নগরের খাল থেকে মাটি উত্তোলনে দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, আমি যখন শহরের বিভিন্ন জায়গায় যাই তখন দেখতে পাই, ড্রেনের পাড় বাঁধাই করা হচ্ছে। এটা দৃশ্যমান। কিন্তু মূল বিষয় হচ্ছে সেগুলো (খাল) কতটুকু খনন করা হচ্ছে। আমি চাক্তাই খালের আশেপাশে থাকি। আমার পৈতৃক বাসা শহরে। চাক্তাই খাল থেকে ২০০–৩০০ মিটার দূরে। যে কারণে চাক্তাই খাল পার হয়ে চলাচল করতে হয়। আজকেও এসেছি। আমি যেখানে থাকি সেখানে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি দেখিনি। গতকাল শনিবার দুপুরে সার্কিট হাউজে চট্টগ্রাম জেলায় সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন সংক্রান্ত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সভায় অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়েশা খান, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী নজরুল ইসলাম চৌধুরী, সংসদ সদস্য মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, মহিউদ্দিন বাচ্চু, এম এ ছালাম, এম এ মোতালেব, বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল ইসলাম, ডিআইজি নুরে আলম মিনা ও সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় উপস্থিত ছিলেন।
সভায় চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান মেগা প্রকল্পের সর্বশেষ অগ্রগতি তুলে ধরেন প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল ফেরদৌস আহমেদ। এরপর ড. হাছান মাহমুদ বলেন, যেখানে মাটি উত্তোলন করেছেন সেখানে কিন্তু এখন মাটি চলে আসছে। এই বর্ষায় আবার চলে আসবে। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ার পর প্রথম এক বছর বা দুই বছর পানি উঠবে না। মাটি উত্তোলন করা না হলে পরবর্তী বছর আবার পানি উঠবে।
তিনি বলেন, এ প্রকল্প শেষ হওয়ার পর কী হবে? রেগুলার পরিষ্কার করার কী হবে? তিনি বলেন, খালগুলোর তলা যে আগে পাকাকরণ করা হয় সেই পাকাটা ভাঙা হয়েছে কিনা, ভেঙে সেটার ক্যারিং ক্যাপাসিটি কতটুকু বৃদ্ধি করা হয়েছে, সেটা ইম্পর্টেন্ট ইস্যু।
তিনি আরো বলেন, চট্টগ্রাম শহরে জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ হচ্ছে নালার ওপর স্ল্যাব থাকে এবং সেখানে মানুষ পলিথিন ফেলে। সেই স্ল্যাব তুলে ঠিকমতো পরিষ্কার করা হয় না। এমনকি নালার ওপর স্ল্যাব নির্মাণের পর সেটা ভবিষ্যতে পরিষ্কার করার জন্য সুব্যবস্থাও রাখা হয় না।
সভা শেষে সাংবাদিকদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সভায় জলাবদ্ধতা প্রকল্প নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে এবং জলাবদ্ধতা প্রকল্পের সমন্বয়ের ওপর আমরা গুরুত্ব দিয়েছি। প্রকল্প শেষ হতে আরো আড়াই বছর বাকি আছে। এই আড়াই বছর সময়ের মধ্যে জনগণের যাতে কোনো ভোগান্তি না হয় সেটির ওপর গুরুত্ব দিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। একইসাথে এই প্রকল্প শেষ হওয়ার পর যাতে নিয়মিত মেনটেইনেন্স করা হয় সেটিকেও গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করেছি। এছাড়া চট্টগ্রামে পাহাড় কাটা বন্ধ ও যানজট নিরসনসহ সার্বিক অনেক বিষয় নিয়ে সমন্বয় সভায় আলোচনা করেছি। আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি, প্রতি তিন মাস পরপর এ রকম সমন্বয় সভা করব।
তিনি বলেন, আপনারা জেনে খুশি হবেন, আজকে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বে টার্মিনালের জন্য ইতিমধ্যে পাঁচশ একর জায়গা প্রধানমন্ত্রী বিনামূল্যে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেছেন। আরো তিনশ একরের বেশি জায়গা তারা পাবে, সেটির জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ আবেদন করেছে। ইতিমধ্যে ডিপি ওয়ার্ল্ড এবং সিঙ্গাপুর পোর্ট অথরিটির সাথে চট্টগ্রাম বন্দর এমওইউ স্বাক্ষর করেছে।
হাছান মাহমুদ বলেন, এখানে তিনটি ভাগে কাজ হবে। একটি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ করবে, আরেকটি সিঙ্গাপুর বন্দর কর্তৃপক্ষ করবে। আরেকটি ডিপি ওয়ার্ল্ড করবে। ওয়ার্ল্ড ব্যাংকসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানও সেখানে যুক্ত হচ্ছে। এটা একটি বড় অগ্রগতি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বে টার্মিনাল হলে সেটি চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ে আরো বড় একটি নতুন বন্দর হবে। যেটি সমগ্র বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন সম্পদ হবে এবং একইসাথে এই বে টার্মিনাল দিয়ে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যসমূহের পণ্য সরবরাহ আমরা করতে পারব।
সভায় মেগা প্রকল্পের সেনাবাহিনীর প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল ফেরদৌস আহমেদ বলেন, দায়িত্ব নিয়ে বলছি, এ বছর চাক্তাই এবং চাক্তাই ডাইভার্শন পুনঃখনন করছি। এই খালটির ফুল প্লেয়িং ক্যাপাসিটি আমরা অর্জন করছি। সম্পূর্ণ খনন করছি এবং নির্ধারিত স্থানে মাটি ডিসপোজাল করছি। এটা এ বছরের চলমান প্রক্রিয়া। বর্ষার আগের আমরা এটা প্রোপারলি এনশিউর করব। ড্রেন পরিষ্কারের বিষয়ে সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে দফায় দফায় মিটিং করে কাজগুলো করছি।
তিনি বলেন, ৬/৭টা মেজর খাল চিহ্নিত করেছি, যেগুলোর কারণে ৪০ শতাংশ জলাবদ্ধতা হয়ে থাকে। এ বছর খালগুলোর সম্পূর্ণ ফ্লোয়িং ক্যাপাসিটি অর্জনের জন্য পুরোপুরি খননে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এর সঙ্গে টার্শিয়ারি ও সেকেন্ডারি যেসব ড্রেন রয়েছে সেগুলো নিয়ে সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করেছি এবং সেগুলো পরিষ্কারের বিষয়ে প্রদক্ষেপ নিয়েছি।