ফুটপাত দখল যেন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। প্রতিনিয়ত দখল চলছেই। নগরবাসীর অব্যাহত আপত্তি এবং সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) নিরন্তর অভিযান- এসব কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না দখলদারদের দৌরাত্ম্য। এমনও অভিযোগ আছে যে খোদ সিটি কর্পোরেশনের প্রশ্রয়ে ফুটপাত দখল করে নানা স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে।
নগরীর ব্যস্ততম এলাকাগুলোর অনেক জায়গায় সড়কের দুই পাশের ফুটপাত দখল করে বসানো হয়েছে দোকানপাট। কোথাও কোথাও ফুটপাত ছাড়িয়ে মূল সড়কের ওপর বসে গেছে পণ্যের পসরা। বেদখল সড়ক-ফুটপাতে পথ চলতে পথচারীর যন্ত্রণাময়-নাভিশ্বাস যেন নিত্যসঙ্গী। যে যার ইচ্ছামতো ফুটপাত ও রাস্তা দখল করে ব্যবহার করছে, কেউ আবার অনেক এলাকায় নির্মাণসামগ্রী মাসের পর মাস ফেলে রেখে সমস্যার সৃষ্টি করছে। ইট ভাঙার মেশিন, রড, ট্রাক, বাস, প্রাইভেট গাড়িসহ বিভিন্ন যানবাহনও এই সড়ক-মহাসড়কের একটা অংশ বন্ধ করে ফেলে রাখা হয়। শহরে যানজটের একটা বড় কারণ, এই যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং আর ফুটপাত দখল করে স্থায়ী-অস্থায়ী দোকান নির্মাণ। বছরের পর বছর এ রকম চললেও এগুলো দেখার যেন কেউ থাকে না। অবৈধভাবে ফুটপাত দখলে থাকায় চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন পথচারীরা। অনেক ক্ষেত্রে পথচারীদের বাধ্য হয়ে হাঁটতে হয় মূল সড়ক দিয়ে। যার ফলে অনেক সময় ঘটে যায় অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা।
দৈনিক আজাদীর ৩ মে প্রকাশিত ‘থেমে নেই ফুটপাত দখল’ শীর্ষক সংবাদে বলা হয়েছে, সপ্তাহ দুয়েক আগে থেকে স্টেশন রোডের ফুটপাতে সিটি কর্পোরেশন পরিচ্ছন্ন বিভাগের অফিস নির্মাণ শুরু করে। বিষয়টি নিয়ে চলছে নানা সমালোচনা। এ অবস্থায় কাজির দেউড়ি এলাকায় ফুটপাতে গত কয়েকদিন ধরে স্থাপনা নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। তবে এখানে কারা করছে সে সম্পর্কে অবগত নয় চসিক। গত রোববার বিকেলে সরেজমিনে দেখা গেছে, কাজির দেউড়ি থেকে নূর আহম্মদ সড়ক হয়ে সামান্য এগোলে হাতের বাঁ পাশে ফুটপাতের উপর লোহার ১১টি খুঁটি স্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে সাতটি লাল রঙের। এ সময় সেখানে কাউকে দেখা যায়নি। স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, দোকান করার জন্য খুঁটিগুলো স্থাপন করা হয়েছে। এক পথচারী আজাদীকে বলেন, পুরো শহরের বেশিরভাগ ফুটপাত দখল হয়ে আছে। হয়তো ভাসমান নয়তো দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে স্থায়ী দোকানপাট। আবার অনেক জায়গায় দোকানের সাথে লাগানো ফুটপাতগুলোতে দোকানের মালামাল রাখা হয়। ফলে বাধ্য হয়ে মূল সড়ক দিয়ে হাঁটতে হয় পথচারীদের। এতে প্রায় সময় দুর্ঘটনা ঘটছে। শহরের ফুটপাতগুলো উদ্ধারের পাশাপাশি কাজির দেউড়িতে নতুন করে যেন ফুটপাত দখল না হয় সে বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে সিটি কর্পোরেশনকে।
জনসাধারণের চলাচলের জন্য রাস্তার দু’পাশে যে ফুটপাত রয়েছে, তাতে হাঁটতে পারা পথচারীর নাগরিক অধিকার। কিন্তু ফুটপাতে হাঁটার সেই অধিকারও কেড়ে নিয়েছে অবৈধ দখলদার। যদিও এই ফুটপাত তৈরি হয় জনগণের নির্বিঘ্নে চলাচলের জন্য। অথচ কিছু মানুষ এই ফুটপাতের হাঁটার জায়গায় দোকান বসিয়ে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে কিছু প্রভাবশালীর সহযোগিতায়। প্রশাসনের নাগের ডগায় এসব পণ্যের পসরা সাজিয়ে কোনো রকম তোয়াক্কা না করেই ফুটপাত বন্ধ করে চলাচলে বাধা সৃষ্টি করছে। আমাদের ফুটপাত ও সড়ক দখল করে দোকান বসানো যেন একটি সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে হকারদের দখলে থাকা ফুটপাতে চলাচলে প্রতিবন্ধকতা।
ফুটপাত দখল ও জঞ্জালমুক্ত করার প্রতিশ্রুতি সিটি কর্পোরেশন থেকে অনেক বার দেয়া হয়েছে। কিন্তু সে প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হয়নি। বিগত সিটি নির্বাচনের সময়ও মেয়রসহ কাউন্সিলর প্রার্থীরা ফুটপাত হকারমুক্ত করার দৃঢ় অঙ্গীকার ঘোষণা করেছিলেন। কয়েক মাস অতিবাহিত হয়ে যাচ্ছে, ফুটপাত যেমন ছিল তেমনই আছে। নতুন করে দখল চলছে। এ ব্যাপারে তাদের অভিযানের কথা শোনা গেলেও কোনো সুফল দেখা যায়নি। অভিযোগ আছে, ফুটপাত একটি পক্ষের একটি মধুচক্র। এই মধুচক্রে রক্ষিত টাটকা মধুর লোভ সংবরণ করা কঠিন। প্রশাসনের লোকজন এ লোভ থেকে নিজেদের দূরে রাখতে পারেন না। ফুটপাত যেহেতু হেঁটে চলাচলের জন্যই। তাই পথচারীদের এই নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠা পাওয়া জরুরি। আমরা চাই দখলমুক্ত ফুটপাত। তারজন্য সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে কঠোর ও দ্রুত ভূমিকা গ্রহণ আবশ্যক।