নতুন সিইসি হাবিবুল আউয়াল

তাঁর বাড়ি সন্দ্বীপ, শপথ আজ

আজাদী ডেস্ক | রবিবার , ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৫:৪৪ পূর্বাহ্ণ

সাবেক সচিব কাজী হাবিবুল আউয়াল পরবর্তী প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। তার সঙ্গে নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করবেন চারজন। তারা হলেন অবসরপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আলমগীর ও আনিছুর রহমান, অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ রাশেদা সুলতানা এমিলি এবং অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহসান হাবীব খান। হাবিবুল আউয়ালের পৈত্রিক ভিটা চট্টগ্রামের দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপে হলেও বাবার চাকরি সূত্রে তার জন্ম কুমিল্লায়। খবর বিডিনিউজের।
সন্দ্বীপ প্রতিনিধি জানান, কাজী হাবিবুল আউয়াল সন্দ্বীপের সারিকাইত ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী কাজী পরিবারের সন্তান। তাকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেওয়ায় সন্দ্বীপবাসী খুশি।
এদিকে বাংলানিউজ সূত্রে জানা গেছে, নতুন নতুন নির্বাচন কমিশনের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান আজ। আজ বিকাল সাড়ে ৪টায় সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের শপথবাক্য পাঠ করাবেন প্রধান বিচারপতি। গতকাল নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত কমিশনের সদস্য মো. আলমগীর বিষয়টি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, কাল (আজ) বিকেল সাড়ে ৪টায় আমাদের শপথ। এরপর সোমবার আমরা অফিস করব। সার্চ কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে গতকাল শনিবার রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এই পাঁচজনকে নিয়োগ দিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন। দেশের ত্রয়োদশ সিইসি হিসেবে নিয়োগ পাওয়া হাবিবুল আউয়াল নেতৃতত্বাধীন এই কমিশনের পরিচালনায় দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে নিয়োগের প্রজ্ঞাপন গতকাল হলেও কবে নাগাদ তারা শপথ নেবেন তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে গতবার নিয়োগের পরদিনই প্রধান বিচারপতির কাছ থেকে শপথ নিয়ে দায়িত্ব পালন শুরু করেছিল কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। নূরুল হুদা কমিশন গত ১৪ ফেব্রুয়ারি বিদায় নেওয়ার পর থেকে সাংবিধানিক সংস্থাটিতে পদগুলো শূন্য রয়েছে।
হাবিবুল আউয়াল সম্পর্কে : মুন্সেফ হিসেবে সরকারি চাকরিতে যোগ দেওয়ার পর নানা পদ পেরিয়ে সচিব হিসেবে অবসর নেওয়ার পর এবার প্রধান নির্বাচন কমিশনারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পেলেন কাজী হাবিবুল আউয়াল। ৬৬ বছর বয়সী হাবিবুল আউয়াল পাঁচ বছর আগে সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেন। এরপর ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে আইন বিভাগে শিক্ষকতা করছিলেন তিনি।
হাবিবুল আউয়ালের বাবা কাজী আবদুল আউয়াল কারা বিভাগের কর্মকর্তা ছিলেন। ১৯৭৫ সালের নভেম্বর মাসে জেলখানায় জাতীয় চার নেতা হত্যা মামলার বাদী ছিলেন তৎকালীন কারা উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজন্স) আবদুল আউয়াল।
হাবিবুল আউয়াল ১৯৭২ সালে খুলনার সেন্ট জোসেফ’স হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক, ১৯৭৪ সালে ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন তিনি। বিসিএস ১৯৮১ ব্যাচের এই কর্মকর্তা সরকারি চাকরি শুরু করেন মুন্সেফ (সহকারী জজ) হিসেবে। ১৯৯৭ সালে জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে পদোন্নতি পান।
২০০০ সালের ডিসেম্বরে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব হন হাবিবুল আউয়াল। ২০০৪ সালে হন অতিরিক্ত সচিব। ২০০৭ সালে পদোন্নতি পেয়ে একই মন্ত্রণালয়ের সচিব হন তিনি। সচিব হওয়ার পর ২০০৯ সালে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত আইন মন্ত্রণালয়েই ছিলেন।
বিচার বিভাগের এই কর্মকর্তার আইন সচিব হিসেবে নিয়োগ অবৈধ ঘোষণা করে ২০১০ সালে রায় দেয় আদালত। আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে হাবিবুল আউয়ালের নিয়োগের সময় নীতিমালা মানা না হওয়ায় আদালত তার নিয়োগ অবৈধ ঘোষণা করে। আইন সচিব থাকা অবস্থায় বিধিবহির্ভূতভাবে দুই বিচারককে অবসরে পাঠানো নিয়েও জটিলতায় জড়িয়েছিলেন হাবিবুল আউয়াল। সংসদীয় কমিটি এজন্য তাকে তলব করলে তিনি ওই ঘটনার দায় মাথায় নিয়ে ক্ষমাও চান। ওইসব ঘটনার পর ২০১০ সালে এপ্রিলে ধর্ম সচিব করা হয় হাবিবুল আউয়ালকে। পরে জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সচিব করা হয়।
২০১৪ সালে সেখান থেকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব করে পাঠানো হয় তাকে। ওই বছরই পদোন্নতি পেয়ে জ্যেষ্ঠ সচিব হন তিনি। ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে অবসরে যাওয়ার কথা ছিল হাবিবুল আউয়ালের। কিন্তু পিআরএল বাতিল করে তাকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব হিসেবে এক বছরের চুক্তিতে নিয়োগ দেয় সরকার।
২০১৬ সালে আরও এক বছর বাড়ানো হয় চুক্তির মেয়াদ। এরপর ওই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থেকেই জ্যেষ্ঠ সচিব হিসেবে ২০১৭ সালে অবসরে যান তিনি। তিন মেয়ের জনক হাবিবুল আউয়ালের স্ত্রীর নাম সাহানা আক্তার খানম। তার আত্মজীবনীমূলক একাধিক গ্রন্থও প্রকাশিত হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরোয়াংছড়িতে জনসংহতির কর্মীকে গুলি করে হত্যা
পরবর্তী নিবন্ধগণটিকায় গণজোয়ার