ধোপাছড়ির হাতছানি

বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য, আছে লেক ও ঝরনা

চন্দনাইশ প্রতিনিধি | শনিবার , ১৫ জানুয়ারি, ২০২২ at ১১:১১ পূর্বাহ্ণ

পাহাড় পরিবেষ্টিত ও শঙ্খ নদীর কোল ঘেঁষে গড়ে ওঠা অরণ্যঘেরা একটি ইউনিয়ন ধোপাছড়ি। চন্দনাইশ উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভার মধ্যে ধোপাছড়িই সবচেয়ে বড় ইউনিয়ন। ১৪ হাজার ২৭৭ একর ভূমির এই ইউনিয়নে বাঙালিদের পাশাপাশি ত্রিপুরা, মারমা ও খেয়াং সম্প্রদায়ের মোট ১৫ হাজারের অধিক জনগণের শান্তিপূর্ণ বাস রয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব সীমারেখা দিয়ে বয়ে চলেছে শঙ্খ নদী। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা ধোপাছড়িতে রয়েছে বিশাল বনের সারি সারি বৃক্ষরাজি ও বন্যপ্রাণীর অবাধ বিচরণ। ফলে নৈসর্গিক সৌন্দর্য্যময় এই ধোপাছড়িকে ইতিমধ্যে সরকারিভাবে বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হয়েছে। প্রকৃতির অপরূপ শোভায় শোভিত ধোপাছড়ি প্রতিনিয়ত হাতছানি দিচ্ছে ভ্রমণপিপাসুদের।
চন্দনাইশ উপজেলার সমগ্র পূর্বাংশ জুড়ে ও সর্ব উত্তরে ধোপাছড়ি ইউনিয়নের অবস্থান। উপজেলা সদর থেকে দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার। ধোপাছড়ি ইউনিয়নটির পুরোটাই যেন প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা একটি বোটানিক্যাল গার্ডেন। প্রাকৃতিকভাবে এখানে সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য লেক, ঝর্ণা। আর পাহাড়ে রয়েছে হাজার প্রজাতির বিশাল বৃক্ষরাজি। বলা হয়ে থাকে বাংলাদেশের বৃহত্তম সেগুন বাগান এই ধোপাছড়িতেই রয়েছে। আর এসব বাগান রক্ষায় ধোপাছড়ি ইউনিয়নে বনবিভাগের ২টি বনবিট রয়েছে।
বনবিভাগ সূত্রে জানা যায়, এখানে রয়েছে ১৯২৬, ১৯৪২ এবং ১৯৬৩ সালে স্থাপিত সেগুন বাগান। বনে রয়েছে হরিণ, বানর, শিয়াল, বাঘডাস, মেছোবাঘ, বনমোরগসহ শতাধিক প্রজাতির বন্যপাখি। দেখা মেলে দুর্লভ প্রজাতির কালো ভালুক (এশিয়াটিক ব্যাকবিয়ার), বাঁশভালুক, মদন টাক পাখিসহ আরও কিছু বিরল প্রজাতির বন্যপ্রাণী। রয়েছে বিশাল বিশাল পেয়ারা, লেবু, আদা, কলা, বরই বাগান। এছাড়া ধোপাছড়ি খাল, গন্ডামারা, চাপাছড়ি, মাইনী, মংলা, চেকখানি এবং দোকানদা খাল এ ইউনিয়নের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করেছে দ্বিগুন। সন্ধ্যা বেলায় ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক ও জোনাকি পোকার আলোয় মুগ্ধ করে ভ্রমণ পিপাসুদের। এককথায় প্রকৃতি তার সমস্ত সৌন্দর্য অকৃপণভাবে ঢেলে দিয়েছে ধোপাছড়িতে।
ধোপাছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান মো. আবদুল আলিম বলেছেন, ধোপাছড়িতে ভ্রমণ পিপাসুদের আকর্ষণের সকল উপকরণ রয়েছে। সড়ক যোগাযোগের কারণে ধোপাছড়ি এতদিন পিছিয়ে ছিলো। বর্তমানে দুই দিক দিয়ে সড়ক যোগাযোগ সৃষ্টি করায় এখন অনায়াসেই ৪ চাকার যানবাহন ধোপাছড়িতে প্রবেশ করতে পারছে। আর কিছু অবকাঠামোগত উন্নয়ন সম্পন্ন হলেই পুরো ধোপাছড়ি ইউনিয়নকে পর্যটন স্পট হিসেবে গড়ে তোলার জন্য পদক্ষেপ নেয়া হবে। অথচ এক সময় ধোপাছড়িতে পৌঁছার একমাত্র পথই ছিল নদীপথ। এখনো শক্সখনদী পথে প্রতিদিন শত শত পর্যটক ধোপাছড়ির সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে আসছেন। পাহাড়, নদী ডিঙ্গিয়ে এক রোমাঞ্ছকর ভ্রমণ শেষে পৌঁছাতে হয় এখানে।
সংসদ সদস্য মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, স্বাধীনতা পরবর্তী কেউ ধোপাছড়ির সাথে সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেননি। বর্তমান সরকারের আমলে ধোপাছড়িকে বন্যপ্রাণী অভ্যরায়ণ্য ঘোষণা করা হয়েছে। পর্যটন স্পট হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ইতিমধ্যে দোহাজারী-মাস্টারঘোনা-চিরিংঘাটা-ধোপাছড়ি সড়কের জিরোবুক ছড়ার উপর প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ করে সড়ক পথে যোগাযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। তাছাড়া খানহাট-ধোপাছড়ি-বান্দরবান সড়কটি দিয়েও মানুষ এখন ধোপাছড়িতে প্রবেশ করতে পারছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআমদানিকারকদের মামলা নিষ্পত্তির নতুন উদ্যোগ
পরবর্তী নিবন্ধমমতাজ বেগম চৌধুরী