নতুন সম্ভাবনায় খুলে যাবে চট্টগ্রামের দখিনা দুয়ার

বঙ্গবন্ধু টানেল ও কক্সবাজার রেললাইন

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ৪ ডিসেম্বর, ২০২২ at ১০:০৩ পূর্বাহ্ণ

স্বপ্নের পদ্মা সেতুর পর বাংলাদেশের আরেকটি গৌরব এবং অনন্য স্থাপনা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল আগামী জানুয়ারি মাসেই যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হচ্ছে। গত ২৬ নভেম্বর এই টানেলের দক্ষিণ টিউবের দ্বার খুলে দেওয়া হয়েছে। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম টানেল ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’ ঘিরে চট্টগ্রামবাসীর মধ্যে ব্যাপক উচ্ছ্বাস সৃষ্টি হয়েছে। এ টানেল নিয়ে চট্টগ্রাম নগর ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের সর্বস্তরের মানুষ মুখিয়ে আছে। প্রধানমন্ত্রী নিজেও বলেছেন, তাঁর মন পড়ে আছে চট্টগ্রামে। পুরো টানেল চালু করার জন্য তিনিও অপেক্ষার প্রহর গুণছেন। টানেলের ভেতর দিয়ে এপার-ওপার ঘুরে আসার প্রবল ইচ্ছার কথাও জানান তিনি। গত ২৬ নভেম্বর টানেলের দক্ষিণ টিউবের পূর্ত কাজের সমাপ্তি উদযাপন করা হয়। গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদযাপন অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন।

পাশাপাশি স্বপ্নপূরণের পথে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে দোহাজারী-কক্সবাজার রেল লাইন প্রকল্পের কাজ। গত অক্টোবর-নভেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ এগিয়েছে ৭৮ শতাংশ কাজ। বাকি ২২ শতাংশ কাজ শেষ হলেই আগামী বছরের জুন-জুলাইয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম হয়ে ট্রেনে কঙবাজারে যাওয়ার স্বপ্নপূরণ হবে। ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে ৬০ কিলোমিটার রেল লাইন বসানোর কাজ।

বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ সমুদ্রসৈকতের শহর কক্সবাজারে নিরাপদ বাহন ট্রেনে চড়ে যেতে চাওয়া ছিল স্বপ্নের মতো ব্যাপার। শুধু বৃহত্তর চট্টগ্রামবাসীই নয়, সারাদেশের মানুষেরও আকাঙ্ক্ষা ছিল বিলাসবহুল ট্রেনে চেপে পর্যটন শহরটিতে যাওয়ার। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর অগ্রাধিকার প্রকল্পগুলোর মধ্যে দোহাজারী-কক্সবাজার রেল লাইন প্রকল্পকে অগ্রাধিকার প্রকল্পভুক্ত করে সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন।

এই ব্যাপারে প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মফিজুর রহমান আজাদীকে জানান, দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করতে আমরা কাজ করছি। যদিও আমার প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সাল পর্যন্ত কিন্তু আগামী বছরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে হবে। ২০২৩ সালের মধ্যে আমাদের ট্রেন চালাতে হবে। তাই ২০২৩ সালের মধ্যে সব কাজ শেষ করতে পারবো বলে আশা করছি। এরপর এই রেলপথে ট্রেনের ট্রায়াল শুরু হবে। গত অক্টোবর-নভেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের মোট অগ্রগতি ৭৮ শতাংশ। বাকি ২২ শতাংশ কাজ শেষ হলেই আগামী বছরের জুনে ঢাকা-চট্টগ্রাম হয়ে ট্রেনে কঙবাজারে যাওয়ার স্বপ্নপূরণ হবে।

বঙ্গবন্ধু টানেল; খুলছে আরেক স্বপ্নের দুয়ার : বঙ্গবন্ধু টানেল দিয়ে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে দিয়ে চলবে গাড়ি। ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা গাড়ি চট্টগ্রামের পতেঙ্গা ও আনোয়ারাকে সংযুক্তকারী এই টানেলের মাধ্যমে প্রায় দুই ঘণ্টা কম সময়ে কক্সবাজারে পৌঁছে যাবে। যার ফলে আরও পর্যটকবান্ধব হবে বিশ্বের সবচেয়ে সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার। শিল্প উন্নয়নে এই টানেল রাখবে অনেক অবদান। চট্টগ্রামের মানুষের স্বপ্নের দুয়ার আগামী জানুয়ারিতে খোলা নিয়ে অন্যরকম উচ্ছ্বাস দেখা যাচ্ছে।

চট্টগ্রামবাসী অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে চালু হওয়ার মাহেন্দ্রক্ষণের। সম্প্রতি টানেল এরিয়ায় গিয়ে দেখা যায়, পতেঙ্গা প্রান্ত থেকে শুরু হওয়া টানেল শেষ হয়েছে আনোয়ারায়। কর্ণফুলী নদীর ১৫০ ফুট তলদেশে তৈরি এই বঙ্গবন্ধু টানেল সত্যিই এক বিস্ময়। টানেলের দুটি টিউবের মধ্যে একটির কাজ শেষ হয়েছে।

আরেকটির কাজও প্রায় শেষ। সার্বিক অগ্রগতি প্রায় ৯৪ শতাংশ। এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত যেতে সময় লাগছে মাত্র ৪ মিনিট। এতে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার যেতে সময় ও পথের সাশ্রয় হবে অনেক।

টানেল সংশ্লিষ্টরা জানান, বঙ্গবন্ধু টানেলের কাজ যত এগিয়েছে ততই স্থাপিত হচ্ছে নতুন নতুন শিল্প কারখানা, আসছে নতুন বিনিয়োগ। আবার পুরোনো অনেক কারখানাও সম্প্রসারণ হচ্ছে। অনেক বড় বড় শিল্প গ্রুপ ইতিমধ্যেই কারখানা গড়ে তোলার চিন্তা থেকে কিনে রেখেছে জমি। সব মিলিয়ে কর্ণফুলী টানেল বন্দরনগরী চট্টগ্রামের ল্যান্ডস্কেপে আনছে বড় ধরনের পরিবর্তন।

নতুন বিজনেস হাব : কর্ণফুলীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু টানেলকে ঘিরে দক্ষিণ চট্টগ্রাম তথা কক্সবাজার, মহেশখালী-মাদারবাড়ি হয়ে উঠছে দেশের নতুন বিজনেস হাব। গত চার বছরে কর্ণফুলীর দক্ষিণ পাড়ে গার্মেন্টস, জাহাজ নির্মাণ, ভোজ্য তেল, মাছ প্রক্রিয়াকরণ, ইস্পাত, সিমেন্টসহ অন্তত ৮০টি শিল্প কারখানা গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান উৎপাদনও শুরু করেছে।

টানেল নির্মাণ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০২৩ সালের জানুয়ারির শেষ দিকে বহুল প্রতীক্ষিত টানেলটি যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। টানেলটি নির্মাণে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। গত ২৬ নভেম্বর টানেলের প্রথম টিউবের নির্মাণ কাজের সমাপ্তি উপলক্ষে পতেঙ্গা এবং আনোয়ারা প্রান্তে ছিল সাজ সাজ রব।
টানেলের আনোয়ারা প্রান্তের সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম কাইয়ুম শাহ আজাদীকে জানান, ‘ওয়ান সিটি টু টাউনের’ ধারণা থেকে টানেল নির্মাণ করা হয়েছে। এতে আমাদের আনোয়ারা সবচেয়ে বেশি সুফলভোগী বা লাভবান হবে। এ কারণে আমাদের আনোয়ারাবাসীর আনন্দ-উচ্ছ্বাসের শেষ নেই। টানেল ঘিরে ইতোমধ্যে আনোয়ারায় পর্যটন শিল্পের বিকাশ শুরু হয়েছে। বিশেষ করে পারকি পর্যটন এলাকা থেকে শুরু করে টানেলের আশপাশে পর্যটনের পাশাপাশি শিল্পায়নও হচ্ছে। টানেল প্রকল্প বাস্তবায়নে তিনি প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। পতেঙ্গা প্রান্ত থেকে শুরু হয়ে টানেলটি কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে আনোয়ারায় যুক্ত হয়েছে। এটি ব্যবহার করে সব ধরনের যানবাহন আনোয়ারা হয়ে দক্ষিণ চট্টগ্রাম দিয়ে কক্সবাজার-মাদারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে।

টানেল নিয়ে আরও তথ্য : কর্ণফুলীর দুই তীর সংযুক্ত করার লক্ষ্যে টানেল প্রকল্প গ্রহণ করে সরকার। দুই টিউব সংবলিত মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার। টানেল টিউবের দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার এবং ভেতরের ব্যাস ১০ দশমিক ৮০ মিটার। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম টানেল টিউবের বোরিং কাজ উদ্বোধন করেন। ২০২০ সালের ১২ ডিসেম্বর সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দ্বিতীয় টিউবের কাজ উদ্বোধন করেন। এ প্রকল্পে অর্থায়ন করেছে চীনের এঙ্মি ব্যাংক। ২ শতাংশ হার সুদে ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা দিয়েছে এ ব্যাংক। বাকি ৪ হাজার ৪৬১ কোটি টাকা জোগান দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।

টানেলের প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশীদ জানান, টানেলের প্রথম টিউবের পূর্ত কাজ শেষ হয়েছে। দ্বিতীয় টিউবের পূর্ত কাজও কয়েক দিনের মধ্যে শেষ হবে। এখন চলছে ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল কাজ। টানেলের অভ্যন্তরে নিরাপত্তার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। টানেলে বাতাস চলাচল, অগ্নিনির্বাপণ ও আলো নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা সুনিপুণভাবে করা হচ্ছে। এক টিউব থেকে অপর টিউবে যাওয়া যাবে। ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসে পানি যাতে ঢুকতে না পারে সেজন্য ফ্লাডগেট নির্মাণ করা হয়েছে। পানি ঢুকে পড়লে তা অটো নিষ্কাশনের ব্যবস্থাও রাখা হচ্ছে। অভ্যন্তরে থাকবে সিসিটিভি। থাকবে সেন্সর ব্যবস্থা। টানেল ব্যবহারকারী যানবাহনের টোল নির্ধারণে কমিটি কাজ করছে।

২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং যৌথভাবে কর্ণফুলী টানেলের ভিত্তি স্থাপন করেন। মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩.৩২ কিমি এবং এতে দুটি টিউব রয়েছে। প্রতিটিতে দুটি লেন রয়েছে। এই দুটি টিউব তিনটি জংশনের (ক্রস প্যাসেজ) মাধ্যমে সংযুক্ত করা হয়েছে। এই ক্রস প্যাসেজগুলি জরুরি পরিস্থিতিতে অন্যান্য টিউবগুলিতে যাওয়ার জন্য ব্যবহার করা হবে। টানেল টিউবের দৈর্ঘ্য ২.৪৫ কিমি এবং ভিতরের ব্যাস ১০.৮০ মিটার। মূল টানেলের পশ্চিম এবং পূর্ব দিকে একটি ৫.৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক রয়েছে।

টানেল নির্মাণের আগে ২০১৩ সালে করা সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়, টানেল চালুর পর এর ভেতর দিয়ে বছরে ৬৩ লাখ গাড়ি চলাচল করতে পারবে। সে হিসাবে দিনে চলতে পারবে ১৭ হাজার ২৬০টি গাড়ি। ২০২৫ সাল নাগাদ টানেল দিয়ে গড়ে প্রতিদিন ২৮ হাজার ৩০৫টি যানবাহন চলাচল করবে। যার মধ্যে অর্ধেক থাকবে পণ্যবাহী যানবাহন। ২০৩০ সাল নাগাদ প্রতিদিন গড়ে ৩৭ হাজার ৯৪৬টি এবং ২০৬৭ সাল নাগাদ এক লাখ ৬২ হাজার যানবাহন চলাচলের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা আছে।

স্বপ্ন পূরণের পথে দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন : চট্টগ্রামের দোহাজারী-কক্সবাজার ১০০ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলছে। একদফা সময় বাড়িয়ে ২০২৪ সালের ৩০ জুনের মধ্যে এ প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার কথা। গত অক্টোবর-নভেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি হয়েছে ৭৮ শতাংশ। আগামী বছরের ৩০ জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক মফিজুর রহমান। তিনি বলেন, আগামী বছরের আগস্টের মধ্যে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল চলাচল শুরু হবে বলে আশা করছি। চট্টগ্রাম থেকে কঙবাজারের দূরত্ব ১৫০ কিলোমিটার আর দোহাজারী থেকে কঙবাজারের দূরত্ব ১০০ কিলোমিটার। বর্তমানে দোহাজারী থেকে রামু হয়ে বন-পাহাড় নদী দিয়ে এই রেলপথটি নির্মিত হচ্ছে।

দোহাজারী-কক্সবাজার রেল লাইন নির্মাণ প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ইতোমধ্যে মোট ৬০ কিলোমিটার রেল লাইন স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। কক্সবাজার অংশের ৫০ কিলোমিটারের মধ্যে ৪৫ কিলোমিটার এবং চট্টগ্রাম অংশে ২০ থেকে ২২ কিলোমিটার রেল লাইন স্থাপন করা হয়েছে। কক্সবাজার সদর, ঈদগাঁও, চকরিয়া, হারবাং এবং রামু এলাকায় ৪০ কিলোমিটার রেল লাইন স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। বাকি ৬০ কিলোমিটারের মধ্যে রেললাইন স্থাপনের পাশাপাশি চলছে সিগন্যালিং তার টানার কাজ, মাটি ভরাটের কাজ শেষ হয়েছে ৮৫ শতাংশ। দেশের অন্যান্য জায়গার রেলপথ থেকে এই রেলপথের বৈশিষ্ট্য আলদা। দোহাজারী থেকে রামু হয়ে বন-পাহাড় নদী দিয়ে এই রেলপথটি নির্মিত হচ্ছে। প্রথম পর্যায়ে দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত নির্মাণ করা হচ্ছে ১০০ কিলোমিটার রেলপথ। দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ৩৯টি বড় সেতু, ২২৩টি ছোট সেতু ও কালভার্ট, বিভিন্ন শ্রেণির ৯৬টি লেভেল ক্রসিং নির্মাণ করা হচ্ছে। হাতি চলাচলের জন্য থাকবে আন্ডারপাস। নয়টি স্টেশন নির্মাণ করা হবে দোহাজারী, সাতকানিয়া, লোহাগড়া, হারবাং, চকরিয়া, ডুলাহাজারা, ইসলামাবাদ, রামু ও কক্সবাজার। মেজর ও মাইনর ব্রিজ এবং কালভার্টগুলোর কাজ শেষ হয়েছে ৮০ শতাংশ। চকরিয়া থেকে কক্সবাজার অংশে ২০টি সেতুর মধ্যে ১৮টির কাজ শেষ হয়েছে। এগুলোতে বসানো শেষ হয়েছে রেল লাইন। দোহাজারী-চকরিয়া অংশে ১৯টি সেতুর মধ্যে সাঙ্গু নদীর ওপর একটি, মাতামুহুরী নদীর ওপর দুটি এবং বাঁকখালী নদীর ওপর একটি বড় রেলসেতুর নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। বাকিগুলোর কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। কক্সবাজারের আইকনিক স্টেশনটি সুদৃশ্যমান হয়ে দাঁড়িয়ে গেছে। বাকি ৮টি স্টেশনের মধ্যে বেশ কয়েকটি শেষের দিকে। এর মধ্যে ডুলাহাজারা রেল স্টেশনের কাজ শেষের দিকে। দোহাজারী, লোহাগাড়া, হারবাং, চকরিয়া, ঈদগাঁও রেল স্টেশন নির্মাণের কাজ চলছে। শুরু হয়েছে সাতকানিয়া এবং রামুতে রেল স্টেশন নির্মাণের কাজও।

এদিকে চট্টগ্রাম কক্সবাজার রেল লাইন নির্মাণের কাজের অগ্রগতির সাথে সাথে এই রুটে ট্রেন চলাচলের জন্যও রেল কর্তৃপক্ষ প্রস্তুতি শুরু করেছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে নতুন ট্রেনের পাশাপাশি বিভিন্ন রুটে চলাচলের জন্য দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ১৫০টি নতুন মিটারগেজ কোচ আমদানি করা হচ্ছে। এজন্য বহুল প্রতীক্ষিত চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে পর্যটক বান্ধব নতুন ট্রেনের প্রস্তুতি শুরু করেছে। এরই অংশ হিসেবে কক্সবাজার রুটে সরাসরি ঢাকা থেকে এবং চট্টগ্রাম থেকে পর্যটকবাহী নতুন ট্রেনের জন্য আধুনিক উচ্চগতির কোচ আমদানির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। চলতি বছরের ডিসেম্বরে প্রথম চালান দেশে আসবে। এরপর জানুয়ারি থেকে আগামী অর্থ বছরে এই কোচগুলো দেশে আসবে বলে জানান বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রধান পরিকল্পনা কর্মকর্তা এস এম সলিমুল্লাহ বাহার। তিনি বলেন, আমাদের নতুন আরো ১৫০টি মিটারগেজ কোচ আসছে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে। নতুন কোচ দিয়ে কক্সবাজার রুটে নতুন ট্রেন চালানো হবে। রেলওয়ের প্রকল্প সংক্রান্ত নথি অনুসারে, চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণে প্রথমে ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে প্রকল্প প্রস্তাব সংশোধন করলে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা। এতে ঋণ সহায়তা দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক-এডিবি। ২০১৮ সালের জুলাইয়ে প্রকল্পটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন (সিআরইসি) ও বাংলাদেশের তমা কনস্ট্রাকশন কোম্পানি এবং চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন করপোরেশন (সিসিইসিসি) ও বাংলাদেশের ম্যাঙ ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড দুই ভাগে কাজ করছে পুরো প্রকল্পের।

আইকনিক স্টেশনে চলছে ফিনিশিংয়ের কাজ : চট্টগ্রাম-দোহাজারি-কক্সবাজার রেল লাইন প্রকল্পের কক্সবাজার অংশে দৃষ্টিনন্দন ‘আইকনিক রেলস্টেশন’ বিল্ডিংয়ের মূল স্ট্রেকচারের কাজ শেষ হয়েছে। এখন চলছে ফিনিশিং এর কাজ। ছাদের উপর বসানো হচ্ছে মূল স্টিল ক্যানোফি, পুরোদমে কাজ করছেন শ্রমিকরা। একই সঙ্গে চলছে সৌন্দর্য বর্ধন, গ্লাস ফিটিং, ফায়ার ফাইটিং, স্যানিটারি আর বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি স্থাপনের কাজও। দেশের বৃহৎ ও দৃষ্টিনন্দন আইকনিক রেলস্টেশনটি দেখতে অনেকটা ঝিনুকের আদলে, বলা হচ্ছে এটি এশিয়ার বৃহৎ রেলস্টেশন হতে যাচ্ছে। স্টেশন ভবনের কাজে নিয়োজিত প্রকৌশলীরা জানান, কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে ঝিনুকের আদলে দৃষ্টিনন্দন আইকনিক রেলস্টেশন। অত্যাধুনিক অনেক সুযোগ-সুবিধা থাকবে এই রেলস্টেশনে। সামনের অংশে তৈরি হবে বিশাল আকৃতির ঝিনুকের ফোয়ারা। ঝিকঝিক শব্দ করে ট্রেন আসার পর যার পাশ দিয়ে প্রবেশ করতে হবে স্টেশনে। তারপর চলন্ত সিড়ির মাধ্যমে সেতু হয়ে চড়তে হবে ট্রেনে। গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য থাকবে বড় ৩টি জায়গা। স্টেশন ভবনে থাকবে কাউন্টার, স্বাগত জানানোর কক্ষ, তারকা মানের হোটেল, রেস্তোরাঁ, মালামাল রাখার লকার, শিশুযত্ন কেন্দ্র, মসজিদসহ অত্যাধুনিক সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা। যদি কেউ চাইলে রাতের ট্রেন ধরে সকালে কক্সবাজার পৌছে মালামাল স্টেশনে রেখে সারাদিন সমুদ্রসৈকত বা পর্যটন স্পট ঘুরে রাতে ফিরে যেতে পারবেন। আর বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের জন্য রাখা হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। এই আইকনিক স্টেশনে প্রতিদিন ৪৬ হাজার যাত্রী গমন করতে পারবে এবং বর্হিগমন করতে পারবে ৪৬ হাজার যাত্রী।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরাউজান স্কুল প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রী পরিষদের আলোচনা সভা
পরবর্তী নিবন্ধভারত আমাদের আন্ডারডগ মনে করে না : লিটন