নগরের দুই নম্বর গেইট থেকে রহমান নগর মোড়। স্বল্প দূরত্বের এ পথে রিকশা ভাড়া ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। গতকাল দুপুরে কয়েকজন রিকশা চালক দাবি করেন ৬০ টাকা। শেষে ৫০ টাকায় যেতে রাজি হয় এক রিকশা চালক। বাড়তি ভাড়া দাবির পক্ষে যুক্তি দিয়ে সেলিম নামে ওই রিকশা চালক বলেন, সামনে ঈদ। ছেলেমেয়েদের শপিংসহ অন্যান্য খাতে বাড়তি খরচ হবে। জিনিসপত্রের দামও বেশি। আপনারা কিছু টাকা বাড়িয়ে না দিলে আমাদের মত গরিবের কী হবে? কথা প্রসঙ্গে সেলিম জানান, তার বাড়ি কুমিল্লা। সেখানে দিমজুর হিসেবে কাজ করেন। রোজা ও ঈদ উপলক্ষে বাড়তি আয়ের আশায় চট্টগ্রাম আসেন। বেছে নেন রিকশা চালানো। এর আগেও দুই রমজানে এসে রিকশা চালিয়েছেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেলিমের মত অসংখ্য মৌসুমী রিকশা চালকের আনাগোনা বেড়েছে নগরে। রমজানে বাড়তি আয়ের আশায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসেন তারা। এরা শহরের রাস্তাঘাট, অলিগলি ঠিকভাবে চিনেন না, জানেন না নির্ধারিত ভাড়াও। তাই দাবি করেন মনগড়া এবং বাড়তি ভাড়া। এসব মৌসুমী রিকশা একদিকে ভোগান্তির কারণ হচ্ছে যাত্রীদের। একইসঙ্গে অতিরিক্ত রিকশার চাপে শহরে বাড়ছে যানজটও।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) রাজস্ব শাখার তথ্য অনুযায়ী, শহরের লাইসেন্স প্রাপ্ত রিকশা আছে ৭০ হাজার ১টি। গত বছরের ১৭ মে থেকে ডিজিটাল লাইসেন্স নবায়ন কার্যক্রম শুরু করে সংস্থাটি। যা শেষ হয় একই বছরের ১৭ ডিসেম্বর। এ সময়ে লাইসেন্স নবায়ন করে মাত্র ২১ হাজার ৩১৮টি। অবশ্য সারা বছরই শহরে লাইসেন্সপ্রাপ্ত রিকশার কয়েকগুণ চলাচল করে শহরে। যা রমজানে আরো বেড়ে যায়। এর সঙ্গে আছে ব্যাটারিচালিত রিকশাও।
গত কয়েকদিনে নগরের মুরাদপুর, দুই নম্বর গেইট, বহাদ্দারহাট, জিইসি মোড়, ওয়াসা মোড়, টাইগারপাস, স্টেশন রোড, নিউমার্কেট, আমতল, আন্দরকিল্লা, চকবাজার, আগ্রাবাদসহ বিভিন্ন মোড়ে সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, প্রায় সময় যানজট লেগে থাকে সেখানে। গণপরিবহন ও প্রাইভেট গাড়ির পাশাপাশি এসব যানজটের জন্য রিকশাও সমানভাবে দায়ী। যেখানে সেখানে যাত্রীর অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকে রিকশা। বিশেষ করে বিভিন্ন মার্কেটের সামনে সড়কের প্রায় অর্ধেক অংশ দখলে থাকে রিকশা। ফলে লেগে যায় যানজট। চকবাজারের গুলজার টাওয়ার ও মতি কমপ্লেঙে, সেন্ট্রাল প্লাজা, স্যানমার, শপিং কমপ্লেঙ, টেরিবাজার, বালি আর্কেড, নিউমার্কেট ও রিয়াজুদ্দিন বাজারের সামনে এ দৃশ্য বেশি চোখে পড়ে। চকবাজার কেয়ারি ইলিশিয়ামের সামনে গুলজারমুখী প্রায় রিকশাচালক উল্টো পথে এসে যানজট সৃষ্টি করে।
জানা গেছে, মৌসুমী রিকশা চালকদের মধ্যে দিনমজুর, চাষাবাদের শ্রমিকসহ বিভিন্ন অস্থায়ী কাজের শ্রমিকের সংখ্যাই বেশি। বাড়তি আয়ের আশায় একমাস রিকশা চালিয়ে ঈদ শেষে আবারো ফিরে যাবেন পুরোনো পেশায়। এছাড়া ঈদকে সামনে রেখে নগরের আশেপাশের উপজেলা থেকেও বহু চালক তাদের রিকশা নিয়ে নগরে চলে আসছেন। বিশেষ করে হাটহাজারী, পটিয়া এবং সীতাকুণ্ড থেকে আসা বহু রিকশা চালককে নগরে রিকশা চালাতে দেখা গেছে।
গত দুইদিনে অন্তত ১২ জন মৌসুমী রিকশা চালকের সঙ্গে কথা হয় আজাদীর। এর মধ্যে রংপুর থেকে আসা খায়রুল নামে এক রিকশা চালক জানান, প্রতবছর রমজানে চট্টগ্রামে আসেন। এবার তারা মোট তিনজন চতুর্থ রমজানে চট্টগ্রাম পৌঁছান। প্রায় এক মাস রিকশা চালিয়ে ঈদের তিনদিন পর বাড়ি ফিরে যাবেন। খায়রুল বলেন, রমজান মাসে রিকশা চালালে কিছু বাড়তি আয় হয়। বছরের অন্য সময়ের তুলনায় রমজান এবং ঈদের সময় স্বাভাবিক ভাড়ার চেয়ে প্রতি ট্রিপে বেশি ভাড়া পাওয়া যায়। বেশিরভাগ যাত্রী বাড়তি ভাড়ার বিষয়টি মেনেও নেন।
আরমান নামে এক রিকশা চালক জানান, তিনি এসেছেন বরিশাল থেকে। এবারই প্রথম চট্টগ্রামে আসা। রাস্তাঘাট চিনেন না। এতে কিছুটা সমস্যা হয়। অবশ্য কিছুটা বিরক্ত হলেও যাত্রীরা পথ দোখিয়ে নিয়ে যায়। তবে বেশি সমস্যা হয় ভাড়া নির্ধারণে। জায়গা চিনে না বলে আন্দাজে ভাড়া বলতে হয়। যা বেশি হলে যাত্রীরা রেগে যায় বলে জানান তিনি।
আনোয়ার নামে এক যাত্রী বলেন, নগরের মুরাদপুর থেকে দুই নম্বর গেইট। স্বল্প দূরত্বের এ পথে রিকশা ভাড়া ২০ টাকা। আজ (গতকাল বুধবার) দুপুরে কয়েকজন রিকশা চালক দাবি করেন ৪০ টাকা। শেষে এক রিকশাচালক ৩০ টাকায় যেতে রাজি হয়। রিকশা ওঠার পর দেখি সে চকবাজারের দিকে যাচ্ছে। পরে কথা বলে জানলাম, সে নাকি চট্টগ্রামে প্রথম এসেছে তাই রাস্তাঘাট চিনে না। কিন্তু দেখেন, রাস্তাঘাট না চিনলেও ভাড়া কিন্তু ঠিকই বেশি নিচ্ছে।