নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে চাই ধারাবাহিক প্রচেষ্টা

| বৃহস্পতিবার , ২৬ মে, ২০২২ at ৬:১৪ পূর্বাহ্ণ

জলাবদ্ধতা চট্টগ্রাম শহরের প্রধানতম সমস্যা। বর্ষাকালে এই জলাবদ্ধতা নগরবাসীর জীবনমরণ সমস্যা হিসাবে দেখা দেয়। টানা বর্ষণ শুরু হলে শহরের অনেক এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। থমকে যায় মানুষের চলাচল। বললে অসত্য হবে না যে, জলাবদ্ধতার কারণে বর্ষা মৌসুম চট্টগ্রাম শহরের অধিবাসীদের কাছে কয়েক দশক ধরে এক ধরনের যন্ত্রণায় পরিণত হয়েছে। বলা যায়, বন্দরনগরী চট্টগ্রামের বাসিন্দাদের জন্য তা ইতোমধ্যে এক আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। একটু ভারী বৃষ্টি হলেই শহরের বেশিরভাগ রাস্তায় কোথাও হাঁটুজল, কোথাও কোমর সমান পানি জমে যায়। কোথাও কোথাও রীতিমতো সাগরে রূপ নেয়। অভিযোগ রয়েছে, বছরের পর বছর জলাবদ্ধতার এ সমস্যা থাকলেও এ থেকে মুক্তি মিলছে না। জনপ্রতিনিধিরা আসেন আর যান। অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। আশ্বাসও মেলে। কিন্তু বাস্তবে তার প্রতিফলন দেখা যায় না! যদিও জলাবদ্ধতার যন্ত্রণা থেকে নগরবাসীকে মুক্তি দিতে শত শত কোটি টাকা ব্যয়ে বহু প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

এবার যে প্রচেষ্টা নেওয়া হচ্ছে, তাতে নগরীর জলাবদ্ধতা কিছুটা কমবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। দৈনিক আজাদীতে গত ২৪ মে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, আগামী মাসেই চালু হচ্ছে দশটি স্লুইচ গেট। নেদারল্যান্ডস থেকে গেট এনে স্থাপন করা হচ্ছে নগরীর মহেশখালসহ দশটি খালে। এরমধ্যে পাঁচটি গেট বিশেষ ধরনের মরিচা প্রতিরোধী মেটালে তৈরি, অপর পাঁচটি সাধারণ লোহায়। স্লুইচ গেটগুলো পুরোদমে চালু হলে নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনের লক্ষ্যে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের দুইটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এরমধ্যে পাঁচ হাজার ছয়শ কোটিরও বেশি টাকা ব্যয়ে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সেনাবাহিনী। অপরদিকে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার কালুরঘাট থেকে শাহ আমানত সেতু পর্যন্ত সড়ক ও বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। সেনাবাহিনীর মেগা প্রকল্পে স্লুইচ গেট রয়েছে ৫টি, অপরদিকে সিডিএর বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পটিতে স্লুইচ গেট রয়েছে ১২টি।

সিডিএর চিফ ইঞ্জিনিয়ার কাজী হাসান বিন শামসের বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছে দৈনিক আজাদীর প্রতিবেদনে। তিনি বলেন, আগামী বর্ষায় নগরীর জলাবদ্ধতার ক্ষেত্রে পুরোপুরি সুফল না মিললেও বেশ ভালোই সুফল পাওয়া যাবে। বিশেষ করে স্লইচগেটগুলো চালু করা হলে বৃষ্টি এবং জোয়ারের পানি একই সাথে নগরীতে যেই ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করে তা ঠেকানো যাবে। স্লুইচগেটের সাহায্যে জোয়ারের পানি প্রবেশ ঠেকানো হবে। আর বৃষ্টির পানি শক্তিশালী পাম্প দিয়ে বের করে দেয়া হবে। এতে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় পানি ফুলে উঠার যেই প্রবণতা গত কয়েকবছর ধরে পরিলক্ষিত হচ্ছে তা কমে আসবে।

প্রায় একই সময়ে চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে নেওয়া হয়েছে একাধিক প্রকল্প। ব্যয় হচ্ছে ১০ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু এতো এতো ব্যয়ের পরও কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি প্রত্যক্ষ করছে না নগরবাসী। তাছাড়া এ সমস্যার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিভিন্ন খালে থাকা বাঁধ। শুধু তাই নয়, চট্টগ্রাম নগরীতে এখন নতুন আতঙ্কের নাম উন্মুক্ত নালা ও খাল। একটু ভারী বৃষ্টি হলেই কোনো রকম নিরাপত্তা বেষ্টনীবিহীন এসব নালা-খাল একাকার হয়ে যায় রাস্তার সঙ্গে। পরিণত হয় মৃত্যুফাঁদে। উল্লেখ করা দরকার যে, চট্টগ্রামে গত ৬ বছরে খাল ও নালায় পড়ে মৃত্যু হয়েছে ৯ জনের, যাদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীসহ পাঁচজনই মারা গেছেন এ বছর।

একজনেরও লাশ মেলেনি। আরও দুঃখজনক হলো, গত বছরের অক্টোবরে নগরের এসব ঝুঁকিপূর্ণ খাল-নালা সিটি করপোরেশন চিহ্নিত করলেও এখনও নগরবাসীর জন্য নিরাপদ করতে পারেনি।

আজাদীর খবরে প্রকাশ, আগামী মাসের মধ্যে যেই দশটি স্লুইচ গেট চালু করা হচ্ছে সেগুলোতে পাম্পও স্থাপন করা হবে। বর্ষায় এসব পাম্প ব্যবহার করা হবে। যা নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। আসলে চট্টগ্রাম মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন নিয়ে পত্রপত্রিকায় লেখালেখি কম হয়নি। সরকারের নানামুখী উদ্যোগ আছে। কিন্তু তার যথাযথ প্রতিফলন নেই, প্রকল্পের বাস্তবায়ন হচ্ছে ধীর গতিতে। তবু নগরবাসী মনে করেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে