দেশের প্রাচীনতম ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় অবস্থিত কর্ণফুলী জুটমিল তীব্র নদী ভাঙনের কবলে পড়েছে। ইতিমধ্যেই জুটমিলের প্রায় আধা কিলোমিটার অংশজুড়ে তীব্র ভাঙনে ধসে পড়তে শুরু করেছে সীমানা প্রাচীর, বিলীন হয়েছে শ্রমিক কলোনির বেশ কয়েকটি ঘর এবং ফাটল ধরেছে তিনতলা বিশিষ্ট একটি অফিসার্স ভবন। প্রতিরোধে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া না হলে ভাঙনে বিলীন হয়ে যাবে কর্ণফুলী জুট মিলের বিস্তীর্ণ এলাকা। এতে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এই প্রতিষ্ঠানের কোটি কোটি টাকার সম্পদ ধ্বংসের কবলে পড়বে বলে আশংকা করছেন স্থানীয়রা।
জানা যায়, ৬০ বছর আগে ১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত কর্ণফুলী জুট মিলস লিমিটেড রাষ্ট্রয়ত্ত্ব বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশনের অধীনস্থ ২৬টি মিলের মধ্যে এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলের ১০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম প্রধান পাটকল। ২০২২ সালের ফ্রেব্রুয়ারি মাসের দিকে এটি ২০ বছরের জন্য বেসরকারি খাতে বরাদ্দ পায় ইউনিটেক্স গ্রুপ। বর্তমানে ৪৭ একর আয়তনের এই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছে ৬০০ এর উপর শ্রমিক। যেখানে দুটি শিফটে দৈনিক ১৫ টনের উপর জুট থেকে সুতা উৎপাদিত হয়। যা চীন, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, টার্কি, ভিয়েতনামসহ বিশ্বের ১২টি দেশে রপ্তানি হয়। পর্যায়ক্রমে কার্পেট, জুট ব্যাগসহ আরও বিভিন্ন উপকরণ উৎপাদনের প্রক্রিয়া চালাচ্ছে বেসরকারি এই শিল্প প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু চলমান বর্ষায় নদী ভাঙনের তীব্রতা শুরুর পর থেকে প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা হতাশ হয়ে পড়েছেন।
গতকাল বুধবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কর্ণফুলী নদীপাড়ের প্রায় এক কিলোমিটার অংশজুড়ে প্রতিষ্ঠিত জুটমিলের বিস্তীর্ণ এলাকায় তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যেই জুটমিল সীমানার বাইরে নদী পাড়কেন্দ্রিক সড়কটির আধাকিলোমিটার অংশ ভেঙে বিলীন হয়ে স্থানীয়দের চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এখন কয়েক স্থান দিয়ে সীমানা প্রাচীর ভাঙতে শুরু করেছে। ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে বেশ কিছু শ্রমিক কলোনির বসতঘর। কলোনিতে থাকা আরও অন্তত ৪০টি ঘরও এখন ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। অন্যদিকে নদীপাড়ে স্থাপিত তিন তলাবিশিষ্ট একটি অফিসার্স ভবনও ভাঙনের কবলে পড়ে ফাটল দেখা দিয়েছে। শুধু জুটমিল অংশেই নয়, কর্ণফুলী নদীর অপর পাড়ে সরফভাটা এবং বেতাগী দিয়েও তীব্র নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা।
কথা হয় ইউনিটেক্স জুট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের সহকারী পরিচালক রায়হান আহমেদের সঙ্গে। তিনি জানান, দেশের প্রাচীনতম এবং রাষ্ট্রের অন্যতম মূল্যবান সম্পদ এই পাটকলটি। যার দুই পাশেই জেলেপল্লী রয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্য উভয়পাশেই ভাঙন প্রতিরোধে ব্লক স্থাপিত হলেও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ এই প্রতিষ্ঠানকে কর্ণফুলীর ভাঙনের কবল থেকে রক্ষার কোনোরকম প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। দ্রুত ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেয়া না হলে মহামূল্যবান এই মিলটির বিস্তীর্ণ অংশ নদীগর্ভে হারিয়ে যাবে।
ইউনিটেক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপক গোলাম মৌলা (লিগ্যাল অ্যান্ড এস্টেট) বলেন, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ এই সম্পদ রক্ষা করা খুবই প্রয়োজন। এজন্য ভাঙন ঠেকাতে দুই পাশের জেলে পল্লীর সঙ্গে মিলিয়ে ব্লক স্থাপন করা জরুরি হয়ে পড়েছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এখনই নজর দেয়া উচিত। না হয় জুটমিলের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, মহামূল্যবান বৃক্ষসম্পদসহ বেশকিছু অংশ নদীগর্ভে হারিয়ে যাবে।
এই ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের রাঙামাটি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী তয়ন কুমার ত্রিপুরা বলেন, আজকেই (বুধবার) পরিকল্পনা কমিশনের একটি টিমসহ আমরা কর্ণফুলী নদীর রাঙ্গুনিয়া অংশে ভাঙনের কবলে পড়া এলাকা পরিদর্শন করেছি, এর মধ্যে জুটমিল এরিয়াটাও আছে। বৃষ্টি কমলে সামনের মাসে টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নদী ভাঙন প্রতিরোধে ব্লক স্থাপন কাজ শুরু হবে। কাজটি শেষ হলে রাঙ্গুনিয়ার শতভাগ এলাকা নদীভাঙন মুক্ত হবে বলে আশা করি।