আন্তর্জাতিক ফুটবলের বিরতি শেষে মাঠে ফিরছে রেয়াল মাদ্রিদ। তার আগের নির্ধারিত সংবাদ সম্মেলন, সবই স্বাভাবিক ঘটনা; কিন্তু এবারের আবহ যেন অনেকটাই আলাদা। হাতে গোনা কয়েকটা চেয়ার ফাঁকামাত্র, কয়েকজনকে ফরাসি ভাষায় কথা বলতে শোনা গেল। এরপর, রেয়াল কোচ কার্লো আনচেলত্তি এসে বসতেই শুরু হলো একের পর এক প্রশ্ন। মোট ১৭টি প্রশ্ন করা হয়, যার মধ্যে ছয়টিই কিলিয়ান এমবাপের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে ওঠা তদন্ত নিয়ে।
রেয়ালের হয়ে খেলার সময় গত মাসে পেশির চোটে পড়েন এমবাপে। তবে যতটা সময় তাকে বাইরে থাকতে হবে বলে ধারণা করা হচ্ছিল, এর আগেই ফিরে আসেন তিনি। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ও লা লিগার ম্যাচে রেয়ালের হয়ে মাঠেও নামেন। অথচ ফ্রান্সের কোচ দিদিয়ে দেশম তাকে জাতীয় দলের বাইরে রাখেন। প্রস্তুতির ঘাটতি ও পুরোপুরি সেরে ওঠার জন্য সময় দিতে নেশন্স লিগে ইসরায়েল ও বেলজিয়ামের বিপক্ষে ম্যাচের স্কোয়াডে নিয়মিত অধিনায়ককে রাখেননি কোচ। কিন্তু ফরাসিরা বিষয়টিকে মোটেও স্বাভাবিকভাবে নেয়নি। দেশের প্রতি এমবাপের দায়বদ্ধতা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। এখন থেকে জাতীয় দলের হয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচগুলোয় খেলবেন বা বেছে বেছে ম্যাচ খেলবেন এমবাপে, এমন গুঞ্জনও চলছে। খবর বিডিনিউজের।
এর মধ্যেই সুইডিশ সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়, ইসরায়েলের সঙ্গে ফ্রান্সের ম্যাচের সময়টায় সুইডেনের এক নৈশক্লাবে দেখা গেছে এমবাপেকে। এতে যেন সমালোচনার আগুনে ঘি পড়ে আরও। তারপরও, সবকিছু এতটুকুতে শেষ হলেও চলতো। ঘটনা নতুন মোড় নেয়, এমবাপে সুইডেনে গিয়ে যে হোটেলে ছিলেন সেখানে ‘ঘটা এক ধর্ষণের খবর’ প্রকাশ হওয়ার পর। ওই ঘটনায় তাকে জড়িয়েও নানা খবর ছড়াতে থাকে। পরে এই বিষয়টি নিয়েই সংবাদ সম্মেলনে নানা প্রশ্ন করা হলো, শুরুতে বেশ ঠাণ্ডা মাথায় উত্তর দিলেন আনচেলত্তি। “এসব ধারণার বিষয়ে মন্তব্য করার জন্য আমি এখানে আসিনি। এখানে তার যে কাজ, সেই দিকেই আমি দৃষ্টি দেই এবং সেটা সে খুব ভালোভাবে করছে। (ওই ঘটনার সময়) তার ছুটি ছিল, নির্ধারিত ছুটি, এর বেশি কিছু নয়। বাইরে থেকে যেসব গুঞ্জন শোনা যায়, সেসবে আমি গুরুত্ব দেই না।”
এমবাপে অবশ্য শুরু থেকেই তার বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করছেন। তার দাবি, তিনি স্টকহোমে প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। সেই সময় সেখানে তিনি টেবিল টেনিস ছাড়াও বিভিন্ন বোর্ড গেমস খেলেন। ভোরের আগে তিনি বাইরেও যাননি এবং ওখানে এক রেস্তোরাঁয় রাতের খাবার খান। আর পুরো সময়ে তার সঙ্গে তার বন্ধুরা ছিল বলেও জানিয়েছেন এমবাপে। তার পরিবারের পক্ষ থেকেও গণমাধ্যমে এটাই বলা হয়েছে।
ছুটি পেয়ে এমবাপের সুইডেনে যাওয়ার বিষয়টি জানতেন কিনা এমন এক প্রশ্নের জবাবে কিছুটা বিরক্তি প্রকাশ করেন আনচেলত্তি। “ওই ছুটি তার জন্য নির্ধারিত ছিল এবং ছুটিতে কে কী করবে, সেটা তাদের ব্যাপার। খেলোয়াড়রা কোথায় গিয়ে বিশ্রাম নিচ্ছে, সেসব আমার দেখার বিষয় না। আমি দুই দিনের জন্য লন্ডনে গিয়েছিলাম এবং আমি কারো অনুমতি নেইনি। আর খেলোয়াড়দের ভ্রমণের ব্যবস্থা করার জন্য আমার কোনো এজেন্সিও নেই।”
সুইডেনের স্থানীয় একটি পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুয়ায়ী, গত বৃহস্পতিবার সেখানে একটি নারীর ওপর শারীরক নির্যাতন ও তাকে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের হয়েছে। সেটারই ‘সন্দেহের ভিত্তিতে’ এমবাপের বিরুদ্ধে তদন্ত করা হচ্ছে। স্কটহোমে এমবাপে যেই হোটেলে ছিলেন, সেখান থেকে তার ও তার বন্ধুদের বেশ কিছু কাপড় তদন্তের জন্য নিয়ে গেছে পুলিশ। পরে সুইডেনের প্রসিকিউটর নিশ্চিত করেন যে, ধর্ষণের অভিযোগে একটি তদন্ত শুরু হয়েছে; তবে তা এমবাপের বিরুদ্ধে কিনা সেটা তারা নিশ্চিত করেনি।