‘আমরা গভীরভাবে শোকাহত এবং আমাদের চারপাশের সবকিছু হৃদয়বিদারক। তাই আমরা এ রাস্তায় আনন্দ ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ঠিক যেমনটি যুদ্ধের আগে ছিল’। কথাগুলো বলেছিলেন দক্ষিণ গাজায় ধ্বংসস্তূপের কাছে ইফতার আয়োজনকারী মালাক ফাদ্দা। তিনিই সম্মিলিত খাবারের আয়োজন করেছিলেন।
১৫ মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধের অবসান ঘটার পর শনিবার এভাবেই দক্ষিণ গাজায় ধ্বংসস্তূপের ওপর ইফতার করেন সেখানকার ক্ষতিগ্রস্তরা। রাফাহ শহরের একটি এলাকায় সূর্য অস্ত যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এমন পরিবেশে ইফতার করেন অনেক মানুষ। ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনিদের মধ্যে যুদ্ধের ফলে ওই এলাকায় হাতে গোনা কয়েকটি ভবন দাঁড়িয়ে আছে। সব বয়সের শত শত গাজার মানুষ সারাদিন রোজা শেষে ধ্বংসস্তূপের ফাঁকে টেবিল সাজিয়ে তাদের ইফতারের খাবারে অংশ নেন। খবর বাংলানিউজের।
উত্তরাঞ্চলীয় শহর বেইত লাহিয়ায় প্রায় ধসে পড়া ভবনের ধ্বংসাবশেষের মধ্যে সন্ধ্যার আলোয় অনেক লোক ইফতার করতে একত্র হয়েছিলেন। মোহাম্মদ আবু আল–জিদিয়ান বলেন, আমরা এখানে ধ্বংস এবং ধ্বংসস্তূপের মাঝে আছি এবং ব্যথা এবং ক্ষত সত্ত্বেও আমরা অবিচল আছি। আমরা আমাদের জমিতে ইফতার খাচ্ছি এবং আমরা এ জায়গা ছেড়ে যাব না।
এদিকে, দক্ষিণাঞ্চলীয় খান ইউনিস শহরে ভোর হওয়ার আগে যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকা আলোকিত করে সেহেরির খাওয়ার জন্য অনেককে ভিড় জমাতে দেখা গেছে। আগের দিন, তরুণরা ধ্বংসস্তূপের মাঝে রঙ–রঙের সাজসজ্জা করেন, বিক্রেতারা শিশুদের জন্য বেলুন এবং খেলনা প্রদর্শন করেন।
উত্তর গাজার ভয়াবহ ক্ষতিগ্রস্ত জাবালিয়া শিবিরের বাসিন্দা ওমর আল–মাধৌন বলেন, আমার বাচ্চারা মাঝে মাঝে আমার কাছে কাপড় এবং খাবার চায়, কিন্তু আমি তাদের খরচ জোগাতে পারি না কারণ আমি দেড় বছর ধরে কর্মহীন। তিনি বলেন, আমরা ধ্বংসের মাঝে বসে আছি, আমাদের জীবন কীভাবে পরিচালনা করব তা জানি না। আমরা আরও আশঙ্কা করছি যে যুদ্ধ আবার ফিরে আসবে, আরও ধ্বংস ডেকে আনবে।
এএফপির পরিসংখ্যান অনুসারে, গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়া ইসরায়েলের ওপর হামাসের আক্রমণে ১ হাজার ২১৮ জন নিহত হয়, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক। হামাস–নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলের প্রতিশোধমূলক অভিযানে গাজায় ৪৮ হাজার ৩৮৮ জন নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক। জাতিসংঘের মতে, হামাস–নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান নির্ভরযোগ্য।