বাংলাদেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নতুন কোনো নিষেধাজ্ঞার খবর সরকারের কাছে নেই বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। র্যাবের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা দুই বছর চলার মধ্যে নতুন নিষেধাজ্ঞা আসছে বলে ক‘দিন আগে দেশের একটি সংবাদপত্র খবর দেয়। তা নিয়ে গতকাল সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, কী (নিষেধাজ্ঞা) হবে কিনা, সেটা আমার কোনো আইডিয়া নাই। এটা আমরা জানি না। এটা আমাদের বলে কয়ে তো কোনোদিন কিছু করে নাই। দৈনিক কালবেলায় প্রকাশিত ওই সংবাদ প্রতিবেদন নিয়ে রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নিষেধাজ্ঞার বিষয় নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া না জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিষয়ে দেওয়া একটি তথ্যের প্রতিবাদ জানানো হয়। ওই প্রতিবেদনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনের বিষয়ে বলা হয়েছিল, তিনি মন্ত্রী হওয়ার আগে একটি চীনা প্রতিষ্ঠানের লবিস্ট হিসেবে কাজ করতেন। খবর বিডিনিউজের।
প্রতিবেদনটির কেবল একটি অংশের প্রতিবাদ জানানো প্রসঙ্গে গতকাল এক প্রশ্নে মোমেন বলেন, এখানে মিথ্যা তথ্য দিয়েছে। মিথ্যা তথ্যটা হলো, এটা একটু ডিমিনিং আমাদের দেশের সরকারের জন্য। মিথ্যা তথ্যটা বলেছে যে, মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী, মানে আমি মন্ত্রী হওয়ার আগে চাইনিজ একটা লবি, চাইনিজ একটা লবির সাথে কাজ করেছি। এটা সম্পূর্ণ ডাহা মিথ্যা।
প্রতিবাদ পাঠানোর কারণ দেখিয়ে তিনি বলেন, আমি মনে করেছি, এই মিথ্যাটার বিষয়ে বলা উচিত, কোনো চাইনিজ কোম্পানিতেও কাজ করিনি, কারও লবিস্টও না। বরং বলতে পারেন, আমি সারাজীবনই আমেরিকায় ছিলাম এবং সেখানে কাজ করেছি। আমি জানি না, তারা এটা কেন করেছে। খুবই অদ্ভুত, তারা জেনেশুনে এই মিথ্যা ও বানোয়াট একটা তথ্য দিয়েছে।
নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে ওই প্রতিবেদনের দুর্বলতা তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এই প্রেক্ষিতে আপনি যে ভুল তথ্য দিলেন, খবর দিলেন এগুলো আমাদের কোনো জানা নাই। সুতরাং এটা খুব অদ্ভুত এবং আশ্চর্যজনক; এবং তারা কোনো রেফারেন্সও দেয় নাই।
নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে রোববার দেওয়া কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকের বক্তব্য উদ্ধৃত করে মোমেন বলেন, তবে, আমাদের কৃষিমন্ত্রী গতকাল বলেছেন, দেশে স্যাংশনের কোনো কারণই নাই। তবে, এটা নিজস্ব সরকারের ওপর নির্ভর করে। এটা যদি হয়, দুঃখজনক হবে। তবে, আমেরিকা তো হাজার হাজার স্যাংশন দিয়ে যাচ্ছে। আমরা আশা করি যে, আমেরিকার শুভবুদ্ধির উদয় হবে এবং তারা এসব করবে না।
সফরে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তাদের সামপ্রতিক সফর ও বিভিন্ন ফোরামে তাদের বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, তাদের বক্তব্য অত্যন্ত পজিটিভ ছিল এবং অত্যন্ত ভারসাম্যপূর্ণ ছিল এবং পরিপক্ষ ছিল।
নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক বক্তব্যের বিষয়ে এক প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সেটা ওখানে জিজ্ঞেস করেন। তবে, রাজনীতিবিদরা অনেক কিছু বলেন, যাতে অন্যান্যদের জন্য সতর্কবাণী থাকে। এবং সেটার আক্ষরিক অর্থে কীভাবে হবে, আমি বলতে পারব না।
তিনি বলেন, আমরা ফেলে দেওয়ার দেশ না। আমরা মোটামুটিভাবে এখন আগের মতো দরিদ্র, ক্লিষ্ট, দানের উপরে আমরা থাকি না। আমাদের জাতির গর্ব আছে। আমরা আমাদের ঐতিহ্য ও অবস্থান নিয়ে গর্বিত। আমরা বিভিন্ন রকম প্রতিকূল পরিবেশেও আমরা বিজয়ের জাতি, আমরা অর্জন করেছি। সুতরাং কেউ চোখ রাঙিয়ে আমাদের দিকে তাকালেই আমরা ভড়কে যাব, আমরা এমন না। এটা হচ্ছে ইঙ্গিত যে, বাংলাদেশ হচ্ছে বিজয়ের জাতি, আমরা কোনো ধরনের প্রলোভনে, কোনো প্রতিকূল পরিবেশে ঘাবড়ে যাব না, আমরা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করব, মোকাবেলা করার ক্ষমতা আছে। সেই বক্তব্যটাই বোধ হয় বেসিক্যালি বলা হয়েছে।
ভ্রমণ সতর্কতা খুবই দুঃখজনক : নির্বাচনের আগে বাংলাদেশে নাগরিকদের চলাচলে যে ভ্রমণ সতর্কতা ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস জারি করেছে, সেটাকে ‘দুঃখজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্টুমন্ত্রী। এ বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, এটা খুবই দুঃখজনক। আজকে থেকে প্রায় সাত–আট মাস পরে নির্বাচন হবে আর ইতোমধ্যে মার্কিন দূতাবাস তাদের নাগরিকদের সতর্কতা অবলম্বন করতে বলেছে। এটা তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন যে, তারা কেন করেছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে ঠিক কোনো ধরনের হত্যা নাই, রাস্তাঘাটে কেউ গুলি করে কাউকে মারে না, কোনো সভা–সমিতি কাউকে কেউ মারে না, আমাদের দেশে মৃত্যুর সংখ্যা অজ্ঞাতভাবে রাস্তার উপরে প্রায় শূন্য আর পূর্বে যদি শত্রুতা থাকে, তাহলে… আর মার্কিন নাগরিকদের বিরুদ্ধে তারা এত ক্ষেপবে কেন, কোনো অন্যায় তো মার্কিন নাগরিকরা এখানে করছে না। এটা খুবই অদ্ভূত। আমি জানি না, ওদেরকে জিজ্ঞেস করেন কেন করেছে?
দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে ‘অত্যন্ত উন্নত’ হিসাবে বর্ণনা করে তিনি বলেন, আমাদের দেশে এগুলোর কোনো কারণ নাই যে, এই সহিংসতা হবে, যার জন্য অগ্রিম একটা সতর্কতা দিতে হবে। সুতরাং আমি এটা জানি না, তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন। বরং হয়ত সতর্কতা দেওয়া উচিত যে, আমেরিকাতে গেলে পরে মলে কিংবা বারে কিংবা স্কুলে সাবধানে থাকবে। এটা হয়ত সতর্কতা দেওয়া যায়। এক্ষেত্রে বেশি সামঞ্জস্যপূর্ণ মনে হবে। যা–ই হোক, এটা তাদের ব্যাপারে। নিশ্চয়ই তাদের কোনো বিষয়–আশয় আছে, সেটা তারা ভালো বলতে পারবে।