নগরীতে ফের অপরাধে জড়াচ্ছে হামকা গ্রুপ

ভাগ হয়ে কাজ, পাল্টেছে কৌশল

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ১৬ জুলাই, ২০২২ at ৬:৩১ পূর্বাহ্ণ

দেড় দশক আগে নগরী দাপিয়ে বেড়ানো দুর্ধর্ষ ছিনতাইকারী দল ‘হামকা গ্রুপের’ সদস্যরাই ঘুরে ফিরে নগরীতে ফের বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। ছিনতাইয়ের কৌশল বদলে, কয়েকটি উপগ্রুপে ভাগ হয়ে তারা নগর দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। তবে আগেকার মতোই ছিনতাইয়ের জন্য টার্গেট করা ব্যক্তিকে তারা বলছে ‘ধুর’। পুলিশকে বলছে ‘বিলা’। এভাবে সংকেতের মাধ্যমে তারা নিজেদের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদান করে। সাধারণত একদিন অথবা দুদিনে ২-৩টি ছিনতাইয়ের পর তারা চট্টগ্রাম শহর ছেড়ে পালিয়ে যায়। এদের বাড়ি রাজশাহী, গোপালগঞ্জ, নওগাঁ, নেত্রকোণাসহ বিভিন্ন জেলায়।
ছিনতাইয়ের পর তারা বাড়িতে অথবা চট্টগ্রাম ছেড়ে অন্য কোনো জেলায় চলে যায়। এক মাস পর আবার ফিরে আসে। আবার কয়েকটি ছিনতাই করে এক মাসের জন্য পালিয়ে যায়। তারা যেসব সিএনজি ট্যাক্সি ছিনতাইয়ের জন্য ব্যবহার করে সেগুলোর নম্বরপ্লেটের শেষের দুটি ডিজিট তারা টেপ দিয়ে অথবা মুছে আড়াল করে দেয়। এর ফলে সিএনজি ট্যাক্সি শনাক্ত করতে কষ্ট হয়। সাম্প্রতিক সময়ে গ্রেপ্তারকৃত হামকা গ্রুপের সদস্যরা এ তথ্য পুলিশকে জানিয়েছে অকপটে।
সিএমপির সহকারী পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) একেএম মহিউদ্দিন সেলিম হামকা গ্রুপ সম্পর্কে জানাজানির সময় ওসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এই নগরীতে। তিনি জানান, ২০০৬ সালে গোলাম সরওয়ার মিলন, নূরুল আলম, নান্টুসহ কয়েকজন মিলে হামকা গ্রুপ গঠন করেন। এর আগে তারা মোগলটুলি এলাকার দুর্ধর্ষ ছিনতাইকারী খোরশেদ, কানা মান্নানদের দলে ছিলেন। ২০০৭ ও ২০০৮ সালে চট্টগ্রামের মেধাবী ছাত্র শাওন, বিআরটিএ কর্মকর্তা প্রীতি রঞ্জন চাকমা, প্রবাসী রফিক, আইনজীবী দ্বীন মোহাম্মদসহ প্রায় ১১ জন সাইলেন্ট কিলিংয়ের শিকার হন। ২০১১ সালের ১৯ জুলাই হাটহাজারীতে একটি খুনের চেষ্টার ঘটনায় তিন ছিনতাইকারী ধরা পড়ে। তাদের স্বীকারোক্তিতে প্রথম হামকা গ্রুপের নাম প্রকাশ হয়। একের পর এক বের হয় এই হামকা গ্রুপের হাতে খুনের লোমহর্ষক তথ্য। প্রথমদিকে নান্টু নামে একজন হামকা গ্রুপের নেতৃত্বে ছিল।
তিনি আরো জানান, ২০১১ সালে নান্টুকে গ্রেপ্তারের পর মিলন নেতৃত্বে আসে। হামকা গ্রুপের সদস্যরা নির্জন স্থানে থেকে ছিনতাইয়ের জন্য টার্গেট করে। নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে ধরে গলায় গামছা পেঁচিয়ে খুন করে তার টাকাপয়সা, মোবাইল, মালামাল লুট করে লাশ ফেলে দিয়ে চলে যেত। নির্জন স্থানে লাশ পড়ে থাকায় পরিচয় এবং খুনির সন্ধান করতে পুলিশকে বেগ পেতে হতো। তবে অভিযানে হামকা গ্রুপের বেশ কয়েকজন সদস্য ধরা পড়ার পর তারা সম্প্রতি কৌশল পাল্টে ফেলে। এখন হামকা গ্রুপের সদস্যরা সিএনজি ট্যাঙির মাধ্যমে ব্যাগ টান দেওয়া, মলম পার্টি ও অজ্ঞান পার্টির মাধ্যমে ছিনতাইয়ে জড়িয়ে পড়ছে বলেও জানান তিনি।
হামকা গ্রুপের গ্রেপ্তারকৃত সদস্যদের থেকে জানা যায়, বর্তমানে নগরীতে এ ধরনের চারটি গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। সবাই হামকা গ্রুপ হিসেবে পরিচিত হলেও আলাদা আলাদা উপগ্রুপ এ চারটি। এর মধ্যে বায়েজিদ থানাধীন টেঙটাইল এলাকায় মানিক, আগ্রাবাদ চৌমুহনী এলাকায় শফিক ও সিইপিজেড এলাকায় রনি- তিনটি গ্রুপের নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছে। মাদকসেবী হওয়ায় মানিক, শফিক কিংবা রনির দলে যাদের জায়গা হয়নি, তারা নিজেরাই চতুর্থ একটি গ্রুপ গঠন করেছে, যেটির দলনেতা নুরুল আলম। তার বিরুদ্ধে নগরীর বিভিন্ন থানায় ১৫টি ছিনতাই ও ডাকাতির মামলা রয়েছে। সহকারী পুলিশ কমিশনার মহিউদ্দিন সেলিম বলেন, হামকা গ্রুপ ছিনতাইয়ের পাশাপাশি সাইলেন্ট কিলিং করে পুরো নগরীকে একসময় আতঙ্কের নগরীতে পরিণত করেছিল।
সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকজন হামকা গ্রুপের সদস্য ধরা পড়েছে। হামকা গ্রুপের তিন পেশাদার ছিনতাইকারী মো. ইউসুফ (৩২), ফরিদ (৩২) এবং আবুল খায়ের ভুট্টো (৩২) ধরা পড়েছে যারা এখন টানা পার্টি হিসেবে কাজ করে। তারা স্বীকারও করেছে হামকা গ্রুপের হয়ে একসময় পুরো নগরী দাপিয়ে বেড়াত। ইউসুফ ও ভুট্টো একবছর আগে জেল থেকে বেরিয়ে টানা পার্টি গড়ে তোলে। কয়েক মাস ধরে তারা ছিনতাইয়ে সক্রিয় হয়ে উঠে। সিএনজিতে চড়ে তারা চলন্ত রিকশা থেকে ব্যাগ টান দিয়ে নিয়ে যায়।
গত ২২ জুন হামকা গ্রুপের সদস্য হোসেন আবুল হাশেম, নিজামুদ্দিন ওরফে হামকা নিজাম, জাকির হোসেন ও আনোয়ার হোসেনকে গ্রেপ্তার করে হালিশহর থানা পুলিশ। মূলত সিএনজি ট্যাঙি চালানোর আড়ালে তারা ডাকাতি করে থাকে। হালিশহর এলাকায় ডাকাতির প্রস্তুতিকালে তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাদের নামে বিভিন্ন থানায় প্রায় ৪৫টি মামলা আছে।
৩০ এপ্রিল নগরীর চকবাজার থানা পুলিশের অভিযানে টিপ ছুরিসহ জুয়েল হোসেন (২৫), মো. সাকিব (২১) ও মো. সোহেল রানা (২৩) নামে তিন ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরাও হামকা গ্রুপের সদস্য বলে পুলিশ জানতে পারে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৩২ কোটি টাকার চামড়া বিক্রির টার্গেট
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে আক্রান্ত ৫৯ জন