স্বেচ্ছায় শ্রম দেওয়ার কথা থাকলেও আইআইইউসি টাওয়ার থেকে সম্মানী, বোনাস, লভ্যাংশ, মোবাইল বিল, টিএ, ডিএ বাবদ প্রায় ১৩ কোটি টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করার অভিযোগে আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের আইআইইউসি টাওয়ার ম্যানেজমেন্ট কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী ও তার স্ত্রী রিজিয়া রেজা চৌধুরীসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক। সাবেক সংসদ সদস্য নদভী আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের বোর্ড অব ট্রাস্টিজ’র সাবেক চেয়ারম্যানও। গতকাল দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম–১ এ মামলাটি দায়ের করেন একই কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক কমল চক্রবর্তী।
মামলার অন্যান্য আসামিরা হলেন– আইআইইউসির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ারুল আজিম আরিফ, আইআইইউসি টাওয়ার সমন্বয়ক ও বোর্ড অব ট্রাস্টিজ সদস্য অধ্যাপক কাজী দ্বীন মোহাম্মদ, বোর্ড অব ট্রাস্টিজ সদস্য যথাক্রমে অধ্যাপক সালেহ জহুর, ইঞ্জিনিয়ার রশিদ আহমেদ চৌধুরী, অধ্যাপক ফসিউল আলম, অধ্যাপক আব্দুর রহিম, ড. শামসুজ্জামান, বদিউল আলম, সাবেক দুই রেজিস্ট্রার অধ্যাপক হুমায়ুন কবির ও শফিউর রহমান, টাওয়ার ম্যানেজমেন্ট সদস্য অধ্যাপক ড. মাহি উদ্দিন, আফজল আহমেদ ও মোজাফফর হোসাইন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম ট্রাস্ট ২০০৫ সালের ৩০ জুন মেসার্স বাংলা ইউনিয়ন ফ্লোর মিলস লিমিটেড কোম্পানি থেকে আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকায় ১৯.০৪৫ কাঠা সম্পত্তি ক্রয় করেন। এরপর ২০০৬ সালের ১৭ অক্টোবর উক্ত ট্রাস্ট ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের সাথে একটি চুক্তি করেন এবং ২০০৭ সালের ৩১ জানুয়ারি বাংলাদেশ বিনিয়োগ বোর্ড থেকে নির্মাণ ও হাউজিং শিল্প প্রকল্পের জন্য নিবন্ধন সম্পন্ন করেন। এরই প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম ট্রাস্ট কর্তৃক আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকায় ১৫তলা বিশিষ্ট আইআইইউসি টাওয়ার নামের বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়। পরবর্তীতে ২০১১ সালের ১ অক্টোবর উক্ত টাওয়ারে কার্যক্রম শুরু হয়। এজাহারে বলা হয়, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম ট্রাস্ট এর প্রকৃতি হলো– ইসলামের আলোকে জ্ঞান–বিজ্ঞানের সমপ্রসারণ, আধুনিক শিক্ষার প্রচার ও প্রসার, গবেষণামূলক কার্যক্রম গ্রহণ, সমাজকল্যাণ ও সমাজসেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য গঠিত একটি অরাজনৈতিক, অলাভজনক ও বেসরকারি দাতব্য প্রতিষ্ঠান। ট্রাস্টের আয় শুধুমাত্র দরিদ্র মুসলিম মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান, দরিদ্র মুসলিম শিক্ষার্থীদের ঋণ প্রদান, ভারত, মিয়ানমার, নেপাল, ভুটান, চীন, থাইল্যান্ড এবং কম্বোডিয়ার মতো দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার মুসলিম সংখ্যালঘু দেশগুলোর শিক্ষার্থীদের পূর্ণ বা আংশিক বৃত্তি প্রদান, দরিদ্র শিক্ষার্থীদের খাদ্য, বাসস্থান এবং বই কেনার জন্য সহায়তা প্রদান, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্সের ইসলামীকরণের জন্য গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচি গ্রহণসহ দাতব্য খাতে ব্যবহার করা যাবে। এজাহারে আরো বলা হয়, ট্রাস্টের সদস্যরা সকলে ট্রাস্টের জন্য স্বেচ্ছায় শ্রম প্রদান করে থাকেন। কোন সদস্যকে ঐ শ্রমের জন্য কোন ধরণের সম্মানী, বোনাস, লভ্যাংশ, মোবাইল বিল, টিএ, ডিএ ইত্যাদি প্রদান করার জন্য ট্রাস্টের আইনে কোন বিধিমালা নেই। কিন্তু আসামিরা দি ট্রাস্টস এ্যাক্ট, ১৮৮২ এর ধারা ৫০ ও ৫১ ভঙ্গ করে সম্মানী, বোনাস, লভ্যাংশ, মোবাইল বিল, টিএ, ডিএ বাবদ ১২ কোটি ৭১ লাখ ৪১ হাজার ৫৫৬ টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন। যা দণ্ডবিধির ৪০৯ ও ১০৯ ধারা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা অনুযায়অ শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
এজাহারে বলা হয়, আইআইইউসি টাওয়ার থেকে নদভী মোট ৫ কোটি ৯ লাখ ৪১ হাজার ৬৭৫ টাকা, আনোয়ারুল আজিম ৯ লাখ ৮৯ হাজার ৯০১ টাকা, কাজী দ্বীন মোহাম্মদ ৩ কোটি ৪ লাখ ৭২ হাজার ৩৫০ টাকা, সালেহ জহুর ৩৩ লাখ ১০ হাজার ১ টাকা, ইঞ্জিনিয়ার রশিদ ৮৫ লাখ ৮৪ হাজার ৮৪৬ টাকা, রিজিয়া সুলতানা ১ কোটি ৫৫ লাখ ৩৯ হাজার ৪৮২ টাকা, খালেদ মাহমুদ ২৬ লাখ ৬৬ হাজার ৬৬৮ টাকা, ড. ফসিউল ১১ লাখ ৩৩ হাজার ৩৩২ টাকা, আব্দুর রহিম ১২ লাখ টাকা, শামসুজ্জামান ৬ লাখ ৬৬ হাজার ৬৬৭ টাকা, বদিউল ১৩ লাখ ৮৬ হাজার ৬৬৬ টাকা, হুমায়ুন কবির৩৭ লাখ ৫০ হাজার ৩৪৩ টাকা, সফিউর রহমান ৭ লাখ ৪৫ হাজার টাকা, মাহি উদ্দিন২৩ লাখ ১৬ হাজার ৫০০ টাকা, আফজল আহমদ ৪০ লাখ ১৭ হাজার ৪০৭ টাকা ও মোজাফ্ফর নদভী ২ লাখ ২০ হাজার ৭১৮ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম–১ এর উপপরিচালক সুবেল আহমেদ দৈনিক আজাদীকে মামলা দায়েরের তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন। উল্লেখ্য, প্রফেসর ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী আওয়ামী সরকার পতন পরবর্তী গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।












