নগরীতে ভবন নির্মাণে ছাড় দেয়া ভূমি নিয়ে গোঁজামিল

সিডিএর প্ল্যান পাশের পর কাজ শেষে জায়গাটি পুনরায় দখলে নিয়ে নিচ্ছে এতে প্রশস্ত হচ্ছে না সড়ক, উল্টো অলিগলিতে চলাচলে দুর্ভোগ

হাসান আকবর | মঙ্গলবার , ২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ at ৫:৩৮ পূর্বাহ্ণ

নগরীর সরু সড়কগুলোকে অন্তত বিশ ফুট প্রশস্ত এবং এলোমেলো নগরায়ন ঠেকাতে সড়কের প্রশস্ততার উপর ভবনের উচ্চতা নির্ধারণের প্রচলিত নিয়ম রয়েছে বন্দর নগরীতে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান বা ডিএপি বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করে। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে চলে আসা এই নিয়মে সিডিএর প্ল্যান পাশের জন্য ছাড় দেয়া ভূমি ভবন নির্মাণের পর পুনরায় দখলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা বাড়ছে উদ্বেগজনক হারে। টিনের ঘেরা দিয়ে প্ল্যান পাশ করানো হয়, নির্মাণ কাজও শুরু করা হয়। পরবর্তীতে জায়গাটি আবারো বাউন্ডারির মধ্যে নিয়ে নেয়া হয়। জায়গাটিতে বাগান করে উন্মুক্ত রাখার কথা থাকলেও কোথাও কোথাও দোকান নির্মাণের মতোও ঘটনা ঘটছে। সিডিএ বলেছে, এই ধরনের কার্যক্রমের বিরুদ্ধে শ্রীঘ্রই অভিযান শুরু করা হবে।সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী শূন্য থেকে ২.৫ মিটারের কম প্রশস্ত সড়কের পাশে সর্বোচ্চ তিনতলা পর্যন্ত ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া হবে। ২.৫ মিটার থেকে ৩.৬৫ মিটার সড়কের পাশে ৫ থেকে ৬ তলা পর্যন্ত ভবন করা যাবে। আর ৩.৬৫ মিটার বা তার বেশি প্রশস্ত সড়কের পাশে আরও বেশি উচ্চতার ভবন অনুমোদন পাবে।

শুধু উচ্চতার সীমা নয়, রাস্তার জন্যও জমি ছেড়ে দেওয়ার শর্ত রয়েছে। ৬ মিটারের কম সড়কের পাশে ভবন তুলতে হলে ভূমি মালিককে রাস্তার জন্য প্রয়োজনীয় জমির অর্ধেক ছেড়ে দিতে হবে। ওই জমি সিডিএর নামে রেজিস্ট্রি করতে হবে এবং কতটুকু জমি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে তা ভবনের সামনে সাইনবোর্ডে উল্লেখ করতে হবে। অর্থাৎ বিশ ফুটের কম প্রশস্ত কোন রাস্তার পাশে ভবন তুলতে হলে রাস্তা বিশ ফুট করার জন্য প্রয়োজনীয় ভূমির অর্ধেক একপাশের ভবন মালিককে এবং বাকি অর্ধেক বিপরীত পাশের ভবন মালিক ভবন করার সময় ছাড়তে হবে।

এই নিয়মে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় সড়কের পাশে ভবন নির্মাণ করার সময় জমি ছেড়ে টিনের ঘেরা দিয়ে সিডিএতে ছবি জমা দিয়ে প্ল্যান পাশ করানো হয়। প্ল্যান পাশের পর টিনের ঘেরার ভিতরে ভবন নির্মাণের কাজও শুরু করা হয়। কাজ শেষে ছাড় দেয়া জায়গাটি পুনরায় বাউন্ডারির ভিতরে নিয়ে নেয়ার ঘটনা ঘটছে। এতে করে সড়ক প্রশস্ত করার সিডিএ’র যে উদ্যোগ তা মাঠে মারা পড়ছে বলেও সূত্রগুলো মন্তব্য করেছে।

নগরীর বিভিন্ন এলাকায় রাস্তার পাশে ভবন নির্মাণে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এমন ঘটনা ঘটছে। জামাল খান এলাকায় একটি বহুতল ভবনের সামনের ছাড় দেয়া জায়গায় দোকানঘর নির্মাণ করতে দেখা গেছে। নগরীর বাদশা মিয়া সড়কে একাধিক বহুতল ভবন নির্মিত হচ্ছে। এসব ভবনের ক্ষেত্রেও সারেন্ডারড ল্যান্ড নিয়ে গোঁজামিল চলছে। শুধু জামাল খান বা বাদশা মিয়া সড়কেই নয়, নগরীর বিভিন্ন এলাকায় এই ধরণের ঘটনা ঘটছে। কঠোরভাবে মনিটরিং না করায় ভবন মালিকেরা ছাড় দেয়া জায়গা পুনরায় দখলে নিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ করে সূত্র বলেছে যে, এতে সড়ক প্রশস্ত হচ্ছে না, উল্টো অলিগলিতে বহুতল ভবনের বাসিন্দাদের চাপে সড়কে চলাচল করা দায় হয়ে পড়ছে। ঘনবসতিপূর্ণ বহু এলাকাতেই বহুতল ভবনের বাসিন্দাদের চাপে অতি ঘনবসতিপূর্ণ হয়ে উঠছে। যা রাস্তায় চলাচলের পাশাপাশি অন্যান্য নাগরিক সুবিধায়ও মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

বিষয়টি নিয়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামসের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টিকে আমরা খুবই কঠোরভাবে মনিটরিং করছি। বিশেষ করে বর্তমানে যেসব ভবন নির্মাণের কাজ চলছে সেগুলোকে আমরা মনিটরিংয়ের আওতায় রেখেছি। কোথাও যেনো আইন লঙ্ঘন করে সারেন্ডারড ল্যান্ড ( ছাড় দেয়া ভূমি) বা দুইপাশে বা পেছনের খালি জায়গা না রাখে তাহলে তাদেরকে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই আমাদের ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত চলছে। এগুলো ঠিকঠাকভাবে শেষ করার পর আমরা যেসব ভবন ইতোমধ্যে নির্মিত হয়েছে এবং ছাড় দেয়া জমি বাউন্ডারিতে ঢুকিয়ে নিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করা হবে।

তিনি বলেন, সারেন্ডারড ল্যান্ডের ব্যাপারে আমরা খুবই সতর্ক রয়েছি। এজন্য ১০ তলা থেকে উঁচু ভবনের ক্ষেত্রে আমরা শুরুতে প্ল্যান দিচ্ছি না, একটি ড্রাফট প্ল্যান দিচ্ছি। ওই ভবনের গ্রেট বীম নির্মাণের পর সিডিএর লোকজন পরিদর্শন করে সব ঠিক আছে মর্মে রিপোর্ট প্রদান করার পরই কেবল ফাইন্যাল প্ল্যান দেয়া হচ্ছে। নির্মাণে কোনো ধরণের ব্যতিক্রম থাকলে বা সারেন্ডারড ল্যান্ড না ছাড়লে ফাইন্যাল প্ল্যান দেয়া হচ্ছে না। তবে ১০ তলার নিচের ভবনগুলো আগের মতো প্রথমেই ফাইন্যাল প্ল্যান দেয়া হচ্ছে। তিনি এফএআর অনুসরণ না করে ভবন নির্মাণ করলে পরবর্তীতে বেকায়দায় পড়তে হবে বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। তিনি বলেন, আমাদের চেয়ারম্যান মহোদয় বিষয়টিকে খুবই গুরুত্বের সাথে নিয়েছেন। পরিকল্পিত নগরায়নের ব্যাপারে কোন ধরণের আপোষ করা হবে না বলেও চেয়ারম্যান সাহেব আমাদেরকে সতর্ক করে দিয়েছেন। তিনি এই ব্যাপারে প্রচুর সময় এবং পরিশ্রম করছেন বলে উল্লেখ করে কাজী হাসান বিন শামস বলেন, শহরের ১২ ফুট প্রশস্ত সরু রাস্তাগুলোর প্রতিটিকে বিশ ফুটে উন্নীত করে একটি বাসযোগ্য শহর গড়ে তোলার জন্য সিডিএ কাজ করছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

সিডিএ চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ নুরুল করিম দৈনিক আজাদীকে বলেন, সারেন্ডারড ল্যান্ডের ব্যাপারে আমরা কোন ধরণের আপোষ করবো না। আমাদের সাথে চুক্তি করে সারেন্ডারড ল্যান্ড সিডিএ’র নামে প্রদান করতে হবে। এই জমি আমরা সিডিএ’র নামে নামজারি করিয়ে নেয়ার পাশাপাশি ডাটাবেসে সংরক্ষণেরও উদ্যোগ নিয়েছি। তিনি বলেন, এই নগর আমাদের সবার। নগরীকে বাসযোগ্য রাখার দায়িত্ব আমাদের সকলের। আমরা আমাদের অবস্থান থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি বলেও সিডিএ চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ নুরুল করিম উল্লেখ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধস্কুলে যাওয়ার পথে কাভার্ডভ্যানের ধাক্কা, শিক্ষার্থীর মৃত্যু
পরবর্তী নিবন্ধভোটে জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটুক : জ্যাকবসন