ধর্ষণবিরোধী মিছিলে বাধা, লাঠিচার্জ

নোয়াখালীর ঘটনা চরম বর্বরতা : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইউপি সদস্যসহ গ্রেপ্তার আরও ২, বন্ধ করা হচ্ছে ভিডিওর লিংক

আজাদী ডেস্ক | বুধবার , ৭ অক্টোবর, ২০২০ at ১০:৩৬ পূর্বাহ্ণ

ধর্ষণবিরোধী বিক্ষোভে গতকাল দিনভর উত্তাল ছিল রাজধানী ঢাকা। ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনে জড়িতদের শাস্তির দাবিতে বিভিন্ন স্থানে আয়োজিত হয়েছে গণজমায়েত, মানববন্ধন ও মশাল মিছিল। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে কালো পতাকা মিছিলও নেমেছিল রাজপথে। তবে এতে পুলিশ বাধা দেওয়ার পাশাপাশি আন্দোলনকারীদের ওপর লাঠিচার্জও করেছে। এসব বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে দাবি উঠেছে, ধর্ষকদের সর্বোচ্চ সাজা ও রায় দ্রুত কার্যকরের। এমনকি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি উঠেছে।
গতকাল মঙ্গলবার টানা দ্বিতীয় দিনের মতো রাজধানীর শাহবাগ মোড়, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, কাকরাইল মোড়, জাতীয় প্রেসক্লাব, জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজা, উত্তরাসহ বিভিন্ন স্থানে সমবেত হন আন্দোলনকারীরা। শাহবাগ মোড়ে ‘ধর্ষণের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’ ব্যানারে গণজমায়েত করে ছাত্র ইউনিয়ন, সমাতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টসহ প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলো। তাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন কবি, লেখক, ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টরা। খবর বাংলানিউজ ও বিডিনিউজের।
কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে কবি সৈকত আমিন বলেন, ধর্ষণ প্রতিহত করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। দেশে এমন ব্যর্থ মন্ত্রণালয়ে আমরা ব্যর্থ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চাই না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, এমন কোনো দেশ নেই যেখানে ধর্ষণ হয় না। তার যদি লজ্জা থাকত, তবে তিনি মন্ত্রণালয় থেকে বের হয়ে যেতেন। ‘ধর্ষণের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’ ব্যানারেই দুপুর সোয়া একটার দিকে শাহবাগ মোড় থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে কালো পতাকা মিছিল বের করা হয়। হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের বিপরীত পাশে মিছিল পৌঁছাতেই আন্দোলনকারীদের বাধা দেয় পুলিশ। এ সময় আন্দোলনকারীরা ব্যারিকেড ভেঙে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাইলে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। যাতে পাঁচজন আহত হয়েছেন বলে জানা যায়। কলাবাগান ছাত্র ইউনিয়নের সদস্য সাদিয়া ইমরোজ ইলা বলেন, পুলিশের লাঠিচার্জে মোহাম্মদপুর থানা ছাত্র ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন শুভ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক আসমানি আশাসহ পাঁচজন আহত হয়েছেন। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে সন্ধ্যায় শাহবাগ মোড় থেকে মশাল মিছিলও বের হয়। ধর্ষণের প্রতিবাদে এবং ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে সকাল থেকেই উত্তাল ছিল জাতীয় প্রেসক্লাব চত্বর। প্রেসক্লাবের সামনে নারী নিপীড়ন ও ধর্ষণের প্রতিবাদে গণধিক্কার ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে ‘অযোগ্য’ আখ্যা দিয়ে তার কুশপুত্তলিকা দাহ করে বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্র ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট। এছাড়া রাজধানীর উত্তরা, কাকরাইল ও সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় প্রতিবাদ সমাবেশ ও অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হয়।
ইউপি সদস্যসহ আরও দুইজন গ্রেপ্তার : নোয়াখালীতে বাড়িতে ঢুকে গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনায় এক ইউপি সদস্যসহ আরো দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তাররা হলেন পূর্ব একলাশপুর গ্রামের নোয়াব আলী বেপারী বাড়ির লোকমান হোসেনের ছেলে সাজু (২১) এবং জয়কৃষ্ণপুর গ্রামের মৃত গোলাম মোস্তফার ছেলে মোজাম্মেল হোসেন সোহাগ (৪৮), যিনি একলাশপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য।
বেগমগঞ্জ থানার ওসি হারুনুর রশিদ চৌধুরী জানান, সোমবার রাতে সাজুকে ঢাকার শাহবাগ থেকে এবং সোহাগকে তার বাড়ির এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে বেগমগঞ্জ থানা পুলিশ। সাজু নির্যাতনের ঘটনায় দায়ের করা মামলার ৫ নম্বর আসামি। আর আদালতে ভুক্তভোগীর দেওয়া জবানবন্দিতে সোহাগের নাম আসায় তাকেও এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে বলে জানান ওসি। এ মামলায় এ নিয়ে মোট ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হল।
বর্বরতার চরম সীমা দেখলাম : নোয়াখালীতে গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের পর সেই ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় ‘বর্বরতার চরম সীমা’ দেখতে পাচ্ছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। তিনি বলেছেন, জঘন্য ওই অপরাধে যারা যুক্ত, আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তিই তাদের হবে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিজের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ বিষয়ে কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সামপ্রতিক সময়ে দেশে ধর্ষণ-নিপীড়নের ঘটনা বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মন্ত্রী বলেন, নোয়াখালীতে যেটা ঘটল, বর্বরতার একটা চরম সীমা আমরা দেখলাম। একজন বিবেকবান মানুষ এ ধরনের কাজ করতে পারে বলে আমার কাছে মনে হয় না। তিনি এ ধরনের জঘন্য অপরাধের জন্য কঠিন শাস্তি হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন।
ভিডিও লিংক খুঁজে খুঁজে বন্ধ করা হচ্ছে : উচ্চ আদালতের নির্দেশনার পর নোয়াখালীর ওই গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে অপসারণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন-বিটিআরসি। গতকাল বিটিআরসি চেয়ারম্যান জহুরুল হক বলেন, আদালতের নির্দেশনা হাতে না পেলেও গণমাধ্যমের প্রকাশিত সংবাদ দেখামাত্র এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা শুরু হয়েছে। আজ (গতকাল) দুপুর নাগাদ ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া এ ভিডিওর ১৭ থেকে ১৮টি লিংক বন্ধ করা হয়েছে। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া খুব দ্রুত এ লিংক বন্ধ করা সম্ভব হবে না।
ব্যক্তিগত অডিও-ভিডিও ফাঁস বন্ধ করতে আইন সংশোধন হচ্ছে : এর আগে গত সোমবার ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ফোনালাপের অডিও কিংবা ভিডিও ফাঁস রোধ করে মানুষের ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষা দিতে এই সংক্রান্ত আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। আনুষ্ঠানিক প্রয়োজন ছাড়া এবং গ্রাহকের অজান্তে তার ফোনের কল রেকর্ড সংগ্রহ ও প্রকাশ বন্ধে হাই কোর্ট জোর দেওয়ার প্রেক্ষাপটে তিনি গণমাধ্যমকে এসব কথা বলেন। মন্ত্রী বলেন, মোবাইল ফোনে অডিও-ভিডিও রেকর্ড করে তা ফাঁস করার মতো অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করতে আইনের একটি ধারা সংশোধন করা হচ্ছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ডাটা প্রাইভেসি রক্ষার বিষয়টি একটি ধারা সংযুক্ত করে সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচাকরির দেওয়ার নামে আটকে রেখে দেহ ব্যবসা
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬