টানা বৃষ্টিতে ধসের শঙ্কায় ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের নিরাপদে সরে যেতে ৩৩ পাহাড়ে মাইকিং করেছে জেলা প্রশাসন। একইসাথে কাট্টলী, ফিরোজশাহ, মতিঝর্ণা, বাটালি হিল, রৌফাবাদ, আমিন জুট মিলস, ট্যাংকির পাহাড় এলাকায় অভিযান চালিয়েছে জেলা প্রশাসনের চার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। কাট্টলী, আগ্রাবাদ, বাকলিয়া ও চান্দগাঁও সার্কেলের সহকারি কমিশনার এসব অভিযান পরিচালনা করেন।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি বিভাগীয় কমিশনার এবিএম আজাদের নির্দেশে শুক্রবার সকাল থেকেই জেলা প্রশাসক চট্টগ্রাম মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেনের তত্ত্বাবধানে মহানগরীর চার সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি)রা ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়গুলোতে অভিযান চালিয়েছে। একইসাথে নগরীর অভ্যন্তরে ঝুঁকিপূর্ণ ১৭টি পাহাড় এবং বায়েজিদ-ফৌজদারহাট সিডিএ লিংক রোড এলাকায় করোনাকালীন সময়ে নতুন ঝুঁকিপূর্ণ ১৬টি পাহাড়ে মাইকিং কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
শুক্রবার দুপুর আড়াইটা থেকে কাট্টলী সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তৌহিদুল ইসলাম। আকবর শাহ থানাধীন ফিরোজ শাহ এলাকাস্থ ঝিল এলাকায় পাহাড়ের ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা থেকে লোকজনকে অপসারণ অভিযান পরিচালনা করেন। আকবর শাহ থানাধীন ফিরোজ শাহ এলাকাস্থ ঝিল এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয়।
অভিযানে, কাট্টলী সার্কেলের ফয়’স লেক সংলগ্ন ঝিল-১, ২ ও ৩ নং এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ি বসতি থেকে ১০০টির মতো পরিবারকে সরিয়ে নেওয়া হয়। এসব পরিবারের মধ্যে ৩০ টি পরিবারকে ফিরোজ শাহ পি-ব্লক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠানো হয়।
একই সময়ে লালখান বাজারস্থ মতিঝর্ণা-বাটালি হিল এলাকার ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ি এলাকা থেকে লোকজনকে সরিয়ে নিতে অভিযান পরিচালনা করেন বাকলিয়া সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশরাফুল হাসান এবং আগ্রাবাদ সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবদুস সামাদ শিকদার। এদিকে পাহাড় ধসের আশঙ্কা থাকায় ওইসব এলাকার ৫০টি পরিবার লালখান বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নেয়। আশ্রয়কেন্দ্রে তাদেরকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনা খাবার এবং খাদ্য সামগ্রী দেওয়া হয়।
অন্যদিকে চান্দগাও সার্কেলে পাহাড়ি এলাকা রৌফাবাদ, আমিন জুট মিলস এলাকা, ট্যাংকির পাহাড়, বন গবেষণা ইনিস্টিউট সংলগ্ন পাহাড়ি এলাকায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে লোকজনকে সরিয়ে নিতে অভিযান পরিচালনা করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) মামনুন আহমেদ অনীক।
কাট্টলী সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, দুই দিনের টানা বৃষ্টিতে নগরীতে পাহাড় ধসের আশঙ্কা থাকায় জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে অভিযান চালিয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় থেকে সরে যেতে মাইকিং করা হয়েছে। পাশাপাশি পাহাড় বসবাসকারী অনেক পরিবারকে নিরাপদে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
ফয়’স লেক ও আশেপাশের এলাকায় সরকারি পাহাড় দখল করে অবৈধ বসতি নির্মাণের অভিযোগ করে তিনি বলেন, ফয়’স লেক ও এর আশেপাশের প্রায় ৩৩৬ একর জমি লীজ নেয় কনকর্ড গ্রুপ। তাদের সাথে রেলওয়ের মধ্যে ২০০৪ সালে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনসহ একটি লীজ চুক্তি হয়েছিল। লীজ গ্রহীতা কনকর্ড গ্রুপ ও রেলওয়ের নজরদারির অভাবে ঝিল এলাকায় পাহাড়ি জমি কেটে অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা গড়ে তুলেছে ভূমিদস্যুরা। উভয়পক্ষের নজরদারির অভাবে প্রায় শতাধিক একর জায়গা বেদখল হয়েছে। ফয়’স লেককে ঘিরে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও বিনষ্ট হয়েছে।
তিনি বলেন, ওই এলাকায় পাহাড় কেটে গড়ে উঠেছে ঝিল-১, ঝিল-২, ঝিল-৩ এলাকা। ফয়’স লেক সী ওয়ার্ল্ডের পিছনে শান্তিনগর, মধ্যমনগর, জিয়ানগর এলাকা। সিটি কর্পোরেশন এর লেকসিটি আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়নেও বেশ কিছু পাহাড় কাটা হয়েছে। জয়ন্তিকা আবাসিক এলাকা বাস্তবায়ন করতেও পাহাড় কাটা হয়েছে। এসকল পাহাড় হচ্ছে এনজিওগুলোর প্রজেক্ট গ্রহণ ও বাস্তবায়নের স্বর্গরাজ্য। ব্র্যাক, জাইকা, ডিএফআইডি, ইউকে-এইড, ইউএস-এইড থেকে শুরু করে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন এনজিও সেখানে স্যানিটেশন, স্কুলিং প্রজেক্ট, বেবি ও মাদার হেলথ কেয়ার সহ বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে।