বকেয়া আদায়, অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন, ঝুঁকিপূর্ণ রাইজার পরীক্ষা নিয়ে নগরজুড়ে অ্যাকশনে নেমেছে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল)। ইতোমধ্যে গত ৬ সেপ্টেম্বর থেকে ১৪টি বিশেষ টিম লাগাতার কাজ করছে। গত কয়েকদিনে দুই হাজারের অধিক সংযোগ পরিদর্শন, ৮৮ জন গ্রাহকের সংযোগ বিচ্ছিন্নসহ কয়েক কোটি টাকার বকেয়া আদায় করেছে এসব টিমের সদস্যরা।
কেজিডিসিএল সূত্রে জানা যায়, আবাসিক, বাণিজ্যিক, শিল্পখাত মিলিয়ে চট্টগ্রাম গ্যাসের গ্রাহক রয়েছে ৬ লাখের বেশি। তন্মধ্যে আবাসিক গ্রাহক ৫ লাখ ৯৮ হাজারের কাছাকাছি। তাছাড়া শিল্প গ্রাহক রয়েছে ১১২৭, বাণিজ্যিক গ্রাহক ২৮৬২, ক্যাপটিভ পাওয়ার ১৯০, সিএনজি সংযোগ রয়েছে ৭০টি। সবমিলিয়ে চট্টগ্রামে প্রতিদিন গ্যাসের চাহিদা থাকে ৪৮০-৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এসব সংযোগের বিপরীতে রয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার রাইজার। ইতোমধ্যে ২০১৯ সালে সিডিএম (কার্বন ডেভেলপম্যান্ট ম্যানেজমেন্ট) প্রজেক্টের আওতায় ১ লাখ ৫ হাজার রাইজার পরীক্ষা করে কর্ণফুলী গ্যাস। এরমধ্যে গত বছরের ১৭ নভেম্বর নগরীর পাথরঘাটা এলাকায় গ্যাস লাইন বিস্ফোরণে ৮ জন নিহত ও ১০ জন আহত হওয়ার ঘটনা পরবর্তী রাইজার পরীক্ষার দাবি উঠে। তখন প্রায় এক হাজার রাইজার পরীক্ষা করে কেজিডিসিএল। এদিকে গত ৪ সেপ্টেম্বর নারায়নগঞ্জের মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় ৩১ জনের প্রাণ হারানোর ঘটনায় ঝুঁকিপূর্ণ রাইজার ও সারাদেশের গ্যাস পাইপলাইনগুলো নতুন করে পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেয় জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। এরই অংশ হিসেবে চট্টগ্রামে অবশিষ্ট ৩৯ হাজার রাইজার পরীক্ষা, অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও বকেয়া আদায়ের জন্য জেনারেল ম্যানেজার (ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিস) প্রকৌশলী সরওয়ার হোসেনকে প্রধান করে ১৪টি বিশেষ টিম গঠন করে কেজিডিসিএল।
সূত্রে জানা গেছে, গত ৬ সেপ্টেম্বর থেকে অভিযান চালিয়ে টিমের সদস্যরা গতকাল (২১ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত ২০৩০টি সংযোগ পরীক্ষা করা হয়েছে। তন্মধ্যে ১৯১১টি হচ্ছে আবাসিক সংযোগ। অভিযানে ৮৮টি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। তন্মধ্যে বকেয়া থাকায় ৩১টি এবং অবৈধ ৩২টি আবাসিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। অভিযানে অংশ নেওয়া টিমের সদস্যের সাথে কথা বলে জানা যায়, কালুরঘাটের চয়েজ ওয়াশিংকে ১৯ লাখ ৮৬ হাজার টাকা বকেয়া থাকায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। একইভাবে বোয়ালখালীর এসএ সল্টের এক কোটি ২৮ লাখ টাকা বকেয়া থাকায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে অভিযান টিম। একইভাবে ৩ কোটি ৭৩ লাখ টাকা বকেয়া থাকায় শিল্প গ্রাহক রিজেন্ট টেঙটাইলের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। অন্যদিকে বন্ধ হয়ে যাওয়া আমিন জুটমিলের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। প্রতিষ্ঠানটিতে কর্ণফুলী গ্যাসের পাওনা রয়েছে ৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা। দুই কোটি টাকার বেশি বকেয়া থাকায় রতনপুর স্টিলের ৪টি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে গেলে প্রতিষ্ঠানটি তাৎক্ষনিক এক কোটি ৭ লাখ টাকা পরিশোধ করে। অবশিষ্ট বকেয়া দুয়েকদিনের মধ্যে পরিশোধের আশ্বাসও দেয় প্রতিষ্ঠানটি। অন্যদিকে বেশ কয়েকবার তাগাদা দেওয়া সত্বেও ৪ কোটি টাকার বকেয়া পরিশোধ না করায় কাপ্তাই রাস্তার মাথা এলাকার সামান্তা সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশনের সংযোগ স্থায়ী বিচ্ছিন্ন করে কেজিডিসিএল। তাছাড়া ২১ সেপ্টেম্বর কর্ণফুলী পেপার মিলের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে গেলে বাধার মুখে পড়ে কর্ণফুলী গ্যাসের কর্মকর্তারা। সরকারি প্রতিষ্ঠানটিতে বকেয়া জমেছে প্রায় ৮২ কোটি টাকা। অভিযানে ৪৬টি জিআই রাইজার এবং ৩০টি এমএস রাইজার স্থানান্তর করা হয়। একইভাবে ৬৭টি রাইজার মেরামত করা হয়।
টিম লিডার ও কেজিডিসিএল এর জেনারেল ম্যানেজার (ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিস) প্রকৌশলী সরওয়ার হোসেন দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘চট্টগ্রামে ১ লাখ ৪৫ হাজার রাইজার রয়েছে। সিডিএম প্রজেক্টের মাধ্যমে এর আগে ১ লাখ ৫ হাজার রাইজার পরীক্ষা করা হয়েছে। ওই সময়ে ঝুঁকিপূর্ণ ৮ হাজার রাইজার মেরামত করা হয়েছে। তাছাড়া পাথরঘাটার ঘটনার পর আমাদের ১২টি টিম কাজ শুরু করে। করোনার প্রাদুর্ভাব শুরুর আগে প্রায় এক হাজার রাইজার পরীক্ষা করা হয়েছে। এখন অবশিষ্ট ৩৯ হাজার রাইজার পরীক্ষা করা হচ্ছে। এজন্য গত ৬ সেপ্টেম্বর থেকে ১৪টি টিম কাজ করছে।’
তিনি বলেন, ‘গত কয়েকদিন রাইজার পরীক্ষার পাশাপাশি বকেয়া আদায়ের জন্য সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। বকেয়া ও অবৈধ সংযোগ থাকায় আবাসিক, শিল্প মিলে ৮৮টি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে গিয়ে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান থেকে কয়েক কোটি টাকা বকেয়া আদায়ও হয়েছে। এটি আমাদের জন্য ইতিবাচক।’ ১৪টিমের অভিযান লাগাতার চলবে বলে জানান এ কর্মকর্তা।