নগরের বর্জ্য যেন কোনোভাবেই কর্ণফুলীতে গিয়ে না পড়ে

| বুধবার , ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ at ১১:০৭ পূর্বাহ্ণ

কর্ণফুলীর স্রোত, নাব্যতা ও পানি আমাদের অর্থনীতির প্রাণ।এ নদীর প্রতি দায়িত্বশীল হওয়া, নদীকে জীবন্ত রাখা দেশের সমৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আমাদের দেশের অর্থনীতির প্রাণপ্রবাহ কর্ণফুলী বর্তমানে দখলে দূষণে বিপর্যস্ত। নানাভাবে দখল হয়েছে নদী এবং এখনো হচ্ছে। আমরাই লিখেছি আজাদীতে, ‘দূষণ থেমে নেই বহু বছর ধরে। অবৈধ দখলদারদের কবল থেকে নদী উদ্ধারে বিভিন্ন সময় বহু আলোচনা হয়েছে। উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। শোনা গেছে, অনেক প্রতিশ্রুতি, আশ্বাস বাণী। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কেউ কথা রাখেনি। বিপর্যস্ত কর্ণফুলীর শেষরক্ষা আদৌ হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন কর্ণফুলী গবেষক এবং বিশেষজ্ঞরা’। গত ৩ সেপ্টেম্বর দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত হয়েছে ‘কর্ণফুলীতে বর্জ্যের স্রোত থামবে কীভাবে’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন। এতে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম নগরীর প্রাণ কর্ণফুলী নদী বাসাবাড়ি ও শিল্পাঞ্চলের বর্জ্যে প্রতিদিন ভরাট হচ্ছে। প্রতিদিন কয়েক হাজার মেট্রিক টন গৃহস্থালি ও শিল্পকারখানার বর্জ্য, প্লাস্টিক, পলিথিন এবং বন্দরের জাহাজ সংক্রান্ত বর্জ্য খাল ও নালা হয়ে কর্ণফুলীতে পড়ছে। বেশ আগের এক প্রতিবেদনে প্রতি মাসে ৬৬ হাজার টন বর্জ্য কর্ণফুলীতে পড়ছে বলে বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে এর পরিমাণ আরো বেশি বলে বিশেষজ্ঞরা মন্তব্য করেছেন। তারা একে বলছেন ‘বর্জ্যের স্রোত’।

বিভিন্ন গবেষণা, সরকারি সংস্থার নানা উদ্যোগ, আলোচনা; কোনো কিছুতেই নদীতে আবর্জনা পড়া থামানো যাচ্ছে না। এছাড়া দখল, দূষণ তো আছেই। নদীর প্রস্থ কমেছে, নষ্ট হচ্ছে স্বাভাবিক গতি। জীববৈচিত্র্যও হুমকির মুখে। শুধু জলজ প্রাণী কিংবা জীববৈচিত্র্য নয়, চট্টগ্রামের মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি ও স্বাভাবিক জীবনযাত্রা হুমকির মুখে পড়ছে। কর্ণফুলীতে ‘বর্জ্যের স্রোত’ থামবে কীভাবে? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কর্ণফুলী নদীকে বাঁচাতে হলে নগর, শিল্প ও বন্দর তিন খাতের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এক খাতে আনতে হবে। তারা আরো কিছু উদ্যোগের কথা বলেন। আর সিটি মেয়র বলছেন, ময়লা যাতে নদীতে না যায় সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, নগরীর ৩৬টি খাল ও নালা দিয়ে প্রতিদিন ২ হাজার ২০০ টন বর্জ্য কর্ণফুলী নদীতে পড়ছে। নগরীর ৫২টি খাল ও নালার মুখ রয়েছে কর্ণফুলী নদীর অভিমুখে। এর অনেকগুলো দখল ও দূষণে ভরাট হয়ে গেছে। ৩৬টির মোটামুটি অস্তিত্ব রয়েছে। যেগুলো দিয়ে হরদম বর্জ্য পড়ছে কর্ণফুলীতে। এছাড়া নদীর দুই পাড়ের তিন শতাধিক কারখানা নিয়মিত নদী দূষণ করছে। এদের অনেকেই নদী ভরাটের সাথেও জড়িত। নগরীর ৭০ লক্ষ মানুষের বর্জ্য, পলিথিন কর্ণফুলীর তলদেশে বিশাল পলিথিন পাহাড় তৈরি করছে; যা নদী এবং নদীর জীববৈচিত্র্যকে হুমকির মুখে ফেলছে।

বলা জরুরি যে, জনসাধারণের অসচেতন ও বেপরোয়া ব্যবহারে দিন দিন কর্ণফুলী নদী অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। দখল ও ভরাটের করাল গ্রাসে এই নদীর মতো অনেক নদী মরে গেছে। নদী বাঁচলে জীবন বাঁচবে। নদী বাঁচলে দেশ বাঁচবে। তাই নদীকে বাঁচাতে জনগণের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্য নিয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। কর্ণফুলীতেই চট্টগ্রাম বন্দর। দেশে চট্টগ্রাম বন্দরের কোনো বিকল্প বন্দর নেই। দখলদূষণে কর্ণফুলী যদি গতিপথ হারায় তখন বন্দর বন্ধ হয়ে যাবে। তাই কর্ণফুলী রক্ষায় সকল আয়োজন চট্টগ্রাম বন্দরকেই করতে হবে।

অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে পারলে কর্ণফুলীর দখল থেকে ধীরে ধীরে মুক্ত করার প্রয়াস চালানো যাবে। কর্ণফুলী নদী গবেষকরা বলছেন, কর্ণফুলী সুরক্ষায় এ মুহূর্তে দু’টি বিষয় জরুরি। এক. দূষণরোধ এবং দুই. অবৈধ দখলকৃত স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ। অভিযোগ উঠেছে, কর্ণফুলী ভরাট করে ভূমির ব্যবসা চলছে। চট্টগ্রাম মহানগরীতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও জমির দাম বৃদ্ধির সুবাদে জমির ব্যবসা লাভজনক হওয়ায় এই অপতৎপরতাও বেড়ে গেছে। গবেষকদের অভিযোগ, কর্ণফুলীকে জীবন্ত সত্তা ঘোষণা দিলেও সেই আদেশ লঙ্ঘন করে নদীকে হত্যা করা হচ্ছে। এই নদীর সঙ্গে দুই কোটির বেশি মানুষের জীবনজীবিকা জড়িত। শহরের সকল বর্জ্য এসে পড়ছে নদীতে। এটি জলজ বাস্তুসংস্থানের জন্য ক্ষতি। উন্নত শহরে এসব নেই। চসিক, সিডিএ, ওয়াসা, বন্দর ও জেলা প্রশাসনকে দিয়ে এই নদীকে রক্ষা করা এখন সময়ের দাবি। সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেছেন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ব্যাপারে সিরিয়াস। নগরীর ময়লা যাতে আর কোনোভাবেই নদীতে গিয়ে না পড়ে সেই ব্যবস্থা আমরা করছি। এই কাজটা যদি করা সম্ভব হয়, তাহলে দূষণের কবল থেকে রক্ষা পাবে কর্ণফুলী।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা, শীর্ষ ৩ পদে জয়ী শিবির সমর্থিত প্রার্থী
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬