কোতোয়ালী থানায় গ্রেপ্তার মেঘনা পেট্রোলিয়াম এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নওশাদ জামালকে চাঁদা না পেয়ে পুলিশে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তার স্ত্রী রিয়াজুল জান্নাত। সিএমপি কমিশনার বরাবরে লিখিত এক পত্রে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রাম নগরের সদস্য সচিব নিজাম উদ্দিনের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করেন তিনি। তার স্বামীকে শ্রমিক লীগ নেতা হিসেবে পুলিশে দেওয়া হলেও রিয়াজুল জান্নাতের দাবি, তার স্বামী জামায়াতে ইসলামীর রুকন এবং বাগমনিরাম দক্ষিণ সাংগঠনিক ওয়ার্ডের সেক্রেটারি। গতকাল শনিবার নগর পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ বরাবর চিঠি দেন গ্রেপ্তার নওশাদ জামালের স্ত্রী।
সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজ চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, আমি একটি চিঠি পেয়েছি। অভিযোগটি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।
অপরদিকে নিজাম উদ্দিন ফেসবুক পোস্টে পুরো বিষয়টিকে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বলে উল্লেখ করেছেন। এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটি নিজাম উদ্দিনের চট্টগ্রাম মহানগর সদস্য সচিবের পদ স্থগিত করে তাকে কারণ দর্শাতে বলেছে।
গত বৃহস্পতিবার নওশেদ জামালকে গ্রেপ্তার করেছে কোতোয়ালী থানা পুলিশ। পুলিশ বলছে, নওশেদ জাতীয় শ্রমিক লীগ নেতা এবং মেঘনা পেট্রোলিয়াম এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক। তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র–জনতার আন্দোলনে হামলা ও একজন সাবেক অধ্যক্ষকে গুরুতরভাবে আহত করার অভিযোগ রয়েছে।
তবে সিএমপি কমিশনারকে দেওয়া চিঠিতে রিয়াজুল জান্নাত উল্লেখ করেন, নওশেদ জামাল মেঘনা পেট্রোলিয়াম এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ও জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, কিছুদিন ধরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা পরিচয় দিয়ে নিজাম উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি তার স্বামীর কাছ থেকে দুই কোটি টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিলেন। চাঁদা না পেয়ে তার স্বামীকে ফাঁসানো হয়। রিয়াজুল জান্নাত চিঠিতে একটি ভিডিওর কথা উল্লেখ করেন। ৬ মিনিট ৫০ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে নিজাম উদ্দিনকে একটি কক্ষে বসে মুঠোফোনে কথা বলতে দেখা যায়। সেখানে একপর্যায়ে তিনি বলেন, ‘আরে ভাই শোনেন, পুলিশ পারে না যে এমন কিছু নাই…। আমি বলতে চাচ্ছি, আপনার যার প্রতি ক্ষোভ, যাদের প্রতি ক্ষোভ, ওই তিনজনকে হলেই তো হইছে…আপনি যদি চান ওই তিনজনকে…করে দিতে পারবে …দেশে থাকতে হবে, এটা মাথায় রাইখেন।’
এদিকে ঘটনার ব্যাপারে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন নিজাম উদ্দিন। এতে তিনি উল্লেখ করেন, তিনি চাঁদা চাননি। এছাড়া ওই নারীর উল্লিখিত ভিডিওটি পুরনো। পোস্টে তিনি উল্লেখ করেন, ভিডিওটি পতেঙ্গা থানা এলাকার, ইস্টার্ন ক্যাবলসের। ওখানের কয়েকজন শ্রমিককে অন্যায়ভাবে বের করে দেয়া হলে আমরা কয়েকজন সেখানে যাই। তাও ৪–৫ মাস আগের। অথচ ওই ব্যক্তি গ্রেপ্তার হয়েছেন মাত্র দুই দিন আগে কোতোয়ালী থানার একটি মামলায়। ভিডিওতে কোথাও ‘টাকা দাবির’ তথ্য না থাকার পরও এটিকে ‘চাঁদাবাজির’ তকমার ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে একটি চক্র। ওই ভিডিওকে কাটছাঁট ও বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমার মানহানি ও আমাকে সামাজিকভাবে হেয় করার অপচেষ্টা চলছে।
নিজাম উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, এটি একটি ষড়যন্ত্র। আমি ওসিকে বলেছি, নওশাদ আওয়ামী লীগ সংশ্লষ্ট হলে নওশেদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে, না হয় ছেড়ে দিতে। কিন্তু তারা এখন দাবি করছেন, আমি তাকে ধরিয়ে দিয়েছি। পুরো বিষয়টি ব্যাখা করার জন্য গত রাতে তিনি সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করে পরে আবার স্থগিত করেন।
এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটি গতকাল নিজাম উদ্দিনের সদস্য সচিবের পদ স্থগিত করে কেন তাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে না তিন কর্মদিবসের মধ্যে তার কারণ দর্শানোর চিঠি দিয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাংগঠনিক সম্পাদক মুঈনুল ইসলাম চিঠিতে স্বাক্ষর করেন।