শীতের সকাল। কুয়াশায় আচ্ছন্ন চারদিক। তবে বেলা বাড়ার সাথে সাথে সূর্যকে উঁকি দিতে দেখা যায়। এর মাঝেই নগরীর মিউনিসিপ্যাল মডেল হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে খুনসুটিতে মেতে ওঠে খুদে শিক্ষার্থীরা। গায়ে স্কুলের পোশাক। চোখে–মুখে আনন্দের ছাপ। সন্তানের সঙ্গে আসা অভিভাবকরাও মেতে উঠেছেন আড্ডায়। সিটি কর্পোরেশন পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীদের জন্য বই উৎসবের আয়োজন ছিল এ মাঠে। বেলা ১১টার দিকে অনুষ্ঠান মঞ্চে আসেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। চসিকের শিক্ষা স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি ড. নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে কাউন্সিলর জহর লাল হাজারী, আবদুস ছালাম মাসুদ, হাসান মুরাদ বিপ্লব, নাজমুল হক ডিউক, আবদুল মান্নান, রুমকি সেনগুপ্ত, চসিকের সচিব খালেদ মাহমুদ, শিক্ষা কর্মকর্তা উজালা রানী চাকমা ও প্রধান শিক্ষক চম্পা মজুমদার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া বিদ্যালয়ের শিক্ষক–শিক্ষিকার পাশাপাশি অভিভাবকরাও উপস্থিত ছিলেন। আনুষ্ঠানিকতা শেষে শ্রেণীভিত্তিক কয়েকজন শিক্ষার্থীর হাতে বই তুলে দেন প্রধান অতিথি সিটি মেয়রসহ অতিথিরা। শিক্ষার্থীর হাতে নতুন বই। হয়ে গেল বই উৎসবের উদ্বোধন। বিভাগীয় পর্যায়ে প্রাথমিকের বই বিতরণ উৎসবের আয়োজন করা হয় পিটিআই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর চট্টগ্রামের উপ–পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম। উপস্থিত ছিলেন পিটিআই তত্ত্বাবধায়ক মো. জয়নাল আবেদিন, পিটিআই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইশরাত জাহান প্রমুখ।
চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে প্রধান অতিথি হিসেবে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেন চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মুস্তফা কামরুল আখতার। সভাপতিত্ব করেন প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম।
কেবল এই কয়টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই নয়, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন পরিচালিত সব কয়টি স্কুলসহ নগরীর সরকারি–বেসরকারি সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা মেতে ওঠে বই উৎসবে। স্কুলে স্কুলে সৃষ্টি হয় উৎসবমুখর পরিবেশ। কেবল শহরেই নয়, উৎসবের এ রং ছড়ায় গ্রামাঞ্চলেও। বছরের প্রথম দিন লাল ফিতা আর রঙিন কাগজে মোড়ানো নতুন বই হাতে পেয়ে বাঁধভাঙা উল্লাসে মেতে উঠে শিক্ষার্থীরা। এ সময় নতুন বইয়ের মলাট উল্টিয়ে বইয়ের ঘ্রাণ নিতে দেখা যায় অনেককে। শহর থেকে গ্রামের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এমন দৃশ্যই বিরাজ করে। যদিও চাহিদার অর্ধেক বই আসায় প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের হাতে সব বিষয়ের বই তুলে দেয়া যায়নি। কোনো শ্রেণীতে ২টি, কোনো শ্রেণীর ৩টি, আবার কোনো শ্রেণীর ৪/৫টি করে বই পেয়েছে শিক্ষার্থীরা। অবশ্য, সব বই না পেলেও আনন্দের কমতি ছিল না শিক্ষার্থীদের। নতুন যে কয়টি বই পাওয়া গেছে, তা নিয়েই আনন্দ–উল্লাসে মেতে উঠতে দেখা যায়।
শিক্ষার্থীদের আনন্দ : নতুন বছরে নতুন ক্লাস। এর সঙ্গে যদি যোগ হয় নতুন বই, তাহলে তো আর কথাই নেই। বছরের শুরুতে নতুন বই হাতে পেয়ে আনন্দে উদ্বেলিত শিক্ষার্থীরা। এক বছর পরিশ্রম করে উপরের ক্লাসে উঠতে পেরে শিক্ষার্থীদের মনে যে আনন্দ, নতুন বই সেই আনন্দে যোগ করে নতুন মাত্রা।
নগরীর কাজেম আলী স্কুলে এবার ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হয়েছে নিশান। নতুন বই পেয়ে কেমন লাগছে জানতে চাইলে উচ্ছ্বসিত নিশানের জবাব, নতুন ক্লাসে উঠেছি। এখন নতুন বই হাতে পেলাম। নতুন বই পেয়ে খুব ভালো লাগছে।
ক্লাস থ্রি থেকে ফোরে উঠেছে আবরার। নতুন বই হাতে সন্তানের উচ্ছ্বাস দেখে আনন্দ ভর করেছে মা তাহমিনা শারমিনের চোখে–মুখেও। তিনি বলেন, নতুন বই পেয়ে ছেলে অনেক খুশি। ছেলের উচ্ছ্বাস দেখে আমাদেরও শৈশবে ফিরে যেতে ইচ্ছে করছে। সন্তানের আনন্দ দেখে আমাদেরও খুব আনন্দ লাগছে।
ডা. খাস্তগীর স্কুলের বাইরে মেয়ের জন্য অপেক্ষায় ছিলেন মা ইয়াসমিন আক্তার। তিনি বলেন, বছরের শুরুতে ছেলে–মেয়েরা বই পাচ্ছে। এটা ছেলে–মেয়েদের জন্য যেমন আনন্দের, আমাদের অভিভাবকদের জন্যও তেমনটাই স্বস্তির। তখনকার সময়ে তো এমন সুযোগ–সুবিধা আমরা পাইনি। বাজার থেকে বই কিনতে হতো। এটা নিয়ে টেনশনও থাকত। এখন ছেলে–মেয়েদের জন্য সেই টেনশনের কারণ নেই। অভিভাবকরা অনেকটাই চিন্তামুক্ত।
অভিভাবকদের পাশাপাশি শিক্ষা কর্মকর্তা ও বিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরও আনন্দের কমতি নেই। নিজেদের অনুভূতির কথা প্রকাশ করতে গিয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম জানান, নতুন বই হাতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাস আমাদেরকেও নাড়া দিয়ে যায়। এই অনুভূতি সত্যিই অসাধারণ।
একই অনুভূতির কথা জানালেন জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফরিদুল আলম হোসাইনী। তবে শতভাগ বই না পৌঁছায় প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের হাতে সব বই তুলে দেয়া যায়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, অল্প কিছুদিনের মধ্যেই সব বই চলে আসবে। তখন শিক্ষার্থীরা সব বই পেয়ে যাবে।