দক্ষিণ চট্টগ্রামবাসীর বহুল প্রতীক্ষিত নতুন কালুরঘাট সেতুর নির্মাণ কাজ আগামী ফেব্রুয়ারিতে শুরু হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতু এবং রেলপথ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। গতকাল শুক্রবার বিকেলে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এ কথা বলেন।
উপদেষ্টা তার বক্তব্যের শুরুতে বলেন, ভুলে যাবার আগে বলি, কালুরঘাট সেতুর কাজ কখন চালু হবে তা নিয়ে জানতে চেয়েছিল একজন। আমরা আশা করছি, ফেব্রুয়ারি মাস থেকে কালুরঘাট নতুন সেতুর কাজ শুরু হবে। চট্টগ্রামে আমি আরেকটি কাজ দেখতে এসেছি। টানেল। কোনো গাড়ি দেখলাম না। এটি একটা অপরিকল্পিত পরিকল্পনা। আসলে পরিকল্পনা ছিলো– মাতারবাড়িতে একটা গভীর সমুদ্রবন্দর হবে। এবং যাতায়াতের জন্য একটা সড়ক সংযাগ হবে। সেখানে একটা ইকনোমিক জোন হবে। কিছুই হয়নি। শুধু সেখানে একটা বিদ্যুৎ প্লান্ট হয়েছে। আর এখানে একটা টানেল হয়ে গেছে। অপচয়ের উন্নয়ন আমরা করতে রাজি না। সভায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. নুরুল করিম, সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম, ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, চট্টগ্রামবাসীর বহুল প্রতীক্ষিত কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীর ওপর দিয়ে রেল কাম সড়ক সেতু নির্মাণ প্রকল্পটি গত ৭ অক্টোবর একনেক সভায় অনুমোদন দেয়া হয়। একনেকের সভায় ১১ হাজার ৫৬০ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়।
সেতুটি একনেকে অনুমোদন হওয়ার পর এখন সেতু নির্মাণের জন্য পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে কনসালটেন্ট নিয়োগ, ডিটেইল ডিজাইন তৈরির কাজ শুরু হওয়ার কথা জানান রেলওয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা। ডিটেইল ডিজাইন করতে এক বছরের মত লাগবে। এরপর সেতু নির্মাণের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হবে। আনুসাঙ্গিক যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষ করে সেতুর কাজ ২০২৬–এর মাঝামাঝি শুরু হবে। তবে ভূমি অধিগ্রহণের কাজ আগামী ফেব্রুয়ারিতে শুরু হবে।
প্রকল্পের ১১ হাজার ৫৬০ কোটি ৭৭ লাখ টাকার মধ্যে ৪ হাজার ৪৩৫ কোটি ৬২ লাখ টাকা বাংলাদেশ সরকারের। বাকি ৭ হাজার ১২৫ কোটি ১৫ লাখ টাকা দেবে দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনৈতিক উন্নয়ন সহযোগিতা তহবিল (ইডিসিএফ) এবং ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট প্রমোশন ফ্যাসিলিটি (ইডিপিএফ)।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা জানান, চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজারের মধ্যে নির্বিঘ্ন ও নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে বর্তমান পুরাতন সেতুর পাশে কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীর উপর নতুন রেল–কাম–সড়ক সেতু নির্মাণ করতে যাচ্ছে সরকার। রেলপথ মন্ত্রণালয় ২০৩০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে রেল–কাম–সড়ক সেতু প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।
মূল প্রকল্পের কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে ৭০০ মিটার রেল–কাম–রোড ব্রিজ নির্মাণ, ৬ দশমিক ২০ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট নির্মাণ, ২ দমমিক ৪০ কিলোমিটার সড়ক ভায়াডাক্ট, ৪ দশমিক ৫৪ কিলোমিটার বাঁধ, ১১ দশমিক ৪৪ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ এবং আনুষঙ্গিক কাজ।