নগরীতে তিন স্তরের নিরাপত্তা

ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র ৪১৬টি, সহিংসতা দমনে কঠোর ব্যবস্থা

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ২৭ জানুয়ারি, ২০২১ at ৬:৩০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) নির্বাচন আজ। নির্বাচন কমিশন ও পুলিশ প্রশাসন বলছে, অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য তারা প্রস্তুত। নির্বাচনে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
ভোটাররা যাতে নির্ভয়ে কেন্দ্রে গিয়ে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন এবং নিরাপদে ঘরে ফিরতে পারেন, সেই লক্ষ্যে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন রিটার্নিং অফিসার মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান। তিনি বলেন, সন্ত্রাস দমনসহ সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আর সিএমপি কমিশনার সালেহ্‌ মোহাম্মদ তানভীর বলেছেন, নিরাপত্তা সংক্রান্ত সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার পাশাপাশি ৩ প্লাটুন স্ট্রাইকিং ফোর্সসহ মোট ২৫ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
রিটার্নিং অফিসার বলেন, নির্বাচনে পুলিশের ৭ হাজার ৭৭২ জন সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। ২৫ প্লাটুন বিজিবি, র‌্যাবের ৪১টি দল আছে। এছাড়া মোবাইল টিম থাকবে ৪১০টি। স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকবে ১৪০টি দল। ভোটে প্রতিটি ওয়ার্ডে র‌্যাব ও পুলিশের একটি করে টিম দায়িত্ব পালন করবে। আনসারের প্রায় ৩ হাজার ৮০০ সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। ৬৯ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছেন। এর মধ্যে ৪১ ওয়ার্ডে ৪১ জন ভোটের দিন দায়িত্বে থাকবেন। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন ২০ জন।
ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের বিষয়ে হাসানুজ্জামান আজাদীকে বলেন, মোট কেন্দ্র ৭৩৫টি। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ৪১৬টি। সেগুলোতে ৮ জন পুলিশ ও ১০ জন আনসার সদস্য মিলিয়ে ১৮ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করবেন। সাধারণ কেন্দ্রগুলোতে পুলিশ থাকবে ৬ জন এবং আনসার ১০ জন। আগের চেয়ে বেশি পুলিশ-আনসার এবার ভোটকেন্দ্রে দিচ্ছি, যাতে ভোটগ্রহণে কোনো বাধা সৃষ্টি না হয়।
এদিকে গতকাল এক ব্রিফিংয়ে সিএমপি কমিশনার বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় চেকপোস্ট করেছি। এর ফলাফল আমরা পেয়েছি। চেকপোস্টের কারণে বলার মতো তেমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। তিনি বলেন, কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু আমরা যেরকম আশঙ্কা করেছিলাম তা রুখতে পেরেছি।
তিনি বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একাধিক মিটিং করেছি। বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় সভা করেছি। আমরা যে ঝুঁকিটা এসেস করেছি তা মোকাবিলায় আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। তিনি বলেন, আমরা ডানেও তাকাব না, বামেও তাকাব না। যে আইনশৃঙ্খলার জন্য থ্রেট হয়ে দাঁড়াবে তাকে কঠোরভাবে দমন করব। তিনি জানান, নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১৮ হাজার সদস্য কাজ করবেন। এছাড়া বিজিবিও কাজ করছে। আমাদের সদস্যরা ইতোমধ্যে কেন্দ্রে চলে গেছেন। প্রতিটি কেন্দ্রে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
৮০০ গাড়ি রিকুইজিশন : চসিক নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রায় ৮০০ গাড়ি রিকুইজিশন করা হয়েছে। ভোট কেন্দ্রগুলোতে নির্বাচনী সরঞ্জাম আনা-নেয়ার জন্য ২৫ জানুয়ারি রাতে এসব গণপরিবহন রিকুইজিশন করেছে সিএমপি। রিকুইজিশন করা গাড়ির মধ্যে রয়েছে বাস, মিনিবাস, হিউম্যান হলার, টেম্পো ও লেগুনা।
সিএমপির নগর বিশেষ শাখার সূত্র জানায়, যেকোনো নির্বাচন এলেই পুলিশের কাছে গণপরিবহনের চাহিদা অনেকটা বেড়ে যায়। চসিক নির্বাচনের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম নয়। রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যবহারের জন্য তাদের কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণ যানবাহন নেই। ব্যক্তি মালিকানাধীন যানবাহনই একমাত্র ভরসা।
পুলিশ বলছে, ভোট কেন্দ্রগুলোতে নির্বাচনী সরঞ্জাম আনা-নেয়ার জন্য প্রচুর যানবাহন প্রয়োজন হয়। তবে নারী, শিশু ও রোগী বহনকারী গাড়ি রিকুইজিশন করা হয়নি। যেসব গাড়ি রিকুইজিশন করা হয়েছে সেসব গাড়ির পেট্রোল খরচ দেয়া হবে। চালকদের খাবার খরচ দেয়া হবে। রিকুইজিশন করা গাড়ির কোনো ক্ষতি হলে ক্ষতিপূরণও দেয়া হবে।
সিএমপির বিশেষ শাখার উপ-কমিশনার আবদুল ওয়ারিশ আজাদীকে বলেন, আটশর মতো গণপরিবহন রিকুইজিশন করা হয়েছে। দামপাড়া পুলিশ লাইন, হালিশহর পুলিশ লাইন, জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ, জিমনেসিয়াম মাঠ, নাসিরাবাদ স্কুল ও আগ্রাবাদ স্কুলে রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যে এসব গণপরিবহনে করে ভোট কেন্দ্রগুলোতে নির্বাচনী সরঞ্জাম পৌঁছানো শুরু হয়েছে।
তিনি বলেন, ৭৩৫ ভোট কেন্দ্রের মধ্যে সিএমপি এলাকায় ৭২৩ ও হাটহাজারীতে ১২টি কেন্দ্রে ৮ থেকে ৯ হাজার পুলিশ ও আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। তারা যে কেন্দ্রগুলোতে যাবেন তার জন্যও অনেকগুলো যানবাহন প্রয়োজন; যা নগর পুলিশের হাতে নেই। আইন মেনে প্রয়োজনীয় সংখ্যক গণপরিবহন রিকুইজিশন করা হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাঁশখালীতে সড়ক দুর্ঘটনায় ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু
পরবর্তী নিবন্ধবিএনপির ৫৬ জন নেতাকর্মী আটক