চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে নতুন স্থাপন করা ৮টি আইসিইউ শয্যার উদ্বোধন করা হয় গত ৮ এপ্রিল। শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফলকে দিয়ে অনেকটা ঘটা করে এসব আইসিইউ শয্যার উদ্বোধন করানো হয়। কিন্তু উদ্বোধন হলেও এসব আইসিইউ শয্যার সেবা পাচ্ছেন না রোগীরা। উদ্বোধনের প্রায় এক সপ্তাহ পার হতে চললেও এসব আইসিইউ এখনো চালু করতে পারেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। চিকিৎসকের পাশাপাশি আইসিইউ পরিচালনায় প্রশিক্ষিত যে জনবল (বিশেষ করে প্রশিক্ষিত নার্স) প্রয়োজন, তা না পাওয়ায় এসব আইসিইউ শয্যা চালু করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন জেনারেল হাসপাতালের করোনা টিমের ফোকাল পারসন ও মেডিসিনের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আব্দুর রব মাসুম। যদিও কর্তৃপক্ষের কাছে চিকিৎসক-নার্সসহ প্রযোজনীয় জনবলের চাহিদা দেয়া হয়েছে জানিয়ে ডা. আব্দুর রব মাসুম বলেন, এরইমধ্যে চারজন চিকিৎসকের অর্ডার হয়েছে। ১৫ জন নার্স চেয়েছিলাম। ১০ জন হয়তো পাব। অর্ডার হয়ে গেছে শুনেছি। যদিও অর্ডার হাতে পাইনি। নতুন ডাক্তার-নার্সরা জয়েন করলেই নতুন আইসিইউগুলোতে আমরা রোগী ভর্তি দিতে পারব। আজ-কালের মধ্যেই সেটা সম্ভব হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন ডা. আব্দুর রব মাসুম। প্রসঙ্গত, বিশেষায়িত করোনা হাসপাতাল হিসেবে করোনা রোগীদের চিকিৎসা সেবা চালুর পর গতবছর প্রথম দফায় ১০টি আইসিইউ শয্যা স্থাপন করা হয় জেনারেল হাসপাতালে। গতবছরের ২৩ এপ্রিল এসব আইসিইউ শয্যায় সেবা চালু হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ পাওয়া ওই ১০টির পাশাপাশি ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে ঠিকাদার কর্তৃক রেখে যাওয়া ভেন্টিলেটর ও অন্যান্য সরঞ্জাসহ আরো ৮টি আইসিইউ স্থাপনের উদ্যোগ নেয় জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কেনাকাটায় দুর্নীতির অভিযোগ উঠায় ভেন্টিলেটরসহ এসব আইসিইউ দীর্ঘ সময় ধরে হাসপাতালে পড়ে ছিল। এ নিয়ে মামলাও রয়েছে। তবে দীর্ঘ সময় ধরে পড়ে থাকা এসব ভেন্টিলেটর-আইসিইউ স্থাপনপূর্বক চালুর বিষয়ে নির্দেশনা চেয়ে গতবছরের ১২ এপ্রিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর চিঠি দেয় জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। জেনারেল হাসপাতালের তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক ডা. অসীম কুমার নাথ স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চাওয়া হয়। পরে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার প্রেক্ষিতে এই ৮টি আইসিইউ স্থাপনের কাজও শুরু করা হয়। গতবছরের মে মাসে এ কাজ শুরু হলেও দীর্ঘ সময়ে তা শেষ করা যায়নি। সম্প্রতি করোনা সংক্রমণ নতুন করে বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে হাসপাতালে রোগীদের ভিড় বাড়তে থাকলে সর্বশেষ গত ৮ এপ্রিল নতুন এই ৮টি আইসিইউ শয্যা ঘটা করে উদ্বোধন করা হয়। কিন্তু উদ্বোধনের পরও প্রয়োজনীয় জনবল সংকটে এসব আইসিইউ শয্যার সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা। যদিও বিদ্যমান দশটি আইসিইউ শয্যার সবকয়টিতেই এখন রোগী ভর্তি বলে জানিয়েছেন হাসপাতালটির করোনা টিমের ফোকাল পারসন ডা. আব্দুর রব মাসুম। সাধারণ শয্যায় থাকা আরো বেশ কয়জন রোগীকে আইসিইউ শয্যায় স্থানান্তরের প্রয়োজন, কিন্তু বিদ্যমান আইসিইউ শয্যা খালি না থাকায় তা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান এ চিকিৎসক।
এদিকে একটি আইসিইউ শয্যার জন্য ফের যেন হাহাকার শুরু হয়েছে চট্টগ্রাম জুড়ে। সরকারি-বেসরকারি কোনো হাসপাতালেই আইসিইউর একটি শয্যাও যেন খালি নেই। সবকয়টি শয্যাই রোগী ভর্তি। এ যেন গতবছরের সেই পুরনো চিত্র। এমন পরিস্থিতিতে জেনারেল হাসপাতালের উদ্বোধন করা ৮টি আইসিইউ শয্যা দ্রুত চালুর দাবি সংশ্লিষ্টদের।