নগর উন্নয়ন প্রকল্প দীর্ঘসূত্রতা কমাতে সমন্বয় সাধন জরুরি

| মঙ্গলবার , ১ আগস্ট, ২০২৩ at ৫:২৫ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী করপোরেশনের নির্বাচিত ৬ষ্ঠ পরিষদের ৩০তম সভায় সরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। গত ২৭ জুলাই অনুষ্ঠিত সভায় মেয়র বলেছেন, দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়া জনসংখ্যা আর জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের চাপে পিষ্ট চট্টগ্রামকে বসবাসের উপযোগী রাখতে প্রয়োজন সব সরকারি সংস্থার সমন্বয়। আমাদের সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। অন্য সরকারি সংস্থাগুলোকে সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন এলাকায় প্রকল্প গ্রহণ করতে হলে অনাপত্তিপত্র নিতে হবে। আমরা রাস্তা বানাব আর অন্য সংস্থা রাতের আঁধারে রাস্তা কেটে ফেলবে, এভাবে পরিকল্পিত চট্টগ্রাম গড়া সম্ভব নয়। তিনি বলেন, অবৈধ দখলবাজির কারণে ফুটপাথে মানুষ হাঁটতে পারে না। এমনকি একটি সংস্থা ফুটপাথ দখল করে চশমার দোকান, খাবারের দোকান বসিয়ে ফেলেছে। আমরা সকালে উচ্ছেদ করি, দখলদাররা সন্ধ্যায় আবার দোকান বসায়। সিএমপি কমিশনারকে বলেছি প্রতিটি থানা পুনরুদ্ধার করা ভূমি সংরক্ষণে মনিটরিং করলে সাফল্য আসবে। শহরে অবৈধ মোটররিকশা অনেক বেড়ে গেছে। এগুলো দুর্ঘটনা আর লোডশেডিং বাড়াচ্ছে, সড়কের গতি কমাচ্ছে। পুুলিশের উচিৎ কঠোর অভিযান চালিয়ে মোটর রিকশার অত্যাচার কমানো।

আসলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন সেবা প্রদানকারী সংস্থা। তাদের সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব আছে। নগন উন্নয়নে যথেষ্ট কার্যক্রম গ্রহণ করার সুযোগ আছে। কিন্তু সেবা সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয়হীনতার কারণে উন্নয়ন বাধাপ্রাপ্ত হয়। নগর উন্নয়নে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন পরিকল্পনা নিয়ে থাকে; পরিকল্পনার আওতায় সব সংস্থার সমন্বয়ের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করা উচিত। কিন্তু আমরা দেখছি, বিভিন্ন সংস্থা নগরকে ঘিরে পরিকল্পনা করছে। সমন্বয় নেই। একেক সংস্থা একেকভাবে কাজ করছে। এগুলো যদি সুষ্ঠু সমন্বয়ে আনা যায়, তাহলে নগর উন্নয়নে সমস্যা হবে না।

বিশ্লেষকরা বলেন, যে কোনো সময় যে কোনো রাস্তায় খোঁড়াখুঁড়ি, ম্যানহোলের ঢাকনা খোলা রাখা, নর্দমার ময়লাআবর্জনা বৃষ্টির পানিতে পড়ে রাস্তাজুড়ে উপচে পড়া, যত্রতত্র ময়লাআবর্জনার ঢিবি, খানাখন্দপূর্ণ প্রধান সড়ক যুগ যুগ ধরে এমনই দৃশ্যের সঙ্গে বসবাস এবং বেড়ে ওঠা নগরবাসীর। সহ্য ও ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে দিতে ক্লান্ত আজ বাসিন্দারা। অবস্থা এমন যে, একবার যে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি বা কাটাছেঁড়া হয়েছে, তার মেরামতে বছর গড়িয়ে যায়। মাসের পর মাস ধরে চলে নানা সংস্থার কথিত উন্নয়নের কাজ। মনে হয়, এসব কাজ চলবে অনন্তকাল ধরে। মানুষ দুর্ভোগ, যাতনা, যন্ত্রণা, কষ্ট যতই পোহাক, তাতে কিছু যায় আসে না সংশ্লিষ্টদের। আর এসব দেখার কোনো দায়ভারও যেন নেই তাদের। এই এক বিড়ম্বনা পোহাতে পোহাতে দিবসরজনী পার করেন নাগরিকরা। একই রাস্তা এক বছরে বারবার খোঁড়াখুঁড়ির নজির রয়েছে। আজ ওয়াসা, কাল টিঅ্যান্ডটি, পরশু বিদ্যুৎ, গ্যাস, তার পরদিন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল প্রভৃতি সংস্থা নির্বিকারভাবে কেটে চলছে রাস্তা, করছে খোঁড়াখুঁড়ি। উৎপাত আর আপদমুসিবতের মিশেলে তারা নিরন্তর একই কাজ করে যাচ্ছে। কারও সঙ্গে নেই কারও সমন্বয়; যে যার খেয়াল খুশিমতো যখন তখন খুঁড়ছে সড়ক। এর থেকে পরিত্রাণ বা নিস্তার নেই কারও। একই রাস্তা একবার ওয়াসা কেটে মাটি ভরাট করে, তো পরদিন আসে গ্যাস কর্তৃপক্ষ। এভাবে বিতিকিচ্ছিরি পরিস্থিতি চলে আসছে যুগ যুগ ধরে। নাগরিক স্বার্থে নগর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সেবা সংস্থাগুলোর সমন্বয় প্রয়োজন। এ জন্য আইন প্রণয়ন জরুরি।

বিশেষজ্ঞরা চট্টগ্রামের সব সেবা সংস্থাগুলোকে একই কাতারে সমন্বিতভাবে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন। তাঁরা বলেন, সব ধরনের ইগোর উর্ধ্বে উঠে ব্যক্তিস্বার্থ ত্যাগ করে দেশের স্বার্থ এবং মাটির স্বার্থকে গুরুত্ব দিলে উন্নয়ন অনেক বেশি ত্বরান্বিত হবে। সকল সংস্থাকে নিয়ে ও তাদের সাথে সমন্বয় সাধন করে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন অনেক বেশি কার্যকরী হবে। সেবা সংস্থাগুলোর মধ্যে দীর্ঘদিন অসুস্থ প্রতিযোগিতা আমরা দেখেছি। এই অসুস্থ প্রতিযোগিতার জন্য ১৬শ’ কিলোমিটার দীর্ঘ ড্রেন পরিষ্কারে কেউ কোনোদিন হাতই দেয়নি। জিজ্ঞেস করলে বলা হতো অমুক সংস্থা জলাবদ্ধতার কাজ করছে, তাই আমরা করবো না। সংস্থা থেকে সংস্থার আড়ি নেয়ার এই দুরবস্থা চট্টগ্রামের মানুষের দুর্ভোগ বাড়িয়েছে। তাঁরা মাস্টারপ্ল্যানের যথাযথ প্রয়োগ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে চট্টগ্রামকে একটি টেকসই মহানগরীতে পরিণত করার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান। উন্নয়ন প্রকল্প দীর্ঘসূত্রতা কমাতে সমন্বয় সাধন জরুরি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে