নগরপিতা নয়, সেবক হয়ে পাশে থাকব

রেল স্টেশনে সংবর্ধনায় সিটি মেয়র শাহাদাত

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ৬ নভেম্বর, ২০২৪ at ৫:৪৮ পূর্বাহ্ণ

নগরপিতা নয়, সেবক হয়ে নগরবাসীর পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, সকল বর্ণ, ধর্ম, জাতির নাগরিক যারা চট্টগ্রাম শহরে বাস করছেন তাদের পাশে থেকে সেবক হিসেবে আমি কাজ করে যেতে চাই। সেবক হয়ে আমি ৭০ লক্ষ মানুষের পাশে থাকতে চাই। আমি আপনাদের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে নগরের পুরাতন রেল স্টেশনে অনুষ্ঠিত নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, আমি আপনাদেরই সন্তান। এই শহরটা শুধু আমার একার শহর নয়। এই শহর আমাদের সবার, ৭০ লক্ষ মানুষের। আসুন আমরা সবাই মিলে একযোগে একটি সুন্দর শহর গড়ে তুলি। এ শহর হবে ক্লিন সিটি, গ্রিন সিটি ও হেলদি সিটি। আমাকে একটু সময় দিন। যে কথা আমি দিয়েছিলাম, ইনশাআল্লাহ অক্ষরে অক্ষরে আমি সেটা পালন করব। আমি আপনাদের দোয়া ও ভালোবাসা চাই। আপনারা সবসময় আমার হৃদয়ের গভীরে আছেন।

গত রোববার চসিকের মেয়র পদে স্থানীয় সরকার বিভাগে শপথ নেন ডা. শাহাদাত। গতকাল চট্টগ্রামে আসেন তিনি। দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে চট্টগ্রাম রেল স্টেশনে পৌঁছুলে চসিকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাকে বরণ করে নেন। এ সময় হাজার হাজার মানুষ তাকে স্বাগত জানান। পরে ১২টা ৪১ মিনিটে পুরাতন রেল স্টেশনের সামনের মাঠে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হন তিনি। এ সময় জনসমুদ্রে রূপ নেয় সমাবেশস্থল। অবশ্য সকাল ১১টা থেকেই ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে দলে দলে বিভিন্ন ওয়ার্ড ও থানা থেকে বিএনপির নেতাকর্মীরা এসে জড়ো হন। অংশ নেন পেশাজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন নগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর। উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির শ্রম সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দীন। তবে নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ ও সদস্য সচিব নাজিমুর রহমানকে দেখা যায়নি।

ডা. শাহাদাত বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন, গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী, উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকার, এস এম ফজলুল হক ও আসলাম চৌধুরীসহ চট্টগ্রামের সকল বিএনপি নেতাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আমি আপনাদের ঋণ কখনো শোধ করতে পারব না।

তিনি বলেন, আজ নগরের ৪৩টি সাংগঠনিক ওয়ার্ড থেকে যারা এসেছেন, ঢাকায় বরণ করার জন্য যারা উপস্থিত হয়েছিলেন, আপনাদের ঋণ কীভাবে শোধ করব আমি জানি না। আমি গত ১৮ বছর মহানগরের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছি। আমি দেখেছি, গত ১৮ বছর আপনারা বিএনপির নেতাকর্মীরা ঘরে থাকতে পারেননি। পরিবারের খোঁজ নিতে পারেননি। আপনাদের বাচ্চাদের দুধ কেনার টাকা ছিল না, পরিবারের বাজার করার টাকা ছিল না। অর্ধাহারেঅনাহারে আপনারা দিন কাটিয়েছেন। এ অসহায়ত্ব আমি দেখেছি। তাই বলতে চাই, আপনাদের ঋণ আমি শোধ করতে পারব না।

তিনি বলেন, সারা বাংলাদেশে ৬০০এর অধিক বিএনপি নেতাকর্মী গুম হয়েছে। বিচারবহির্ভূত হত্যা হয়েছে। মানুষ অসংখ্য মামলানির্যাতনের শিকার হয়েছে। চট্টগ্রামসহ সারা দেশে এক লাখ মামলায় ৬০ লাখ মানুষ আসামি হয়েছে। তবু আপনারা একজনও বিএনপির আদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি। এটাই বিএনপির বড় পাওয়া।

শাহাদাত বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আইসিটি মামলা দিয়ে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছিল। তবুও গণমাধ্যম বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলার খবর তুলে ধরেছে। তাই গণমাধ্যমকে ধন্যবাদ জানাই।

আবুল হাশেম বক্কর বলেন, চট্টগ্রামে আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন ডা. শাহাদাত হোসেন। তিনি মেয়র হওয়ায় জনতার বিজয় হয়েছে, আইনের শাসনের বিজয় হয়েছে। জনতার মেয়র হিসেবে তিনি আমাদের মাঝে ফিরে এসেছেন। চট্টগ্রামকে গ্রিন, ক্লিন ও হেলদি সিটি হিসেবে গড়ে তুলতে তিনি সবার সহযোগিতা কামনা করেন।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শেষে মেয়র হযরত শাহ আমানত (.) ও বদর আউলিয়ার (.) মাজার জিয়ারত করেন। এরপর বিকালে লালদিঘির পাড় চসিক লাইব্রেরি ভবনের সম্মেলন কক্ষে কর্পোরেশনের কর্মকর্তাকর্মচারীদের সাথে মতবিনিময়, সংবাদ সম্মেলন এবং টাইগারপাস চসিক কার্যালয়ে মিলাদ মাহফিল ও মোনাজাতে অংশ নেন।

মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মো. কামরুল ইসলামের পরিচালনায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ মিয়া ভোলা, এম এ আজিজ, এস এম সাইফুল আলম, নিয়াজ মোহাম্মদ খান, শাহ আলম, ইয়াছিন চৌধুরী লিটন, আহ্বায়ক কমিটির সদস্য জয়নাল আবেদীন জিয়া, অধ্যাপক নুরুল আলম রাজু, এস এম আবুল ফয়েজ, আবুল হাসেম, ইসকান্দর মির্জা, মুজিবুল হক, মো. সালাউদ্দিন, গাজী সিরাজ উল্লাহ, আনোয়ার হোসেন লিপু, মামুনুল ইসলাম হুমায়ুন, মশিউল আলম স্বপন, মোশাররফ হোসেন ডিপটি, এম এ সবুর, মোহাম্মদ আজম, মো. ইসমাইল বালি, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক ও সিডিএর বোর্ড মেম্বার সাংবাদিক জাহিদুল করিম কচি, চবি শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. নসরুল কদির, দক্ষিণ জেলা বিএনপির এড. ইফতেখার হোসেন চৌধুরী মহসিন, মনজুর উদ্দিন চৌধুরী, নাজমুল মুস্তাফা আমিন, মুজিবুল হক চেয়ারম্যান, নগর যুবদলের সাবেক সভাপতি মোশাররফ হোসেন দিপ্তী, মহিলা দলের সভাপতি মনোয়ারা বেগম মনি, সাধারণ সম্পাদক জেলী চৌধুরী, হাজী বাবুল হক, আবদুস সাত্তার সেলিম, মো. সেকান্দর, আবদুল্লাহ আল হারুন, এম আই চৌধুরী মামুন, জাকির হোসেন, জসিম উদ্দিন জিয়া, মো. শাহাবুদ্দিন, আবদুল কাদের জসিম, নুর হোসাইন, গিয়াস উদ্দিন ভূইয়া, উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক সরোয়ার উদ্দিন সেলিম, মহানগর যুবদলের ফজলুল হক সুমন, এমদাদুল হক বাদশা, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক জিয়াউর রহমান জিয়া ও বিএনপি নেতা ইদ্রিস আলী।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকমলা ৩, ট্রাম্পও ৩!
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে বৃদ্ধের মৃত্যু