চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নতুন খাল খনন প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণসহ অন্যান্য প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর হতে শুরু হয়েছে। অনুমোদনের পর ছয় বছরেও বাস্তবায়িত না হওয়া প্রকল্পটির বিষয়ে গতকাল রোববার দুটো সভা হয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে। উভয় সভায় উপস্থিত স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং সিটি কর্পোরেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দ্রুত প্রকল্পটি বাস্তবায়নে একমত হয়েছেন।
এর মধ্যে বিকালে অনুষ্ঠিত ভূমি বরাদ্দ কমিটির সভায় আরো ৯ দশমিক ২৪৫৫ একর ভূমি অধিগ্রহণে অনাপত্তি জানানো হয়। এর আগে সকালে অনুষ্ঠিত অপর সভায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পরিবীক্ষণ, মূল্যায়ন ও পরিদর্শন ইউনিটের মহাপরিচালক মো. এমদাদ উল্লাহ মিয়ান প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সব সংস্থাকে দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশনা দেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটির জন্য প্রয়োজন ২৫ দশমিক ১৬৬৬২ একর ভূমি। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণের নিয়ম হচ্ছে, প্রথমে দায়ের করতে হয় এলএ মামলা। সর্বশেষ কেন্দ্রীয় ভূমি অধিগ্রহণ কমিটিতে অধিগ্রহণের চূড়ান্ত অনুমোদন পেতে হয়। এই নিয়ম মেনে নতুন খাল খনন প্রকল্পের অধিগ্রহণের জন্য সম্ভাব্য ভূমিকে পাঁচ ভাগে ভাগ করে পৃথক পাঁচটি মামলা হয়েছে জেলা প্রশাসনের এলএ শাখায়। পাঁচটি মামলার মধ্যে প্রথমটিতে বন্দর-বাকলিয়া মৌজায় ৩ দশমিক ৮৯১৫ একর ভূমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব আছে। এর মধ্যে নাল জমির পরিমাণ শূন্য দশমিক ৩০০০ একর, ভিটি ৩ একর এবং পুকুর রয়েছে শূন্য দশমিক ৫৯১৫ একর। দ্বিতীয় মামলায় পাঁচলাইশ-বাকলিয়া
মৌজায় প্রস্তাবিত ভূমির পরিমাণ ৬ দশমিক ৯৫৯৫ একর। এর মধ্যে ভিটি রয়েছে ৪ দশমিক ২০০০ একর এবং নাল জমি রয়েছে ২ দশমিক ৭৫৯৫ একর। মামলা দুটি গত বছর নিষ্পত্তি হয়েছে। অর্থাৎ ১০ দশমিক ৮৫১ একর ভূমি অধিগ্রহণের অনুমোদন পাওয়া গেছে।
বাকি তিনটি মামলার মধ্যে তৃতীয় মামলায় পাঁচলাইশ-বাকলিয়া মৌজায় ৯ দশমিক ২৩৪৫ একর ভূমির প্রস্তাব আছে। এর মধ্যে ভিটি ৩ দশমিক ৫০০০ একর, পুকুর শূন্য দশমিক ০৪৯০ একর এবং নাল জমি রয়েছে ৫ দশমিক ৬৮৫৫ একর। এ মামলা নিয়ে গতকাল সভা হয়েছে। সভায় মামলা নিষ্পত্তিতে সবাই একমত হয়েছেন। এখন চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রীয় ভূমি অধিগ্রহণ কমিটিতে পাঠানো হবে। সাধারণত জেলা প্রশাসন কার্যালয় থেকে অনাপত্তি দিলে কেন্দ্রীয় ভূমি অধিগ্রহণ কমিটি অনুমোদন দিয়ে দেয়।
এদিকে চতুর্থ মামলায় পাঁচলাইশ-পূর্ব ষোলশহর মৌজায় ৩ দশমিক ৯৫১৪ একর ভূমির প্রস্তাব রয়েছে। এর মধ্যে ভিটি শূন্য দশমিক ৯৭৯৩ একর এবং নাল জমি রয়েছে শূন্য দশমিক ১৫০০ একর। পঞ্চম মামলায় পাঁচলাইশ-পূর্ব ষোলশহর মৌজায় ৩ দশমিক ৯৫১৪ একর ভূমির প্রস্তাব রয়েছে। এর পুরোটাই ভিটি। পরবর্তী সভায় এ মামলা দুটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা রয়েছে।
সকালে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন অতিরিক্ত সচিব মো. এমদাদ উল্লাহ মিয়ান। সভায় গণপূর্ত, বন বিভাগ, পিডিবিসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। এমদাদ উল্লাহ মিয়ান প্রকল্পটি বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরসহ স্থানীয় সরকার বিভাগ আন্তরিক বলে জানান।
সভায় ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণ নির্ধারণে সংস্থাগুলোর সহযোগিতা চাওয়া হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রকল্পভুক্ত এলাকায় বিদ্যমান বাড়িঘরের ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত প্রতিবেদন এক সপ্তাহের মধ্য জমা দেবে গণপূর্ত বিভাগ। গাছপালা থাকলে ওই বিষয়ে প্রতিবেদন দেবে বন বিভাগ। পানির পাইপলাইন, বিদ্যুতের খুঁটি, টিঅ্যান্ডটির ক্যাবল ও গ্যাসের পাইপ লাইন থাকলে তা সরিয়ে নেবে ওয়াসা, পিডিবি ও টিঅ্যান্ডটি ও কর্ণফুলী গ্যাস।
২০১৪ সালের ২৪ জুন ২৮৯ কোটি ৪৪ লাখ ৪ হাজার টাকায় নতুন খাল খনন প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পেয়েছিল। ২০১৮ সালের ৭ নভেম্বর প্রথমবার সংশোধন করে প্রকল্পটি ১ হাজার ২৫৬ কোটি ১৫ লাখ টাকায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় একনেক। সর্বশেষ গত সেপ্টেম্বরে প্রকল্পটির সংশোধিত প্রস্তাবিত ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৩৭৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। সংশোধনের যৌক্তিকতা খতিয়ে দেখতে স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. এমদাদ উল্লাহ মিয়ানকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।
বারইপাড়াস্থ চাক্তাই খাল থেকে শুরু করে শাহ আমানত রোড হয়ে নুর নগর হাউজিং সোসাইটির মাইজপাড়া দিয়ে পূর্ব বাকলিয়া হয়ে বলির হাটের পাশে জানালী বাপের মসজিদ হয়ে কর্ণফুলী নদীতে গিয়ে পড়বে নতুন খালটি। খালটির দৈর্ঘ্য হবে ২ দশমিক ৯ কিলোমিটার এবং প্রস্থ হবে ৬৫ ফুট।