যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, আগামী ৫ নভেম্বরের নির্বাচনে তিনি জয়ী হলে আমেরিকার রপ্তানি পণ্য পর্যাপ্ত না কেনার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নকে (ইইউ) ‘চড়া মূল্য’ দিতে হবে। এছাড়া কমলা হ্যারিস হোয়াইট হাউজের কাছে এলিপ্স পার্কের সমাবেশে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ভোটারদের উদ্দেশ্যে সমাপনী ভাষণ দিয়েছেন। ভাষণে তিনি ভোটারদেরকে অস্থিরচিত্ত, প্রতিশোধপরায়ণ এবং অপরাধপ্রবণ ট্রাম্পের ‘বিশৃঙ্খলা ও বিভাজনের’ পথ প্রত্যাখ্যান করার আহ্বান জানান। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের আর মাত্র দিন কয়েক বাকী। এই সময়ে গুরুত্বপূর্ণ দোদুল্যমান রাজ্যগুলোতে নির্বাচনি কর্মকর্তারা বিভ্রান্তিকর তথ্য, ষড়যন্ত্র তত্ত্ব, হুমকি ও সম্ভাব্য সংঘাত মোকাবেলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ফিলাডেলফিয়া, ডেট্রয়েট এবং আটলান্টায় ২০২০ সালের নির্বাচন–পরবর্তী বিশৃঙ্খলার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে হুমকি মোকাবেলা অভিযান জোরদার করা হচ্ছে। কারণ, গুরুত্বপূর্ণ দোদুল্যমান রাজ্যগুলোর মধ্যে ডেমোক্র্যাটদের প্রধান ভোটকেন্দ্র ওই তিন নগরীই সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ভোট কারচুপির মিথ্যা অভিযোগের প্রধান লক্ষ্যবস্তু। ফিলাডেলফিয়ার ব্যালট গণনা কেন্দ্র কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে। ডেট্রয়েট ও আটলান্টার নির্বাচন কার্যালয়গুলো সুরক্ষিত করা হয়েছে বুলেটপ্রুফ কাঁচ দিয়ে। উইসকনসিনে নির্বাচন কর্মীদের ‘উত্তেজনা প্রশমনের’ কৌশল শেখানো হয়েছে। ভোটকেন্দ্রগুলো পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে, যাতে প্রয়োজনে কর্মীরা বিক্ষোভকারীদের সামনে থেকে নিরাপদে সরে যেতে পারেন। অ্যারিজোনার নির্বাহী কর্মকর্তা আদ্রিয়ান ফন্টেস সেখানে বিভ্রান্তিকর বা মিথ্যা তথ্য এবং ভুয়া ছবি ও ভিডিও মোকাবেলায় স্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে মিলে কাজ করছেন।
গত মঙ্গলবার ব্যাটলগ্রাউন্ড রাজ্য পেনসিলভেইনিয়ায় সমাবেশে পারষ্পরিক বাণিজ্য আইন (ট্রাম্প রেসিপ্রোক্যাল ট্রেড অ্যাক্ট) পাস করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, আমি আপনাদের বলছি, ইউরোপীয় ইউনিয়ন খুব সুন্দর, চমৎকার শোনায়, তাই না? ইউরোপের সব ছোট ছোট চমৎকার দেশগুলো একসঙ্গে জোটবদ্ধ হয়েছে। তারা আমাদের গাড়ি কেনে না। তারা আমাদের কৃষিপণ্য কেনে না। উলটে তারা যুক্তরাষ্ট্রে লাখ লাখ গাড়ি বিক্রি করে। না, না, না, তাদেরকে এর জন্য চড়া মূল্য দিতে হবে। এবারের নির্বাচনে ট্রাম্প অঙ্গীকার করেছেন, সব দেশ থেকে পণ্য আমদানির ওপর ১০ শতাংশ এবং চীন থেকে পণ্য আমদানিতে ৬০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবেন তিনি। খবর বিডিনিউজের।
গণতান্ত্রিকভাবে শাসিত তাইওয়ানকে আতঙ্কিত করে দিয়ে তিনি বলেন, নিজের প্রতিরক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে অর্থ দেওয়া উচিত তাইওয়ানের, তারা আমেরিকার সেমিকন্ডাক্টরের ব্যবসা নিয়ে গেছে।
এদিকে, এলিপ্স পার্কের সমাবেশে সমাপনী ভাষণে হ্যারিস তার নিজের প্রতিশ্রুত ‘ভিন্ন পথে যাত্রার চেষ্টা’কে সমর্থন দেওয়ার আহ্বান জানান ভোটারদের। হ্যারিস এলিপ্সের যে জায়গায় ৩০ মিনিটের এই বক্তব্য রেখেছেন, সেই একই স্থানে প্রায় চার বছর আগে ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারিতে ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গার ঠিক আগে বক্তব্য রেখেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্পও। সমবেত সমর্থকদের উদ্দেশে ট্রাম্প সেদিন ভাষণ দিয়েছিলেন। তার ভাষণে উজ্জীবিত হয়েই ট্রাম্প সমর্থকরা সেদিন দলে দলে ক্যাপিটল হিলে হামলে পড়ে।
হ্যারিস তার সমাবেশের ভাষণে বলেন, ট্রাম্পকে আমরা চিনি। ২০২০ সালে তৎকালীন এই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নিজের পরাজয় মেনে না নিয়ে ক্যাপিটল হিলে একদল সশস্ত্র মানুষ পাঠিয়েছিলেন। সাবেক এই প্রেসিডেন্ট আবার ক্ষমতায় এলে তা দেশের ভবিষ্যতের জন্য একটি হুমকি হবে বলে উল্লেখ করেন হ্যারিস।
ভোটারদেরকে নির্বাচনের গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে হ্যারিস বলেন, এই নির্বাচন কেবল দুটো দলের মধ্যে কোনও একটিকে কিংবা দুই প্রার্থীর মধ্য থেকে কোনও একজনকে বেছে নেওয়া নয়, এ নির্বাচন হচ্ছে সব আমেরিকানের জন্য স্বাধীন একটি দেশ কিংবা বিশৃঙ্খলা ও বিভাজনের শাসনব্যবস্থার একটি দেশের মধ্য থেকে কোনও একটিকে বেছে নেওয়া।
হ্যারিস তার শীর্ষ কয়েকটি নীতিও এই প্রচার সমাবেশে তুলে ধরেছেন। যার মধ্যে আছে হাউজিংয়ের খরচ কমানো, চাইল্ড ট্যাঙ ক্রেডিটের আওতা বাড়ানো এবং বয়স্কদের জন্য সরকারি স্বাস্থ্যবীমায় হোমকেয়ারও যোগ করা। তাছাড়া, গর্ভপাতের অধিকার রক্ষার প্রতিশ্রুতিও হ্যারিস তার বক্তব্যে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, মানুষের নিজের শরীরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার মৌলিক স্বাধীনতা আছে।