চট্টগ্রাম–১৫ (সাতকানিয়া–লোহাগাড়া) আসনের সংসদ সদস্য এম এ মোতালেব বলেছেন, নদভী সাহেবের অতীত ও বর্তমানের সঙ্গে জামায়াতের ছায়া প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। নদভী জামায়াত–শিবিরের ছায়া। এই কারণেই তিনি যত্রতত্র জামায়াতের ভূত দেখছেন। এটা দেখা স্বাভাবিক। কারণ তার হাতেই আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ সংখ্যক নেতাকর্মী দমন–পীড়নের শিকার হয়েছেন। চট্টগ্রামের আর কোনো এমপি ছিলেন না, যার হাতে এত বেশি সংখ্যক নেতাকর্মী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এখন তিনি তা অস্বীকার করতে চান। গতকাল রোববার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে সাতকানিয়া–লোহাগাড়ার সাবেক এমপি আবু রেজা নদভীর অপপ্রচার, মিথ্যাচার, সংঘাত সৃষ্টির অপচেষ্টা ও সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া অশালীন বক্তব্যের প্রতিবাদে পাল্টা সংবাদ সম্মেলনে মোতালেব এসব অভিযোগ করেন। সংবাদ সম্মেলনে নদভীর পরিবারের অর্জিত অবৈধ সম্পদের উৎস ও বিদেশে অর্থ পাচারের অনুসন্ধানে দুদকের তদন্ত ও বিচারের দাবি জানান তিনি।
নদভী জামায়াত জুজুর ভীতি ছড়াচ্ছেন অভিযোগ করে তিনি বলেন, জামায়াত–বিএনপি এখন হরতাল অবরোধ করার মতো ক্ষমতা রাখে না। আমাদের সাংগঠনিক তৎপরতার কারণে তারা সাতকানিয়া–লোহাগাড়া এলাকায় কোণঠাসা। কিন্তু অপ্রাসঙ্গিকভাবে সাবেক সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নদভী জামায়াতের জুজুর ভয় দেখাচ্ছেন। জামায়াতকে পৃষ্ঠপোষকতা তো তিনিই করেছেন তার ১০ বছরে। নদভীর মায়ের চেয়ে মাসির দরদ বেশি উল্লেখ করে সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ মোতালেব বলেন, ক্ষমতার দর্পে তিনি ধরাকে সরা জ্ঞান করেছিলেন। এখন আওয়ামী লীগের জন্য সেকি মায়াকান্না করছেন! একদিনও আওয়ামী লীগ না করে ক্ষমতার গাড়িতে চড়ে উড়ে এসে জুড়ে বসে তিনি যে রাজনীতি করেছেন, তা ইতিহাসে একটি কলঙ্কজনক অধ্যায় হয়ে থাকবে। পরিবারসহ নিজে খেয়ে আওয়ামী লীগের নামে দুর্নাম রেখে গেছেন। সংখ্যালঘুদের নির্যাতন করেছেন, আলেম–ওলামাদের নির্যাতন করেছেন। আর এসবের উপযুক্ত জবাব গত ৭ জানুয়ারি জনগণ সঠিকভাবে দিয়েছে। মোতালেব বলেন, কে না জানে উনার অপকর্মের কথা? এখন হঠাৎ সাংবাদিক সম্মেলনে শালীনতার সীমা অতিক্রম করে তিনি শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে চেয়েছেন। জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য প্রফেসর ডা. মিনহাজুর রহমানকে লক্ষ্য করে মিথ্যার তীর ছুড়তে দেখলাম। যদিও এই তীর ইতিমধ্যে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়েছে বলে আমার বিশ্বাস। কারণ ডা. মিনহাজকে এলাকার মানুষ ভালোবাসেন, তার কথায় আস্থা রাখেন।
তিনি বলেন, তারপর স্ত্রী, ভাইপো, শ্যালক, ভাগিনা, এপিএসরা সিন্ডিকেট করে লুটপাটের স্বর্গরাজ্য বানিয়েছিলেন সাতকানিয়া–লোহাগাড়াকে। এখন চোরের মায়ের বড় গলা হয়েছে। তিনি নিজেকে ধোয়া তুলসি পাতা ও নিষ্পাপ প্রমাণ করতে চান। তার তীর আমার দিকে নাকি সরকারের দিকে তা পরিষ্কার করতে হবে।
এম এ মোতালেব বলেন, আমার পরিবারের সবাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও আস্থাশীল। আমরা প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যেকটি নির্দেশনা মেনে চলতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। সুতরাং পরিবার তুলে বিদ্রূপ করে মূলত তিনি আমার মানহানির চেষ্টা করেছেন। আমি তার এ বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাই। তিনি (নদভী) ছয় খুনের মিথ্যা গল্প ফেঁদেছেন। সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া দুই থানার ওসি এ বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছেন। নদভী সাহেব এওচিয়া ইউনিয়নের শনখোলা গ্রামে একজনের মালিকাধীন একটি ব্রিকফিল্ড অন্যজনের নামে লিখে দিয়ে রাতারাতি ইট লুট করেছিলেন। টিআর ও কাবিখা প্রকল্প এমনভাবে বণ্টন করেছিলেন এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন, যাতে তার আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছে। তার ক্ষমতার দাপটের সামনে পিআইও ও ইউএনও ছিলেন অসহায়। সরকারি প্রকল্প নয়–ছয় করে, ঠিকাদারদের কাছ থেকে কমিশন নিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
সংসদ সদস্য থাকার সময় নদভীর বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তি তুলে ধরে মোতালেব বলেন, আমি যেসব সন্ত্রাসী, চোর–বাটপারকে ইতোমধ্যে দমন করেছি, তাদের পক্ষ নিয়েই নদভী ওই সংবাদ সম্মেলন করেছেন। অসংলগ্ন প্রলাপের মাধ্যমে সন্ত্রাসীদের রক্ষা করতে চেয়েছেন। নদভীর কাছ থেকে পাওনা টাকা ফেরত চেয়ে এবং দুর্নীতির বিচার চেয়ে বিশাল মানববন্ধন হয়েছে। তারা সবাই ছিল উনার পাড়া–প্রতিবেশী। যারা উনার হাতে নির্যাতিত এবং ভাইপো সেলিম চেয়ারম্যানের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছিল।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান, লোহাগাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খোরশেদ আলম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন হিরু, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিজয় কুমার বড়ুয়া, সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট আহমদ সাইফুদ্দীন সিদ্দিকী ও অ্যাডভোকেট প্রদীপ কুমার চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফয়েজ আহমদ লিটন ও জসিম উদ্দীন, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. শাহজাহান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম শিকদার, লোহাগাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিয়া কাশেম, সাংগঠনিক সম্পাদক মুজিবুর রহমান, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মামুনুর রশিদ, সাতকানিয়া উপজেলার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আঞ্জুমান আরা বেগম, সাতকানিয়ার পৌর মেয়র মোহাম্মদ জুবায়ের, সাতকানিয়া পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল গফুর লালু, সাধারণ সম্পাদক একেএম আসাদ, ইউপি চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন জুনু, নাজিমুদ্দিন, হারুন রশিদ, আব্দুল ওয়াহাব, আবু সালেহ, রমজান আলী, জসিম উদ্দিন, তাপস কান্তি দত্ত, ওসমান আলী, সেলিম উদ্দিন, হেলাল উদ্দিন, মোজাম্মেল হক চৌধুরী ও নাসির উদ্দিন টিপু, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান মাস্টার ও হাজী ইউনুস, চরতি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মুস্তাকিম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, আসহাব উদ্দিন, কাজী ইসহাক মিয়া, আলী আহম্মদ, করিম শিকদার, হারুনুর রশিদ, মুজিবুর রহমান, মোরশেদ আলম দুলু, অমল দাশ মানিক, নাসির উদ্দিন, শাহিনা আক্তার ছানা, হারুনুর রশিদ, উজ্জ্বল ধর, সাইফুল ইসলাম সুমন, রিদওয়ানুল হক সুজন, হুমায়ুন কবির, ইমরান হোসেন রকি, মিজানুর রহমান, নূর হোসেন, মো. আলী, আব্দুল মন্নান, একেএম আসিফুর রহমান চৌধুরী প্রমুখ।