নতুন নীতিমালায় সরকারি মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তির আবেদন শুরু

হাসান আকবর | বুধবার , ২৫ অক্টোবর, ২০২৩ at ৮:৪৫ পূর্বাহ্ণ

নতুন নীতিমালায় সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির আবেদন গ্রহণ শুরু হয়েছে। গতকাল থেকে নগরীর ১০টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ দেশের সব সরকারি বিদ্যালয়ে অনলাইনে ভর্তির আবেদন শুরু হয়েছে। আগামী ১৪ নভেম্বর বিকেল ৫টা পর্যন্ত অনলাইনে আবেদন করা যাবে। ভর্তিতে এবারও পরীক্ষা নয়, লটারির মাধ্যমেই ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গত ২২ অক্টোবর জারি করা নতুন নীতিমালার সাথে ভর্তি প্রক্রিয়ায় অসামঞ্জস্য দেখা দিয়েছে। নয়া নীতিমালায় প্রতি শাখায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা সর্বোচ্চ ৫৫ জন বলা হলেও চট্টগ্রামের ১০ মাধ্যমিকে ভর্তির ক্ষেত্রে শাখাগুলোতে ৬০ জন করে হিসাব করা হয়েছে। নয়া নীতিমালা অনুসরণ করতে হলে এই আসন সংখ্যা প্রতি শাখাতে ৫টি করে কমে যাবে বলেও সূত্র জানিয়েছে।

সূত্র জানিয়েছে, ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে দেশের সব মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভতির জন্য নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে এই নীতিমালা পুরোপুরি অনুসরণ করতে হবে বলেও জানিয়ে দেয়া হয়েছে। শিক্ষা সচিব মোহাম্মদ সোলেমান খান স্বাক্ষরিত নীতিমালাটি গত রোববার প্রকাশিত হয়েছে। নয়া নীতিমালায় সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অ্যান্ট্রি শ্রেণিতে ও আসন শূন্য থাকা সাপেক্ষে নবম শ্রেণি পর্যন্ত সব শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা যাবে। তবে স্কুলের কোনো শ্রেণির কোনো শাখাতেই ৫৫ জনের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করা যাবে না।

এতে বলা হয়, ‘জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০’ অনুযায়ী প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থীর বয়স ছয় বছরের বেশি হতে হবে। বয়সের ঊর্ধ্বসীমা সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়গুলো নির্ধারণ করবে। পরবর্তী শ্রেণিগুলোতে ভর্তির ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর বয়স প্রথম শ্রেণি থেকে ধারাবাহিক হিসাব প্রযোজ্য হবে। শিক্ষার্থীর বয়স নির্ধারণের জন্য ভর্তির আবেদন ফরমের সঙ্গে অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদের সত্যায়িত কপি জমা দিতে হবে। নীতিমালায় বলা হয়, ২০২৪ শিক্ষাবর্ষ বিবেচিত হবে ১ জানুয়ারি থেকে

৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এই নীতিমালা অনুযায়ী গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১১টা থেকে ভর্তির আবেদন শুরু হয়েছে। বিগত তিন বছরের ন্যায় এবারও পরীক্ষার পরিবর্তে লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। ইতোমধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে চলতি বছরের জন্য আবেদন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ১১০ টাকা। টেলিটক কোম্পানির প্রি পেইড মোবাইল ফোনের মাধ্যমে এই টাকা প্রদান করে আবেদন করতে হবে। (যঃঃঢ়ং://মংধ.ঃবষবঃধষশ.পড়স.নফ) ঠিকানায় লগইন করে আবেদন করা যাবে। চট্টগ্রাম মহানগরীর ১০টি সরকারি বিদ্যালয়ের পঞ্চম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ২ হাজার ৪২৪টি শূন্য আসনে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। উক্ত দশটি স্কুলে পঞ্চম শ্রেণির শূন্য আসনের সংখ্যা ১ হাজার ৫৪৫টি। ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ৫০০টি, ৭ম শ্রেণিতে ১০টি, অষ্টম শ্রেণিতে ১০টি এবং নবম শ্রেণিতে ৩৫৯টি শূন্য আসন রয়েছে। অনলাইনে লগইন করে থানাভিত্তিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকা থেকেই পছন্দের স্কুলের নাম পাওযা যাবে। একজন শিক্ষার্থী সর্বোচ্চ ৫টি বিদ্যালয় পছন্দ করতে পারবে। যে সব স্কুলে ডাবল শিফট চালু রয়েছে সেই স্কুলে ভর্তির আবেদনে যদি দুইটি শিফটের উল্লেখ করা হয় তাহলে দুইটি প্রতিষ্ঠান গণ্য হবে। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থী আরো তিনটি প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করতে পারবে।

জেলা প্রশাসনের শিক্ষা শাখা থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে পঞ্চম শ্রেণির মর্নিং শাখায় শাখায় ১১৪টি ও দিবা শাখায় ১২০টি আসন, ষষ্ঠ শ্রেণির দিবা শাখায় ২০টি, সপ্তম শ্রেণির মর্নিং শাখায় ১০টি এবং অষ্টম শ্রেণির মর্নিং শাখায় ১০টি আসনে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে।

ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির মর্নিং শাখায় ১১৬টি ও দিবা শাখায় ১১৯টি এবং নবম শ্রেণির মর্নিং শাখায় ৬০টি এবং দিবা শাখায় ৬০টি আসন রয়েছে। গভ. মুসলিম হাইস্কুলের পঞ্চম শ্রেণির মর্নিং শাখায় ৫৯টি ও দিবা শাখায় ৬০টি, ষষ্ঠ শ্রেণির মর্নিং শাখায় ৬০টি, দিবা শাখায় ৬০টি এবং নবম শ্রেণির মর্ণিং শাখায় ৬০টি ও দিবা শাখায় ৬০টি আসন রয়েছে। নাসিরাবাদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির মর্নিং শাখায় ৫৬টি, দিবা শাখায় ৫৮টি এবং ষষ্ঠ শ্রেণির মর্নিং শাখায় ৬০টি ও দিবা শাখায় ৬০টি আসনের বিপরীতে আবেদন গ্রহণ করা হচ্ছে।

চট্টগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির মর্নিং শাখায় ১২০টি এবং দিবা শাখায় ১১৯টি আসনে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। চট্টগ্রাম সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির মর্নিং শাখায় ৫৯টি এবং দিবা শাখায় ৬০টি এবং ষষ্ঠ শ্রেণির মর্নিং শাখায় ৬০টি ও দিবা শাখায় ৬০টি আসনে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। বাকলিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির মর্নিং শাখায় (বালিকা) ৫৮টি, দিবা শাখায় (বালিকা) ৬০টি, ষষ্ঠ শ্রেণির প্রভাতী শাখায় (বালিকা) ৬০ ও দিবা শাখায় (বালক) ৬০টি, নবম শ্রেণির মর্নিং শাখায় (বালিকা) ৬০টি এবং দিবা শাখায় (বালক) ৫৯টি আসনে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। সিটি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির মর্নিং শাখায় ১১৮টি এবং দিবা শাখায় ১২০টি আসনে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। হাজী মুহাম্মদ মহসিন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির মর্নিং শাখায় ৫৯ এবং দিবা শাখায় ৬০টি আসনে ভর্তি করা হবে। চট্টগ্রাম সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজের পঞ্চম শ্রেণিতে ১০টি শূন্য আসনে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে।

নয়া নীতিমালায় স্কুলের কোন শাখাতেই ৫৫ জনের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করা যাবে না মর্মে বলে দেয়া হলেও চট্টগ্রামের দশটি সরকারি মাধ্যমিকের অনেকগুলোতে এক একটি শাখায় ৬০টি করে আসন শূন্য দেখানো হয়েছে। ভর্তির সময় এখানে আসন সংখ্যা কমে যাবে কিনা জানতে চাইলে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোহাম্মদ সাদি উর রহিম জাদিদ বলেন, সারা বাংলাদেশে শিক্ষার্থী ভর্তির যে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে তাতে প্রতি শাখাতে ৬০ জন করে উল্লেখ করা হয়েছে। আমরা সেভাবে আবেদন গ্রহন করবো এবং পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।

বেসরকারি স্কুলগুলোর ভর্তির ক্ষেত্রে লটারি হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেসব স্কুল লটারিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে তাদের লটারি হবে। কিন্তু সব স্কুল লটারি প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি। তারা তাদের মতো করে ভর্তি করবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাংলাদেশ বিনিয়োগবান্ধব ও সম্ভাবনার দেশ : তথ্যমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধকক্সবাজারে হামুনের তাণ্ডব