বৃহত্তর চট্টগ্রামের ৫ জেলায় পরিবহন ধর্মঘট চলাকালে গতকাল ভোগান্তিতে পড়েন রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও কক্সবাজারের মানুষ। কোথাও ছাড়েনি দূরপাল্লার গাড়ি। সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার কারণে মানুষের দুর্ভোগ বাড়ে। তীব্র গরম সেই দুর্ভোগ আরো বাড়িয়ে দেয়। অবশ্য দিনভর দুর্ভোগের পর গতকাল বিকালে ৪৮ ঘণ্টার এই ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়েছে।
রাঙামাটি থেকেও ছেড়ে যায়নি বাস : রাঙামাটি প্রতিনিধি জানান, ধর্মঘটের কারণে রাঙামাটি–চট্টগ্রাম, রাঙামাটি–খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি–বান্দরবানসহ অভ্যন্তরীণ কোনো রুটে কাউন্টার থেকে বাস ছেড়ে যায়নি। সকাল থেকে সব রুটের বাস কাউন্টারগুলো বন্ধ ছিল। এছাড়া সকালে বিআরটিসি বাস চট্টগ্রাম থেকে রাঙামাটি এলেও রাঙামাটি থেকে বিআরটিসির কোনো বাস ছাড়েনি। এতে করে দুর্ভোগে পড়েন রাঙামাটির বিভিন্ন উপজেলা থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার উদ্দেশ্যে আসা যাত্রীরা এবং রাঙামাটি–চট্টগ্রামসহ খাগড়াছড়ি বান্দরবানের যাত্রীরা।
তবে এতে বাড়তি ভাড়া গুণে সিএনজি টেক্সিযোগে রাঙামাটি থেকে অনেকে রানীরহাট ও চট্টগ্রাম পর্যন্ত যান। সিএনজি চালক রাকিব জানান, বাস চলছে না, তাই টেক্সি রানীরহাট পর্যন্ত ভাড়া নিয়ে যাচ্ছি।
জুরাছড়ি থেকে আসা যাত্রী রুপায়ন চাকমা জানান, আমি জুরাছড়ি থেকে ভোরে রওনা দিয়ে হ্রদে পানি না থাকায় সাড়ে ১১টায় কয়েকটি নৌকা পাল্টে সদরে এসেছি। চট্টগ্রামে একটা কাজ আছে। আজকেই যেতে হবে। কিন্তু এখানে এসে দেখি বাস চলছে না। এখন সিএনজিযোগে ভেঙে ভেঙে যেতে হবে। খরচ দ্বিগুণ পড়বে। খাগড়াছড়ি থেকে বাস চলাচল বন্ধ ছিল : খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি জানান, ধর্মঘটে খাগড়াছড়ি–চট্টগ্রাম ও খাগড়াছড়ি–রাঙ্গামাটি সড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল। ধর্মঘটের কারণে দুই জেলার সাথে যাত্রীবাহী যান চলাচল বন্ধ রাখে খাগড়াছড়ি সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপ। যানবাহন না পাওয়ায় তীব্র গরমে দুর্ভোগে পড়েন এই সড়কে চলাচলকারীরা। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়ে নারী ও শিশুরা।খাগড়াছড়ি বাস স্টেশনে আটকা পড়া তরুণী জোবাইদা আক্তার বলেন, ধর্মঘটের বিষয়টি জানতাম না। এখন স্টেশনে এসে দেখি কোনো বাস নেই। তীব্র গরমের মধ্যে কত সময় দাঁড়িয়ে থাকা যায়? এই ধরনের ভোগান্তি মানা যায় না। দ্রুত সমস্যা সমাধান হওয়া উচিত।
মাটিরাঙায় বিভিন্ন বাস কাউন্টারে এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেন যাত্রীরা। কাউন্টারে অপেক্ষারত বেসরকারি চাকরিজীবী রবিন ত্রিপুরা বলেন, আজকে সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস। অথচ কোনো বাস পাচ্ছি না। অফিসে পৌঁছাতে পারব কিনা জানি না। আগে জানতে গতকালই চলে যেতাম।
খাগড়াছড়ি থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরের মহালছড়িতে বাসে করে যাতায়াত করেন শিউলি ত্রিপুরা। বেসরকারি এই উন্নয়নকর্মী জানান, আজকে আর অফিস করা হলো না। বাস না পেয়ে এখন বাড়ি ফিরে যাচ্ছি।
প্রতিদিন খাগড়াছড়ি–চট্টগ্রাম সড়কে ৯০টি ও চট্টগ্রাম–রাঙামাটি সড়কে ১৮টি যাত্রীবাহী বাস চলাচল করে। এই দুই সড়কে অন্তত ৬ হাজার যাত্রী বাসে চলাচল করেন। বাস না পেয়ে ভোগান্তিতে পড়েন তারা।
খাগড়াছড়ি সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ রায় চৌধুরী বলেন, বৃহত্তর চট্টগ্রাম গণপরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নেতারা আমাদেরকে মৌখিকভাবে বাস চলাচল বন্ধের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা বাস চলাচল বন্ধ রেখেছি। নতুন কোনো সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত যাত্রী পরিবহন বন্ধ থাকবে।
বান্দরবানে ভোগান্তিতে যাত্রীরা : বান্দরবান প্রতিনিধি জানান, বান্দরবানে বৃহত্তর চট্টগ্রাম বাস মালিক–শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ডাকে ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘটে বাস চলাচল বন্ধ ছিল। এতে ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা। তবে সিএনজিসহ ছোট যানবাহন চলাচল করায় গাড়ি পাল্টে অনেক মানুষকে গন্তব্যে ছুটতে দেখা গেছে। আর ধর্মঘটের সুযোগে ত্রি–হুইলার ও চাঁদের গাড়ির চালকদের নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
স্কুল শিক্ষিকা উম্মে হাসনাত অভিযোগ করে বলেন, দীর্ঘদিন পর আজ স্কুল খুলেছে। তাই বাধ্যতামূলকভাবে স্কুলে যেতে হচ্ছে। তবে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় গন্তব্যে পৌঁছাতে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
চাঁদের গাড়ি চালক মো. শাহাবুদ্দিন বলেন, ত্রি–হুইলার সিএনজি গাড়িগুলো সাধারণত বান্দরবান থেকে কেরানীহাট পর্যন্ত জনপ্রতি ৯০ টাকা করে নেয়। কিন্তু আজ বাস বন্ধ থাকায় যাত্রীদের চাপ থাকায় ১০০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে।
বান্দরবান বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শুব্রত দাশ ঝুন্টু বলেন, ধর্মঘটের কারণে বান্দরবান–চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সড়কের সকল বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়।