চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক ফাহমিনা নুর। শিক্ষকতার পাশাপাশি লেখালেখিও করেন তিনি। এবারের বইমেলায় চন্দ্রবিন্দু প্রকাশন থেকে ‘প্রাচীন অনুরাগ’ ও বুনন প্রকাশন থেকে ‘অন্তশীলা’ নামে তার দুটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। লেখকের চেয়ে পাঠক পরিচয়ে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন তিনি। প্রতিবার বইমেলায় আসেন, ঘুরে দেখেন, বই কিনেন। নিজের পাঠকদের সাথে আলাপ করেন, গল্প করেন বইপ্রেমীদের সঙ্গে। ফাহমিনার বেশি পছন্দ কবিতার বই। উপন্যাসও পড়েন। গতকাল রোববার বইমেলায় তিনি বলেন, বইমেলা শুরু হলেই আমি ছুটে আসি। আমার নিজেরও দুইটা কাব্যগ্রন্থ বেরিয়েছে এবার। এছাড়া আমিও অনেক বই কিনি প্রতি বছর। আমি কবিতার বইয়ের ভক্ত। তবে আজকে (রোববার) একটি উপন্যাস কিনেছি, রহমান রনির ‘কসমোপলিটন হোমিও’।
বইমেলায় এসেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন সায়েন্সের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সামিহা ও তায়েব। কাকলী প্রকাশনে তারা হুমায়ূন আহমেদ সমগ্র দেখছেন। বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী হলেও সাহিত্যের প্রতি তাদের আগ্রহ রয়েছে। উপন্যাসের পাশাপাশি কবিতার বই পছন্দ তাদের। তারা বলেন, বইমেলায় আসি প্রতিবার। বইমেলায় অনেক নতুন বই আসে, সেগুলো তখন কিনতে না পারলেও নোট করে রাখি। পরে কেনার চেষ্টা করি। বইমেলায় এলে বই পড়ার একটা স্পৃহা তৈরি হয়। নতুন নতুন বইয়ের নাম, লেখকের নাম জানতে পারি। বইমেলায় বই নিয়েই আলোচনা হয়, যার কারণে সময়টা নষ্ট হয় না। একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন বই পড়ার চেষ্টা করি।
গতকাল বইমেলা ঘুরে দেখা যায়, বইমেলায় এখনো কয়েকটি স্টল প্রস্তুতের কাজ চলছে। লোক সমাগমও তুলনামূলক কম। বইমেলা উপলক্ষে অনেক নতুন বই এখনো বাজারে আসেনি। আবার খোলার দিন থাকায় উপস্থিতি কম বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে এবার লেখক, পাঠ ও প্রকাশকরা খুব আশাবাদী। তাদের প্রত্যাশা, এবারের বইমেলা ভালোভাবেই জমবে। বইমেলা প্রাঙ্গণ ভরে উঠবে লেখক, পাঠক ও দর্শনার্থীসহ বইপ্রেমীদের ভিড়ে।
শৈলী প্রকাশনীর পরিচালক আরিফ রায়হান আজাদীকে বলেন, শৈলী প্রকাশনী থেকে এবার ৩০টির মতো বই প্রকাশ হবে। এর মধ্যে ১০টির মতো বই স্টলে এসেছে। বাকি বইগুলো ধীরে ধীরে আসবে। তিনি বলেন, এবারের জায়গাটা খুবই সুন্দর হয়েছে। পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন জায়গা; বইমেলার জন্য উপযোগী এটি। এখানে সব ধরনের সুযোগ–সুবিধা রয়েছে। আশা করি এবারের বইমেলা ভালোমতোই জমবে। শৈলীর নতুন বইয়ের মধ্যে রয়েছে জি এম জহির উদ্দীনের লেখা ‘বিধ্বস্ত প্রেম বিপন্ন ভালোবাসা’, কুতুবউদ্দিন বখতেয়ারের ‘মিষ্টি ছড়া আমার পড়া’, নুসরাত সুলতানার ‘চট্টগ্রামের পর্যটন ঐতিহ্য ও সম্ভাবনা’ ও কাসেম আলী রানার ‘কালো পুতুল’।
স্থান পরিবর্তনকে কিছুটা নেতিবাচক হিসেবে দেখছেন চন্দ্রবিন্দু প্রকাশনের এক বিক্রয়কর্মী। তিনি বলেন, স্থান পরিবর্তনের বিষয়টা ভালো লাগেনি। এক জায়গায় হলে ভালো। তিনি বলেন, মেলা এখনো জমে উঠেনি। তবে প্রত্যাশা রয়েছে প্রচুর লোক সমাগম হবে এবার। গল্প, উপন্যাস, কবিতা ও কাব্যগ্রন্থসহ নানান ধরনের বই রয়েছে এ স্টলে।
অক্ষরবৃত্ত প্রকাশনে নতুন বইয়ের মধ্যে রয়েছে রিয়াজ মোরশেদ সায়েমের ‘কালো পাহাড়’, রুবেল কান্তি নাথের ‘গেস্ট প্যালেস’ ও আলম সরওয়ারের ‘রহস্যময় ভৌতিক বাড়ি’।
বইমেলায় শিশুদের জন্য রয়েছে শিশুতোষ বই। এ রকম অনেকগুলো একক স্টলও রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে পূর্বা প্রকাশনী ও কিডস বুক। এসব স্টলে শিশুদের গল্প, কবিতা, ছোট গল্প ও ছড়াসহ বিভিন্ন বই রয়েছে। বইমেলায় রয়েছে ইসলামিক বইয়ের সমাহার। আলোকধারা প্রকাশনসহ ইসলামিক বইয়ের অনেকগুলো স্টল রয়েছে মেলায়।
অন্যপ্রকাশ প্রকাশনীর পরিচালক জানান, এবারের বইমেলায় ১০টার মতো নতুন বই আসবে। এর মধ্যে অল্প কয়েকটি স্টলে এসেছে।
ঢাকার প্রকাশনী কাকলী প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী মো. রায়হান আজাদীকে বলেন, কাকলী প্রকাশনীর ২০টার মতো নতুন বই আসবে। এর মধ্যে তেমন বই আসেনি বাজারে। ধীরে ধীরে আসবে। আমরা আশাবাদী।
মোস্তফা কামাল নামে একজন বলেন, এত সুন্দর বইমেলা অনুষ্ঠিত হবে আশা করিনি। আমি মনে করি সবাই বই কিনতে আসবেন না। অনেকে ঘুরে দেখেন, পুরো বছরের জন্য লিস্ট করে নিয়ে যান। এরপর এগুলো কিনেন। একসাথে কেনার টাকা থাকে না অনেক সময়। মানুষ আসবে, দেখবে–এটাই বইমেলার উদ্দেশ্য।
মেডিকেল টিমের রিপন বড়ুয়া বলেন, আমরা সিটি কর্পোরেশন থেকে এসেছি। মেডিকেলের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে আমাদের।
আলোচনা সভা : সমাজের পরিবর্তনশীলতার সাথে শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য খাপ খাওয়ানোই শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য–এমন মন্তব্য করেছেন বিজিএমই ইউনির্ভাসিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজির উপাচার্য প্রফেসর ড. ওবায়দুল করিম। বইমেলার দ্বিতীয় দিনের আলোচনা সভায় গতকাল প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। এতে সভাপতিত্ব করেন চসিকের প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা ড. কিসিঞ্জার চাকমা। বিশেষ অতিথি ছিলেন কুমিল্লার আর্মি প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক আলমগীর মোহাম্মদ এবং শিক্ষাবিদ ড. শামসুদ্দীন শিশির। আলোচকবৃন্দ পরিবর্তিত সময়ে পরিবেশের সাথে শিক্ষার সমন্বয় করে সমাজ সংস্কার ও শিক্ষার অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান। শিক্ষক–শিক্ষার্থীদের বই পড়ার ওপরও জোর দেন।
নগরের এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের জিমনেশিয়াম মাঠে অমর একুশে বইমেলা শুরু হয় গত শনিবার। ওইদিন বিকালে মেলা উদ্বোধন করেন গৃহায়ণ, গণপূর্ত এবং শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান। বইমেলা চলবে ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯টা এবং ছুটির দিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সবার জন্য মেলা উন্মুক্ত থাকবে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন আয়োজিত এবং চট্টগ্রাম সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদের ব্যবস্থাপনায় ২৬ দিনের এ বইমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।