নগরীর যানজট সহনীয় পর্যায়ে আসবে আগামী সপ্তাহে

কয়েকদিনে হাজারের বেশি গ্রাম সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত রিকশা জব্দ । চলতি সপ্তাহে বাড়বে অভিযানের তীব্রতা । মনোবল বাড়াতে আইজিপি চট্টগ্রামে আসছেন কাল

হাসান আকবর | শুক্রবার , ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ at ৬:০৬ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম মহানগরীর যান চলাচলে আগামী সপ্তাহ নাগাদ স্বাভাবিকতা ফিরে আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। ছাত্র গণঅভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর ছন্দ হারিয়ে ফেলা ট্রাফিক পুলিশ কাজে যোগ দিলেও রাস্তায় যান চলাচলে স্থবিরতা কাটেনি। বিভিন্ন পয়েন্টে দিনভর যানজট লেগে থাকার ঘটনা ঘটছে। যান চলাচলে অস্বাভাবিক যানজট পরিস্থিতির মাঝে নগর পুলিশ গ্রাম সিএনজি এবং ব্যাটারি চালিত রিকশার বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করে। ইতোমধ্যে এক হাজারেরও বেশি টেঙি ও রিকশা জব্দ করা হয়েছে। চলতি সপ্তাহে অভিযানের তীব্রতা আরো বাড়ানো হবে। অপরদিকে পুলিশ সদস্যদের মনোবল বাড়িয়ে ছন্দে ফিরিয়ে আনার জন্য আগামীকাল (শনিবার) পুলিশের আইজি চট্টগ্রাম আসছেন। তিনি হালিশহর পুলিশ লাইন মাঠে চট্টগ্রামের পুলিশ সদস্যদের সাথে মতবিনিময় করবেন।

সূত্র জানিয়েছে, ছাত্রগণঅভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর গত ৫ আগস্ট চট্টগ্রামে পুলিশি কার্যক্রম মূলতঃ বন্ধ হয়ে পড়ে। সরকারের পতনের সাথে সাথে থানাগুলোতে হামলা, ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ করা হয়। সিএমপির ১৬টি থানার মধ্যে প্রায় ১০টি থানা পরিণত হয় ধ্বংসস্তূপে। থানার আসবাব থেকে শুরু করে নথিপত্র পর্যন্ত সবই জ্বালিয়ে কিংবা লুট করে নিয়ে যাওয়া হয়। বিক্ষুব্ধ মানুষের হামলায় আহত হন অনেক পুলিশ সদস্য। পুলিশ সদস্যরা থানা ছেড়ে চলে গেলে সবগুলো থানা পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। কয়েকদিন পর থানাগুলোতে সীমিত পরিসরে কার্যক্রম শুরু হয়। সেনাবাহিনীর সহায়তা নিয়ে পুলিশ টহল কার্যক্রমও শুরু করে। একই সাথে রাস্তা ছেড়ে চলে যাওয়া ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা কাজে যোগ দেয়। ইতোমধ্যে নগরীর ছয় হাজারেরও বেশি পুলিশ সদস্যের প্রায় সকলেই কাজে যোগ দিয়েছেন। ইতোমধ্যে কমিশনারসহ বেশ কিছু শীর্ষ কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়। যোগ দেন নতুন কমিশনারসহ একাধিক কর্মকর্তা।

সূত্র বলেছে, পুলিশ সদস্যরা কাজে যোগ দিলেও তাদের মধ্যে স্বাভাবিক ছন্দ ফিরে আসেনি। রাস্তায় পুলিশ থাকলেও আগের মতো তৎপর নন। এতে করে নগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ছন্দহীন হয়ে পড়ে। মোড়ে মোড়ে তৈরি হয়েছে যানজট। যানজটে অস্থির হয়ে উঠছে মানুষ। নগরীর রাস্তাগুলোর বেহাল দশাও যানজটের অন্যতম কারণ হয়ে উঠেছে। একটি রাস্তায়ও স্বাভাবিক গাড়ি চলাচল নেই। খানাখন্দকে ভরে গেছে সবগুলো রাস্তা। যান চলাচলের বেহাল দশা থেকে রক্ষা করতে নগর পুলিশ অবৈধভাবে চলাচলকারী গ্রাম টেঙি এবং ব্যাটারি চালিত রিকশার বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে। গত কয়েকদিনে নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে এক হাজারেরও বেশি গ্রাম সিএনজি এবং ব্যাটারিচালিত রিকশা জব্দ করে ডাম্পিং ইয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

সিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মাসুদ আহাম্মদ গতকাল দৈনিক আজাদীকে জানান, যানজটের জন্য অবৈধভাবে চলাচলকারী গাড়িগুলো বহুলাংশে দায়ী। আমরা এগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছি। ইতোমধ্যে এক হাজারেরও বেশি গাড়ি জব্দ করেছি। এই সপ্তাহে আরো ব্যাপকভাবে গ্রাম সিএনজি এবং ব্যাটারিচালিত রিকশাসহ অবৈধভাবে চলাচলকারী গাড়িগুলো জব্দ করা হবে। এতে নগরীর যান চলাচলে প্রত্যাশিত গতি আসবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা রাস্তায় কাজ করছেন। আমরা চেষ্টা করছি। কিছু সমস্যা হয়তো আছে। যা অচিরেই চলে যাবে বলেও মাসুদ আহাম্মদ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

অপরদিকে পুলিশের মনোবল বাড়াতে আগামীকাল শনিবার সকালে চট্টগ্রাম আসছেন পুলিশের আইজি ময়নুল ইসলাম। তিনি হালিশহর পুলিশ লাইন মাঠে সর্বস্তরের পুলিশ সদস্যদের সাথে মতবিনিময় করবেন। পুলিশ সদস্যদের মনোবল চাঙ্গা করতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা এবং গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সিএমপির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। তারা বলেন, পুলিশের আইজির বক্তব্য এবং নির্দেশনা নিশ্চয়ই পুলিশ সদস্যদের চাঙ্গা করবে।

এই ব্যাপারে সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজ দৈনিক আজাদীকে জানান, আগামী শনিবার আইজি স্যার চট্টগ্রামে আসবেন। তিনি আরো আগে আসতে চেয়েছিলেন। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ কাজে আটকে যাওয়ায় ওইদিন সফর বাতিল করা হয়। শনিবারে চট্টগ্রামে এসে আইজি স্যার সর্বস্তরের পুলিশ সদস্যদের সাথে বৈঠক করবেন বলেও সিএমপির কমিশনার হাসিব আজিজ স্বীকার করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনওগাঁর সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালানোর সময় চট্টগ্রামের ছাত্রলীগ নেতা আটক
পরবর্তী নিবন্ধএস আলমের দুই ছেলের ‘অবৈধ’ সম্পদ বাজেয়াপ্তের আবেদন দুদকে