দ্বিতীয় বিয়ের পর স্বামী ভরণপোষণ বন্ধ করে দেওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রথম স্ত্রী খাদিজা বেগম কম্বল চাপা দিয়ে হত্যা করেছে স্বামী আব্দুল মান্নানকে (৫৮)। গত বুধবার (২৩ নভেম্বর) রাত ৩টার দিকে নগরীর পাঁচলাইশ থানার নাজিরপাড়া নিজাম কলোনিতে এ ঘটনা ঘটে। নিহত আব্দুল মান্নান ইসলামিক ফাউন্ডেশন ফটিকছড়ি শাখায় কেয়ারটেকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তার বাড়ি ফটিকছড়ি উপজেলার দৌলতপুরে।
হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ খাদিজাকে গ্রেপ্তার করেছে। পারিবারিক বিরোধের জেরে খাদিজা বেগম স্বামী মান্নানকে হত্যা করেছে বলে পুলিশকে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। এ ঘটনায় মান্নানের ছোট ভাই বেলাল উদ্দিন খাদিজাকে একমাত্র আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন বলে জানান পাঁচলাইশ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সাদেকুর রহমান। পাঁচলাইশ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নাজিম উদ্দিন আজাদীকে জানান, আব্দুল মান্নানের দুই স্ত্রী। প্রথম স্ত্রী নগরীর নাজিরপাড়ায় বসবাস করেন। দ্বিতীয় স্ত্রী নিয়ে মান্নান হাটহাজারীতে থাকতেন। মাঝে মাঝে যেতেন প্রথম স্ত্রীর বাসায়। দ্বিতীয় বিয়ের পর থেকে মান্নান প্রথম স্ত্রীর ভরণপোষণ প্রায় বন্ধ করে দেন। বুধবার মান্নান তার অসুস্থ ভগ্নিপতিকে নিয়ে প্রথম স্ত্রী খাদিজার বাসায় যান। সেখানে পারিবারিক কলহের জেরে ঝগড়া হয়। বুধবার রাতে ঝগড়ার চূড়ান্ত পর্যায়ে মান্নান খাটের ওপর পড়ে গেলে খাদিজা কম্বল দিয়ে তার মুখ চেপে ধরে। এতে শ্বাসরোধ হয়ে মান্নানের মৃত্যু হয় বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে।
মান্নানের ভাতিজা রাকিব হাসান বলেন, মান্নানের প্রথম পক্ষে এক ছেলে ও এক মেয়ে আছে। ছেলে দশম শ্রেণিতে আর সাত বছর বয়সী মেয়ে একটি হেফজখানায় আবাসিক শিক্ষার্থী হিসেবে থেকে পড়াশোনা করে।
মান্নানের দ্বিতীয় স্ত্রী সাবিদা জানান, প্রথম স্ত্রীর কথা গোপন রেখেই চার বছর আগে তাকে বিয়ে করেছিলেন মান্নান। তাদের ১৭ মাস বয়সী একটি কন্যা সন্তান আছে। সাবিদা জানান, তার বাড়ি দিনাজপুরের খানসামা উপজেলায়। বিয়ের পর তাকে চট্টগ্রামে এনে হাটহাজারী নূর মসজিদ এলাকায় বাসা ভাড়া করে থাকতেন। বিয়ের তিন মাস পর মান্নানের আগের স্ত্রীর বিষয়ে জানতে পারেন তিনি। মান্নান দুই স্ত্রীর বাসায় থাকতেন জানিয়ে সাবিদা বলেন, একদিন পরপর মান্নান তার প্রথম স্ত্রীর বাসায় গিয়ে থাকতেন। বুধবারও তিনি ওই বাসায় গিয়েছিলেন। তিনি অভিযোগ করেন, গত রোজার সময় তার সতীন খাদিজা বেগম ছেলেকে নিয়ে হাটহাজারীতে তাদের বাসায় যান। সেখানে গিয়ে মান্নানকে হুমকি দিয়ে আসেন।
পাঁচলাইশ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সাদেকুর রহমান জানান, প্রতিবেশীরা খাদিজার ঘর থেকে গোঙানির শব্দ শুনে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ট্রিপল নাইনে ফোন করে বিষয়টি পুলিশকে জানায়। পুলিশ গিয়ে ঘটনাস্থল থেকে মান্নানের মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠান। তিনি বলেন, ঘটনার সময় খাদিজার ছেলে ও মান্নানের ভগ্নিপতি একই বাসার আরেকটি কক্ষে ঘুমাচ্ছিলেন। এ বিষয়ে তাদেরকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।