ব মোড়ল আমেরিকার উপর ভর করে ইহুদি রাষ্ট্রটি বিশ্বময় সন্ত্রাস চালিয়ে যাচ্ছে নিরবচ্ছিন্নভাবে আর মুসলিম আরব বিশ্ব নির্বিকারভাবে এই হত্যাকান্ড তাকিয়ে তাকিয়ে পর্যবেক্ষণ করছে। এতে অবশ্যই আল্লাহর হেকমত আছে যে, এত রক্তের প্রতিফলন কি হতে পারে? যারা মাতৃভূমি রক্ষার্থে নিজের জীবন দিয়েছেন তাদেরকে মৃত না বলতে আল্লাহতায়ালা নিষেধ করেছেন। ট্রাম্পনীতি যাই হোক না কেন পৃথিবীর জমিনে শান্তি স্থাপনে রক্ষাকবচ একমাত্র আল–কোরআন। এই কিতাবটির পথ ধরে হাঁটলে পাওয়া যাবে শান্তির সু–বাতাস, শান্তিময় ঠিকানা কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, এই বিষ্ময় কিতাবটিকে আমরা ঠেলে দিয়েছি যোজন যোজন দূরে। রসুনের খোসা যেমন একই রকম হয় তেমনি মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি হবে একই–এটি না ভাবার কোনো বিকল্প নেই। গাজা, লেবাননবাসীদের ভাগ্যে কি আছে একমাত্র তিনিই বলতে পারেন যিনি আরশে সমাসীন।
লেখক: সভাপতি–রাউজান ক্লাব, সিনিয়র কনসালটেন্ট (ইএনটি); রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতাল