চট্টগ্রামে বিশেষ গণটিকা ক্যাম্পেইনের দ্বিতীয় দিন গতকাল রোববার আরো লক্ষাধিক (১ লাখ ১২ হাজার ৭২২ জন) মানুষ টিকার প্রথম ডোজ নিলেন। এর মাঝে সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ৬৫ হাজার ৭৩১ জন এবং উপজেলা পর্যায়ে ৪৬ হাজার ৯৯১ জন টিকা নিয়েছেন। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) স্বাস্থ্য বিভাগ ও চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। যদিও প্রথম দিনের মতো টিকা কেন্দ্রে তেমন ভিড় দেখা যায়নি গতকাল। প্রথম দিন (শনিবার) সাড়ে তিন লাখ মানুষকে টিকা প্রয়োগের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করলেও মহানগরসহ চট্টগ্রাম জেলায় এর দ্বিগুণ মানুষ টিকা গ্রহণ করেন। মানুষের ব্যাপক সাড়ায় বিশেষ এ ক্যাম্পেইনের সময়সীমা আরো দুদিন বাড়ানো হয়। সে হিসেবে আজ সোমবারও গণটিকার এ বিশেষ ক্যাম্পেইন চলমান থাকছে। সিভিল সার্জন ডা. মো. ইলিয়াছ চৌধুরী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
উল্লেখ্য, জাতীয় পরিচয়পত্র কিংবা জন্ম নিবন্ধন সনদ না থাকলেও বিশেষ ক্যাম্পেইনে টিকা নেয়া যাবে, এমন ঘোষণা আগেই দিয়ে রেখেছিল স্বাস্থ্য বিভাগ। তাছাড়া নিবন্ধন করতে না পারা এবং নিবন্ধন করলেও টিকা না পাওয়া সকলেই বিশেষ ক্যাম্পেইনে টিকা গ্রহণের সুযোগ পাবেন বলেও ঘোষণা দেয়া হয়। এসব ঘোষণায় শনিবারের বিশেষ ক্যাম্পেইনে টিকা কেন্দ্রগুলোতে দীর্ঘ লাইনের সৃষ্টি করেছিল বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। বিশেষ করে নিবন্ধনের ঝক্কি ছাড়াই টিকা গ্রহণের সুযোগ পাওয়ায় মানুষ টিকা নিতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। ফলে শনিবার একদিনেই মহানগরসহ চট্টগ্রাম জেলায় সাড়ে ৭ লাখের বেশি মানুষ টিকার প্রথম ডোজ নেন। তবে ক্যাম্পেইনের দ্বিতীয় দিন (রোববার) টিকা প্রয়োগের গতি কিছুটা কমেছে। তুলনামূলক কম সংখ্যক কেন্দ্রে টিকা দেয়া হয়। টিকা প্রত্যাশী মানুষের ভিড়ও ছিল কম।
স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, নিবন্ধনের ঝক্কি না থাকা এবং জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্ম নিবন্ধন সনদ ছাড়াই টিকা গ্রহণের সুযোগ পাওয়ায় মানুষ টিকা কেন্দ্রে হাজির হয়েছে। কেন্দ্রে হাজির হওয়া কাউকে টিকা না দিয়ে ফেরত পাঠানো হয়নি। সবাইকেই টিকা দেয়া হয়েছে। নির্দিষ্ট সমেয়র পর এলেও টিকা দেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে যারা নিবন্ধন করতে না পারায় টিকা নিতে পারছিল না, এমন জনগোষ্ঠীকেও টিকার আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে। অর্থাৎ জনগোষ্ঠীর কোন অংশই টিকার বাইরে থাকবে না। সরকার সেভাবেই পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
নিবন্ধন ছাড়াই টিকা প্রয়োগের প্রক্রিয়া সম্পর্কে চসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী ও সিভিল সার্জন ডা. মো. ইলিয়াছ চৌধুরী বলছেন, যারা এখনো টিকার প্রথম ডোজ নেননি, কোন কিছু ছাড়াই ক্যাম্পেইনে তাদের টিকা দেয়া হচ্ছে। জাতীয় পরিচয় পত্র ও জন্ম নিবন্ধন সনদ না থাকলেও তাদের টিকা দেয়া হচ্ছে। কেন্দ্রে টিকা নিতে আসা ব্যক্তির নাম, বয়স ও মোবাইল নাম্বার টুকে রাখা হচ্ছে। পরবর্তীতে এসব তথ্যের সাহায্যে ওই ব্যক্তিকে দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হবে। কোনো কোনো কেন্দ্রে তাদের কার্ডও দেয়া হচ্ছে। তবে মানুষকে এখন খুব সহজে টিকা দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
চসিকের স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ক্যাম্পেইনের দ্বিতীয় দিনে (রোববার) ১২টি ওয়ার্ডের ২৩টি কেন্দ্রে গণটিকা দেয়া হয়েছে। এসব কেন্দ্রে সবমিলিয়ে ৬৫ হাজার ৭৩১ জন টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন চসিকের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আলী। যদিও প্রথম দিনে (শনিবার) ১ লাখ ৮৫ হাজার লক্ষ্যমাত্রার স্থলে সবমিলিয়ে ৩ লাখ ২৫ হাজার মানুষকে প্রথম ডোজ দেয়া হয় সিটি কর্পোরেশন এলাকায়। হিসেবে লক্ষ্যমাত্রার দ্বিগুন মানুষ শনিবার বিশেষ ক্যাম্পেইনের আওতায় টিকার প্রথম ডোজ গ্রহণ করেন।
অন্যদিকে, ক্যাম্পেইনের দ্বিতীয় দিনে উপজেলা পর্যায়ে মোট ৪৬ হাজার ৯৯১ জন টিকার প্রথম ডোজ গ্রহণ করেছেন বলে জানান চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মো. ইলিয়াছ চৌধুরী। যদিও প্রথম দিনে ১ লাখ ৮০ হাজার মানুষকে টিকা প্রয়োগের লক্ষ্যমাত্রার স্থলে উপজেলা পর্যায়ে ৪ লাখ ২৯ হাজার ২৯৪ জন টিকা নেন। যা লক্ষ্যমাত্রার আড়াই গুণ। তবে দ্বিতীয় দিনে টিকা গ্রহীতার সংখ্যা কমে ৫০ হাজারের নিচে নেমেছে। বেশ কিছু উপজেলায় জনসংখ্যার ৭০ শতাংশের বেশি মানুষ প্রথম ডোজের আওতায় এসেছেন জানিয়ে সিভিল সার্জন বলেন, ওই সব উপজেলায় টিকা গ্রহণের হার কমেছে। তবে তুলনামূলক কম টিকা প্রয়োগ হয়েছে এমন উপজেলাগুলোতে অনেকেই টিকা নিচ্ছেন।
ক্যাম্পেইন শেষ হলেও প্রয়োজন বিবেচনায় চিহ্নিত এলাকায় স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বিশেষ কর্মসূচি/ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে টিকাদান কার্যক্রম পরিচালনা করবে। মোটকথা, অধিকাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনাই স্বাস্থ্য বিভাগের লক্ষ্য।
রোববার নতুন করে ৬ লাখের বেশি ভ্যাকসিন এসেছে জানিয়ে সিভিল সার্জন বলেন, সবমিলিয়ে আমাদের হাতে এখন ১৩ লাখের বেশি ভ্যাকসিন মজুদ রয়েছে। তাই ভ্যাকসিনের কোন কমতি নেই। টিকাদান নির্বিঘ্নভাবে চলবে।