ধীরগতি নয়, গণপূর্তের আবাসন প্রকল্পে অগ্রগতি চাই

| সোমবার , ২৯ নভেম্বর, ২০২১ at ৮:০২ পূর্বাহ্ণ

‘সবার জন্য আবাসন’ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকারের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। বলা বাহুল্য, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের অন্যতম নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিল, দেশের সব মানুষের জন্য মাথা গোঁজার ঠাঁই নিশ্চিত করা। এ জন্য আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারেও এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছিল।
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের সেই বার্তায় দেশের জনগণ সাড়া দিয়েছে ভালোভাবেই। তাই টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ এখন কাজ করে চলেছে সেই জনপ্রত্যাশা পূরণে। এরই মাঝে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন যে, আগামী ১৫ বছরের মধ্যে দেশের কেউ আর গৃহহীন থাকবে না। জানা গেছে, শেখ হাসিনার সেই প্রতিশ্রুতি পূরণে তার নির্দেশে এখন সারাদেশে বাস্তবায়নাধীন রয়েছে একাধিক প্রকল্প। প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা বলছেন, সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া হলে ১৫ বছর নয়, আগামী এক দশকের মধ্যেই দেশের সব মানুষের বাসস্থান নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
জনগণকে দেওয়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এ অঙ্গীকার পূরণে তথা সবার জন্য বাসস্থান নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং এর অধীনস্থ সংস্থাসমূহ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বেসরকারি আবাসন কোম্পানিগুলোও নিজেদের মতো করে এই সেক্টরে অবদান রাখছে। ফ্ল্যাট ও জমি বিক্রি করে তারা জনগণের চাহিদা মেটাচ্ছে। জনগণের কল্যাণে আবাসন ব্যবসা পরিচালনা করছে।
রাজধানীর পাশাপাশি বিভাগীয় শহরগুলোকে আরো সুন্দরভাবে গড়ে তোলার জন্য বিশেষ কোনো পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে সরকার। কেননা এ সরকার সুষম উন্নয়নে বিশ্বাস করে। তবু কোথাও কোথাও সরকারি উদ্যোগে গৃহীত আবাসন প্রকল্পগুলো চলছে একেবারে ধীরগতিতে। কোথাও প্রাণের স্পন্দন নেই। গত ২৭ নভেম্বর দৈনিক আজাদীতে ‘গণপূর্তের ৪৭৭ কোটি টাকার আবাসন প্রকল্পে ধীরগতি’ শীর্ষক প্রকাশিত সংবাদে তা আরো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এতে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম শহরের ১৫টি পরিত্যক্ত বাড়িতে সরকারি আবাসিক ফ্ল্যাট ও ডরমেটরি নির্মাণ প্রকল্প চলছে ঢিমেতালে। তিন বছর মেয়াদ শেষে আরও তিন বছর সময় বাড়লেও ৬ বাড়িতে এখনো কাজই শুরু করতে পারেনি প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান গণপূর্ত মেনটেনেন্স বিভাগ। অবৈধ দখলসহ নানা বিপত্তিতে ক্রমেই পিছিয়ে পড়ছে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য প্রায় ৪৭৭ কোটি টাকায় নির্মাণাধীন ৫৭৬টি ফ্ল্যাট ও ডরমেটরি নির্মাণ কাজ। গণপূর্ত রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, পরিত্যক্ত বাড়িগুলোর কিছু সরকারি সংস্থা ব্যবহার করছে, কিছু অবৈধ দখলে আছে। সবগুলো বাড়ি এখনো খালি করা সম্ভব না হওয়ায় প্রকল্প বাস্তবায়ন ধীরে হচ্ছে। তাছাড়া করোনাকালে পর্যাপ্ত বরাদ্দ না পাওয়ার কারণেও ঠিকাদাররা কাজ এগিয়ে নিতে অনীহা দেখিয়েছেন।
এ কথা আজ বলা অত্যুক্তি হবে না যে বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ খাত হলো আবাসন শিল্প। আবাসন প্রকল্পের সঙ্গে বর্তমানে দেশে দুই থেকে আড়াইশ কোম্পানী জড়িত। বেসরকারিভাবে গড়ে ওঠা বিপুল সম্ভাবনার আবাসন শিল্প খাত জাতীয় অর্থনীতিতে ২১ শতাংশ অবদান রাখছে। বাংলাদেশের শিল্পখাতের ১৫ শতাংশ আয় হয় আবাসন খাত থেকে। বাংলাদেশের আবাসন শিল্পে ২০ লাখ মানুষ কর্মরত। প্রতিবছর এখাত থেকে ১৪ হাজার কোটি ডলার সমপরিমাণ অর্থ আয় হয়।
সিটি করপোরেশনের হিসাব ছাড়াই বলা যায়, নগরীতে প্রতিবছর যে হারে জনসংখ্যা বাড়ছে, সেই হারে আবাসন ব্যবস্থা গড়ে উঠছে না। রিহ্যাবের হিসাব অনুযায়ী প্রতিবছর কমপক্ষে ১ লাখ ফ্ল্যাট তৈরি হলে বর্ধিত জনসংখ্যার আবাসন সমস্যার সমাধান হতো। বাসস্থান সংকটে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে বাড়িভাড়া।

বর্তমানে আবাসন ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন শিল্পখাতে ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগের পরিমাণ কয়েক হাজার কোটি টাকা। প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিনিয়োগের পরিমাণও কম নয়। এসব খাতের ওপর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নির্ভরশীল প্রায় আড়াই কোটি মানুষ। এই বিপুল জনসংখ্যার অন্নসংস্থান হচ্ছে উল্লিখিত উন্নয়ন প্রকল্পগুলো থেকেই। বলা যায়, বেসরকারিভাবে আবাসন খাত বেশ সমৃদ্ধ হয়ে উঠছে। কিন্তু সরকারি প্রকল্পগুলোর দৈন্যদশায় উদ্বেগ প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্টরা। গণপূর্তের ৪৭৭ কোটি টাকার আবাসন প্রকল্পের বর্তমান অবস্থা নগরবাসীকে হতাশ করছে। যেসব বাড়ি সরকারি বিভিন্ন দপ্তর, কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের দখলে আছে, সেগুলোতে দখলদার উচ্ছেদ করতে না পারা দুঃখজনক। আশা করছি গণপূর্ত রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগ খুব শীঘ্রই প্রকল্পের উল্লেখ্যযোগ্য অগ্রগতির জন্য ব্যবস্থা নেবে। আবাসন খাতে বেসরকারি উদ্যোগ যেমন এগিয়ে যাচ্ছে সফলতার সঙ্গে, তেমনি সরকারি কর্মসূচিও প্রাণ পাক-সেই প্রত্যাশা আমাদের।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে