প্রতি বছর গড়ে দশ শতাংশ হারে বাড়ছে চট্টগ্রাম নগরীর মানুষ। এই বিপুল সংখ্যক মানুষের মাথা গোঁজার ঠাঁই করা কঠিন। এই কঠিন কাজটি সহজ করতে সরকারি কোনো সংস্থার দৃশ্যমান তৎপরতা নেই। গত দশ বছরে নগরীর জনসংখ্যা দ্বিগুণ হলেও সিডিএ কোনো আবাসিক এলাকা বাস্তবায়ন করেনি। আবাসন সংকটের মাঝে আজ সোমবার পালিত হচ্ছে বিশ্ব বসতি দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘সবার জন্য আবাসন, উন্নত ভবিষ্যৎ নগর’।
সিডিএর বাস্তবায়িত আবাসিক এলাকাগুলো নগরবাসীর আবাসন সংকট ঘোচাতে বিশেষ ভূমিকা রাখেনি। বছর বছর হাত বদল হলেও বাড়িঘর হয়নি অধিকাংশ প্লটে। গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের তৎপরতাও নেই বললে চলে। সবকিছু মিলে চট্টগ্রামে আবাসন সংকট প্রকট হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, গত ৬০ বছরে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ১২টি আবাসিক এলাকা প্রতিষ্ঠা করেছে। কিন্তু দুই-তৃতীয়াংশ প্লট খালি থাকায় সংস্থার জনমুখী উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য ভেস্তে গেছে। ১৯৫৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় সিডিএ। ১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠা করা কাতালগঞ্জ আবাসিক এলাকায় প্লটের সংখ্যা ৫৮টি। ১৯৬৫ সালে করা আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকায় প্লটের সংখ্যা ৩৯১টি। ১৯৭৩ সালে করা চান্দগাঁও আবাসিক এলাকায় প্লটের সংখ্যা ৭৫৯টি। ১৯৭৭ সালে করা কর্নেল হাট সিডিএ আবাসিক এলাকায় প্লটের সংখ্যা ১৬৮টি। ১৯৮৪ সালে করা সলিমপুর সিডিএ আবাসিক এলাকায় প্লটের সংখ্যা ৯০৪টি। ১৯৯৫ সালে করা কর্ণফুলী আবাসিক প্রকল্পে প্লটের সংখ্যা ৫১৭টি। ২০০০ সালে করা চন্দ্রিমা আবাসিক এলাকায় প্লটের সংখ্যা ১৮০টি। ২০০২ সালে করা চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা দ্বিতীয় পর্যায়ে প্লটের সংখ্যা ৮২টি। ২০০৬ সালে করা কল্পলোক আবাসিক এলাকায় প্রথম পর্যায়ে প্ল্লটের সংখ্যা ৪২৩টি। ২০০৭ সালে করা কল্পলোক আবাসিক এলাকা দ্বিতীয় পর্যায়ে ১৩৫৬টি। ২০০৮ সালে করা অনন্যা আবাসিক এলাকায় প্লটের সংখ্যা ১৪৭৮টি। ২০০৯ সালে ষোলশহর পুনর্বাসন এলাকায় সিডিএ ৪৮টি প্লট বরাদ্দ দেয় ক্ষতিগ্রস্ত ভূমি মালিকদের।
গত ৬০ বছরে সিডিএ মোট ৬৩৬৪টি প্লট বরাদ্দ দিয়েছে। কিন্তু এসব প্লটের দুই তৃতীয়াংশ খালি পড়ে রয়েছে। কোনো বাড়িঘর হয়নি। বছর বছর প্লট হাত বদল হয়েছে। ভূমির মূল্য বেড়েছে। বরাদ্দ গ্রহীতারা ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হয়েছে। কিন্তু সিডিএ যে উদ্দেশ্য নিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছিল তা অর্জিত হয়নি। এর মাঝে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা সিডিএর সলিমপুর আবাসিক এলাকা এবং কর্ণফুলী আবাসিক এলাকায়। এই দুটি প্রকল্প কোনো কাজে লাগেনি।
১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠা করা সলিমপুর আবাসিক এলাকায় ৯০৪টি প্লট থাকলেও অধিকাংশ প্লট খালি পড়ে আছে। শহর থেকে দূরে এবং নাগরিক সুযোগ সুবিধা না থাকায় এখানে কেউ বাড়িঘর নির্মাণে আগ্রহী নয়। অপরদিকে নদীর ওপারের কর্ণফুলী আবাসিক এলাকা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল ১৯৯৫ সালে। প্লট রয়েছে ৫১৭টি। আবাসিক এলাকা প্রতিষ্ঠার দুই যুগ অতিক্রান্ত হলেও একটি বাড়িও এই আবাসিকে নির্মিত হয়নি। বাড়িঘর করার পরিবেশ ওখানে গড়ে উঠেনি। আছে পানি সংকটও।
কল্পলোক আবাসিক এলাকা এবং অনন্যা আবাসিক এলাকা প্রতিষ্ঠা হয়েছে এক যুগেরও বেশি আগে। কল্পলোকে সীমিত সংখ্যক বাড়িঘর হলেও অনন্যা খাঁ খাঁ করছে। প্লট বরাদ্দের পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাড়িঘর নির্মাণ করা না হলে প্লট বাতিলের আইন থাকলেও তা কার্যকরের কোনো রেকর্ড নেই।
চট্টগ্রামে আবাসন সংকট ঘোচাতে অপর সরকারি সংস্থা জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষেরও ভূমিকা রাখার কথা। ১৯৫৬ সাল থেকে গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রামে কাজ শুরু করলেও নগরীর আবাসন সংকট ঘোচাতে সংস্থাটি প্রত্যাশিত ভূমিকা রাখতে পারেনি। এই সংস্থা চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে মাত্র সাড়ে সাত হাজার প্লট বরাদ্দ দিয়েছে। ছোটখাটো এবং অপেক্ষাকৃত কম আয়ের মানুষদের জন্য এসব প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়। এদের অধিকাংশ প্লট স্বল্পআয়ের মানুষের কাছ থেকে টাকাওয়ালারা কিনে নিয়ে বাড়িঘর নির্মাণ করেছেন। একই সাথে এই সংস্থা ১৭৭১টি ফ্ল্যাটও বরাদ্দ দিয়েছে। তবে এখনো এসব ফ্ল্যাট ক্রেতাদের হস্তান্তর করা হয়নি। কবে নাগাদ করা হবে তা-ও কেউ বলতে পারছেন না।
বিদ্যমান পরিস্থিতিতে প্রতি বছর দশ শতাংশ হারে বাড়ছে শহরের লোকসংখ্যা। একই সাথে বাড়ছে আবাসন সংকট। এই সংকট ঘোচানো ক্রমে সাধ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।