চন্দনাইশের দোহাজারী পৌরসদরে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অধিগ্রহণকৃত জায়গা উদ্ধারে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে আজ রবিবার (১৮ অক্টোবর)।
সকাল সাড়ে ৯টায় উদ্ধার অভিযান শুরু হয়ে চলে বিকেল ৩টা পর্যন্ত। অভিযানে বহুতল ভবনসহ প্রায় ২ শতাধিক স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়।
উচ্ছেদ অভিযান চলাকালে বিকেল ৩টার দিকে স্থানীয় কিছু দোকানদার উত্তেজিত হয়ে উচ্ছেদ অভিযানে বাধা দেয়ার চেষ্টা করে এবং বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন।
এ সময় তারা কয়েকজন নিরাপত্তাকর্মীকে মারধর করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
জানা যায়, ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় সড়ক প্রশস্তকরণ কাজের জন্য সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম-কক্সবাজার জাতীয় মহাসড়কের দোহাজারী পৌরসদর এলাকায় সড়কের দু’পাশে দখল করে রাখা সরকারি অধিগ্রহণকৃত জায়গা উদ্ধারে অভিযান পরিচালনা করে।
তবে এর আগে সরকারি অধিগ্রহণকৃত জায়গা ছেড়ে দেয়ার জন্য ২ সপ্তাহের সময় দেয়া হলেও নিজেরা জায়গা ছেড়ে না দেয়ায় সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর সর্বশেষ আজ রবিবার সকালে স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান শুরু করে।
অভিযানে নেতৃত্বে দেন ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট-এর প্রজেক্ট ম্যানেজার (পিএম) ও নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাহেদ হোসাইন ও ডেপুটি প্রজেক্ট ম্যানেজার (ডিপিএম) ও উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী তাহসিনা বিনতে ইসলাম।
এসময় সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারী, পুলিশ ও নিরাপত্তাকর্মীরা অভিযানে উপস্থিত ছিলেন।
ডেপুটি প্রজেক্ট ম্যানেজার (ডিপিএম) ও উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী তাহসিনা বিনতে ইসলাম আজাদীকে বলেন, “গত ৫ অক্টোবর অফিস থেকে ভূমি অধিগ্রহণ হস্তান্তরনামা পাওয়ার পর অধিগ্রহণকৃত জায়গা থেকে স্থাপনাসহ মালামাল সরিয়ে নেয়ার জন্য ২ সপ্তাহ সময় দেয়া হয়েছিল কিন্তু এর মধ্যে কেউ স্থাপনা ও মালামাল সরিয়ে নেয়নি। ফলে আমরা আজ রবিবার অধিগ্রহণকৃত জায়গা উদ্ধারে অভিযান চালাই।”
বাকি স্থাপনাগুলো সরিয়ে নিতে আগামী বুধবার পর্যন্ত সময় দেয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
উচ্ছেদ অভিযান চলাকালে বিকেল ৩টার দিকে কিছু দোকান মালিক উত্তেজিত হয়ে তাদের সাথে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন এবং কয়েকজন নিরাপত্তা কর্মীকে মারধর করেন বলে জানান তিনি। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
জানা গেছে, অভিযানে অধিগ্রহণকৃত প্রায় ৪ একর জায়গা থেকে বহুতল ভবনসহ প্রায় ২শ’ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয় যার আনুমানিক মুল্য প্রায় ১শ’ কোটি টাকা।
সড়কের দু’পাশে অধিগ্রহণকৃত জায়গার মধ্যে দোকানপাট, মার্কেট-শো-রুমসহ অন্যান্য স্থাপনা ছিল।
হাজারী শপিং সেন্টার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. লোকমান হাকিম বলেন, “কোনো ধরনের পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই শত শত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদে হঠাৎ অভিযান শুরু করা হয়। অথচ অনেক ব্যবসায়ী এখনো ক্ষতিপুরণও পায়নি। হঠাৎ করে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হওয়ায় ব্যবসায়ীরা দোকান থেকে কোনো ধরনের মালামালও বের করতে পারেননি।”
এতে লাখ লাখ টাকার মালামাল ধ্বংস হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
উচ্ছেদের একদিন আগে মাইকিং কিংবা মৌখিকভাবে বলা হলেও এত ক্ষয়ক্ষতি হতো না বলেও অভিমত ব্যক্ত করেন তিনি। এদিকে আগামীকাল সোমবার সকালে উচ্ছেদ অভিযানে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা উচ্ছেদের প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
রাতে এ প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত সরকারি কাজে বাধা প্রদান ও মারধরের ঘটনায় চন্দনাইশ থানায় ২ জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে জানতে চন্দনাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাসির উদ্দীন সরকারের মোবাইল ফোনে কল করা হলেও তিনি কেটে দেয়ায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
উচ্ছেদ অভিযানের ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/DainikAzadi/videos/3985451234817441