নগরীতে নকশা লঙ্ঘন করে গড়ে ওঠা ভবনের বিরুদ্ধে ক্রাশ প্রোগ্রাম শুরু করেছে সিডিএ। গতকাল নগরীর দুটি এলাকার ১২টি ভবনের নকশা বহির্ভূত অংশ অপসারণ এবং নির্মাণকারীদের বিপুল অর্থ জরিমানা করা হয়েছে। অভিযানকালে দুটি বহুতল ভবনের নকশা না দেখিয়ে মালিক গা ঢাকা দেওয়ায় ভবন দুটি সিলগালা করা হয়েছে। চলতি সপ্তাহে ৫০টি বহুতল ভবনের নকশা বহির্ভূত অংশ ভাঙার জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে। আগামী সপ্তাহগুলোতে এ ধরনের আরো ভবনের তালিকা তৈরি করে অভিযান চালানো হবে বলে সিডিএর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
সূত্রে জানা যায়, নগরে নকশা লঙ্ঘন করে গড়ে ওঠা ভবনের সংখ্যা ক্রমে বাড়ছে। প্রচলিত আইন–কানুনের তোয়াক্কা না করে শত শত বহুতল ভবন নির্মাণ হয়েছে শহরের বিভিন্ন এলাকায়। ৮ তলার অনুমোদন নিয়ে ১০ তলা, ১০ তলার অনুমোদন নিয়ে ১৩ তলা–এমন অসংখ্য ভবন রয়েছে। ফ্লোর ঠিক থাকা বহু ভবনেরই ফ্লোর স্পেস বাড়াতে নানা অনিয়ম করা হয়েছে। ক্ষমতার দাপট কিংবা দুর্নীতির মাধ্যমে সবকিছু জায়েজ করার চেষ্টা চলে আসছে বহুদিন ধরে। খাল দখল, নালা দখল কিংবা পাহাড় কেটে নির্মিত ভবনের সংখ্যাও কম নয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, চট্টগ্রাম নগরীতে বর্তমানে প্রায় দুই লাখ ভবন রয়েছে। এর মধ্যে পুরনো বহু ভবনের কোনো অনুমোদন নেই। অনুমোদন নেওয়া ভবনগুলোরও বড় একটি অংশ নির্মিত হয়েছে অনুমোদনের শর্ত ভঙ্গ করে। বিশেষ করে বহুতল ভবনের ক্ষেত্রে নকশা বহির্ভূত নির্মাণের হার উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) এসব অবৈধ নির্মাণ রোধে অবশেষে মাঠে নেমেছে। গতকাল নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১২টি ভবনের নকশা বহির্ভূত অংশ ভাঙার কাজ শুরু করেছে। সিডিএ জানিয়েছে, গতকাল নগরীর কোতোয়ালী থানাধীন নন্দনকানন ও আসকারদিঘি এলাকায় ১২টি নির্মাণাধীন ভবনের নকশা বহির্ভূত ব্যতিক্রমী অংশ উচ্ছেদ করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযানে নেতৃত্ব দেন সিডিএর স্পেশাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ) মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম ও অথরাইজড অফিসার–২ তানজিব হোসেন।
তানজিব হোসেন দৈনিক আজাদীকে জানান, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকালে অবৈধভাবে নির্মিত স্থাপনাসমূহের মালিক ও ডেভেলপারকে ১৬ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। অভিযান পরিচালনাকালে নকশা বহির্ভূত অংশ তৎক্ষণাৎ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া নির্মাণাধীন ভবনগুলোর অনুমোদিত নকশার ব্যতিক্রমী অংশ মালিক ও ডেভেলপার নিজ উদ্যোগে ভেঙে অপসারণ করবেন মর্মে অঙ্গীকারনামা আদায় করা হয়েছে। অভিযানকালে নকশা না দেখিয়ে মালিক পালিয়ে যাওয়ায় দুটি ভবনকে সিলগালা করে দেওয়া হয়। এসব ভবনের অনুমোদিত নকশা না দেখালে মামলা করা হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সিডিএর স্পেশাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম সামনের দিনগুলোতে চলমান থাকবে।
অভিযানে সহকারী অথরাইজড অফিসার মোহাম্মদ ওসমান ও মোহাম্মদ হামিদুল হক, ইমারত পরিদর্শক মোহাম্মদ তোফায়েল হোসেন, মোহাম্মদ আবু জাফর ইকবাল, মোহাম্মদ শাহদাত হোসাইন, গৌরাঙ্গ চন্দ্র পাল, বিমান বড়ুয়া, উচ্চমান সহকারী মোহাম্মদ সেলিম, অফিস সহায়ক মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন ও পেশকার ফয়েজ আহাম্মদ বাবুল অংশ নেন। সিএমপির দুই প্লাটুন পুলিশ অভিযানে যোগ দেয়।
চলতি সপ্তাহে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ৫০টি ভবনের অননুমোদিত অংশ ভেঙে ফেলা হবে বলে জানিয়ে সিডিএর একজন কর্মকর্তা আজাদীকে বলেন, শহরকে বাসযোগ্য করতে আমরা ক্রাশ প্রোগ্রাম হাতে নিয়েছি। নিয়ম ভেঙে নির্মিত কোনো ভবনই ছাড় পাবে না।
নগর পরিকল্পনাবিদদের মতে, এ ধরনের নির্মাণ শুধু নিরাপত্তার জন্য হুমকি নয়, ভবিষ্যতে দুর্যোগ পরিস্থিতিতে বড় ধরনের বিপর্যয়ের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দেয়। সিডিএর এই অভিযান নিয়মিত ও স্বচ্ছভাবে চলবে বলে আশা প্রকাশ করেন তারা।