দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রাচীন বাণিজ্যিক উপ–শহর খ্যাত দোহাজারী। সড়কপথ, রেলপথ ও নৌপথ সমৃদ্ধ হওয়ায় দোহাজারী সদরে বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশাজীবী মানুষের আগমন ঘটায় লোকে লোকারণ্য থাকে প্রতিনিয়ত। বিগত ২০১৭ সালে দোহাজারীকে পৌরসভায় উন্নীত করায় বাড়তে থাকে শহরের পরিধিও। দোহাজারী পৌরসদরের মধ্য দিয়ে গেছে দেশের সবচেয়ে ব্যস্ততম সড়ক চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়ক। পর্যটন নগরী কক্সবাজার এবং পার্বত্যজেলা বান্দরবানের সাথে সরাসরি যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম মহাসড়কটি। এই মহাসড়ক দিয়ে দৈনিক কমপক্ষে ৩০ হাজার ছোট–বড় যানবাহন চলাচল করে। অতীতে দোহাজারী সদরে যানজটে আটকা পড়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হতো মালবাহী পরিবহন, বিলাস বহুল যাত্রীবাহী বাসসহ বিভিন্ন যানবাহনকে। সমপ্রতি মহাসড়কটি সমপ্রসারিত হলে সেই দুর্ভোগ কিছুটা কমে। কিন্তু দোহাজারী পৌরসদরে মহাসড়ক দখল করে বাজার ও দোকানপাট গড়ে ওঠায় সেই পুরনো দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। দোহাজারী পৌরসদর জুড়েই মহাসড়ক দখল করে বাজার বসিয়েছে কিছু অসাধু মুনাফা লোভী ব্যক্তি ও ব্যবসায়ীরা। সিএনজি টেক্সি, ব্যাটারি রিকশার অবস্থান এবং লোকাল যানবাহন দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠা–নামার স্থান দখল করে বাজার ও দোকানপাট বসায় নিত্য যানজট লেগেই আছে দোহাজারী পৌরসদরে। আর মূল মহাসড়কের ওপর দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠা–নামা করানো হয় যাত্রীবাহী গাড়িগুলোতে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকবার উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে মহাসড়ক দখলমুক্ত করা হয়। কিন্তু সকালে উচ্ছেদ হলে বিকেলে আবার দখল হয়ে যায় সড়কটি। এভাবেই চলছে বছরের পর বছর।
জানা যায়, দোহাজারী বাজার ইজারাদার ও কিছু স্থানীয় অতি মুনাফা লোভী ব্যক্তি দৈনিক ভিত্তিক ও মাসোহারা নিয়ে এসব ভাসমান দোকান ও বাজার বসিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। ব্যাটারি রিকশা চালক বাদশা মিয়া ও সিএনজি টেক্সি চালক ইকবাল হোসেন বলেন, এক সময় চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কটি দোহাজারী সদরে অত্যন্ত সরু হলেও বর্তমানে ছয় লাইনে প্রশস্ত করা হয়েছে। সড়কের মাঝখানে দুই লাইন ডিভাইডার দিয়ে বসিয়ে ওয়ান বাই ওয়ান হিসেবে যানবাহন চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু সড়কের মূল দুই লাইন সচল রেখে উভয় পার্শ্বে ডিভাইডার থেকেই দখল করে ফেলেছে ভাসমান দোকানিরা। কেউ কেউ ডিভাইডারের সাথে খুঁটি বেঁধে অস্থায়ী কাঁচা স্থাপনাও তৈরি করে ফেলেছে। ফলে বিভিন্ন এলাকা থেকে দোহাজারী সদরে আসা টেক্সি ও রিকশাগুলো সড়কের সাইডে দাঁড়াতে না পেরে মূল সড়কে দাঁড়িয়েই যাত্রী ওঠা–নামা করছে। এতে আমরা রিকশা চালকরা বলির পাঠা হলেও মহাসড়কে বাজার বসিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া লোকগুলো পার পেয়ে যায়।
দোহাজারীর হাজারী শপিং সেন্টার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুহিম বাদশা বলেন, মহাসড়কটি প্রশস্থ হওয়ার পর থেকে দোহাজারী সদরে কিছুটা যানজট কমলেও মহাসড়কের দুইপাশ দখল করে অস্থায়ী দোকানপাট ও বাজার বসানোর ফলে যানজট আবারো নিত্যসঙ্গী হয়েছে দোহাজারীবাসীর। পাশাপাশি টেক্সি ও রিকশার লাইন দখল হয়ে যাওয়ায় এসব ছোট ছোট যানবাহনগুলো মূল সড়কের উপর দাঁড়িয়ে যাত্রী উঠা–নামা করাতে হয়। এতে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনাও লেগে আছে। পাশাপাশি যে কোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দূর্ঘটনা এবং প্রাণহানি। মহাসড়ক দখলমুক্ত করতে তিনি সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর ও দোহাজারী পৌরসভা কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এ ব্যাপারে দোহাজারী পৌরসভার প্রশাসক ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ঝন্টু বিকাশ চাকমা বলেন, মহাসড়ক দখল করে গড়ে ওঠা বাজার ও দোকানপাট ইতিমধ্যে বেশ কয়েকবার উচ্ছেদ করা হয়েছে। কিন্তু তারা পুনরায় বসে যায়। এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপথ বিভাগ থেকে উচ্ছেদের ব্যাপারে চিঠি দেয়া হলে পৌরসভার পক্ষ থেকে আবারো উচ্ছেদের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে তিনি অবৈধ দখলদারদের সরে যেতে দোহাজারী পৌরসভার পক্ষ থেকে খুব দ্রুত নোটিশ দেয়া হবে বলেও জানান।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম দক্ষিণ সড়ক বিভাগের অধীন দোহাজারী সড়ক উপ–বিভাগের উপ–বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আব্দুল্লাহ আল নোমান পারভেজ বলেন, দোহাজারী পৌর সদরে মহাসড়কের পাশ দখল করে বাজার ও দোকানপাট বসানো অবৈধ দখলদারদের ইতিমধ্যে বেশ কয়েকবার উচ্ছেদ করা হয়েছে। বর্তমানে যারা মহাসড়কের পাশ দখল করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করছে তাদের সরে যেতে মৌখিকভাবে বেশ কয়েকবার বলা হয়েছে। যারা এখনো সরে যায়নি খুব শীঘ্রই তাদের উচ্ছেদের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।












