স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংবাদপত্র দৈনিক আজাদী সম্পাদক ও একুশে পদকপ্রাপ্ত সংবাদ ব্যক্তিত্ব এম এ মালেক বলেছেন, মানুষের আজন্ম ইচ্ছে হলো– শতসহস্র বছর বেঁচে থাকা। এই চাওয়ার নামই আশা। আর, যুগের পর যুগ ধরে মানুষের মনে স্থান পাবার নিরন্তর বাসনা মানব সমাজের আকাঙ্ক্ষা। নিজেকে তৃপ্ত সন্তুষ্ট এবং সসম্মানে দেখবার এ আশা–আকাঙ্ক্ষায় মানুষ পাড়ি দিয়েছে হাজার–লক্ষ বছর। বিশেষত মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর মাঝেই খুঁজে পাওয়া যায় ভালোবাসা। এ ভালোবাসায় থাকে বেঁচে থাকার স্বপ্ন। তিনি ‘ক্রিয়েট হোপ ইন দ্য ওয়ার্ল্ড’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে মানবতার প্রতি নিবেদিত আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রোটারি ক্লাব অব চিটাগাং ইস্ট–এর ২২তম ইনস্টলেশন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
প্রধান অতিথি অনুষ্ঠানের সফলতা ও সার্থকতা কামনা করে আরো বলেন, হাতটা বাড়াতে হবে উভয়কে। যে দেবে এবং যে নেবে। এই দেয়া–নেয়ার সম্প্রীতির মধ্য দিয়ে রোটারি এবং লায়ন্স ক্লাব একটি সাম্যের পৃথিবী গড়ার যে সংগ্রাম করে যাচ্ছে তা এক কথায় অভূতপূর্ব। আমাদের চারপাশে কম সৌভাগ্যবানদের প্রতি এগিয়ে আসতে হবে। প্রত্যেকে পৃথিবীটাকে বদলে দিতে চাই। আগে নিজেকে বদলাতে হবে। আমি নেপোলিয়নের মতো খালি হাতে বিদায় নিতে চাই না। আমি এমন কিছু করে যেতে চাই যেন গিয়ে বলতে পারি, দেখো আমাকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলে, আমি মানুষের জন্য কিছু করে এসেছি, কিছু রেখে এসেছি। তবেই এ পৃথিবী আনন্দময়ী হয়ে উঠবে। তিনি আরো বলেন, অনুষ্ঠানে আমার নামের আগে একুশে পদক প্রাপ্তির কথা বলা হচ্ছে। একুশ আমার অহংকার, একুশ মানে মাথা নত না করা। ১৯৫২ সালে যখন ভাষা আন্দোলন হলো, এ নিয়ে কবিতা লিখেছিলেন কবি মাহবুবুল আলম। তার সেই বিখ্যাত কবিতা ‘কাঁদতে আসিনি, ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি।’ একুশের প্রথম কবিতা এটি। এই কবিতা সেই রাতেই আমার বাবার তত্ত্বাবধানে আমাদের প্রেস থেকেই ছাপা হয়েছিল। এটা আরেকটা ঐতিহাসিক ঘটনা। আমাদের গৌরবের বিষয়।
একই আয়োজনে রোটারি গভর্নর ইঞ্জিনিয়ার মো. মতিউর রহমান আরআই প্রেসিডেন্ট ঘোষিত এবারের ‘এরিয়া অব ফোকাস’ বাস্তবায়নে সকল ক্লাবের সহযোগিতা প্রত্যাশা করে বলেন, ৩২৮২’তে প্রায় ১৮৩টি ক্লাব রয়েছে। প্রত্যেক ক্লাব যদি গৃহহীনদের জন্য ন্যূনতম একটি গৃহ নির্মাণের দায়িত্ব নেয় প্রায় দুইশ ঘর পাবে সুবিধাবঞ্চিতরা। তার সময়কালে ঘোষিত কর্মসূচি বাস্তবায়নে সবার সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন গভর্নর। তিনি চট্টগ্রামে লায়ন্সের সিগনেচার প্রজেক্ট লায়ন্স চক্ষু হাসপাতালের উদাহারণ দিয়ে অনুরূপভাবে চট্টগ্রামে তার সময়কালে এ ধরনের উদ্যোগ নেয়ার ঘোষণা দেন।
নগরীর আগ্রাবাদস্থ একটি রেস্তোরাঁয় ৪ আগস্ট রাত ৮টায় জমকালো এ আয়োজনে বিভিন্ন পেশায় সেবা প্রদানের মাধ্যমে যারা সমাজে বিশেষ অবদান রেখে চলেছেন তাদের মধ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহফুজুর রহমান, সিএমপির এডিশনাল পুলিশ কমিশনার আসিফ মহিউদ্দিন, সাংবাদিক আলমগীর সবুজ, শিশু বিশেষজ্ঞ পিপি ডা. জাকারিয়া হোসাইন, অর্থোপেডিক সার্জন ডা. জাবেদ জাহাঙ্গীর তুহিন, শিক্ষক মো. ফারুক ইসলাম, সাংবাদিক আহমেদ কুতুব ও সাংবাদিক পার্থ প্রতীম নন্দীকে সম্মাননা প্রদান করা হয়।
এরপর দু’জন পঙ্গু ব্যক্তি যথাক্রমে মো. শাহজাহান ও উইলিয়াম ডি সুজাকে একজোড়া হুইল চেয়ার এবং উপলব্ধি ফাউন্ডেশনকে ক্লাবের পক্ষ থেকে একজন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট আয়কর আইনজীবী রোটারিয়ান জয়শান্ত বিকাশ বড়ুয়ার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে একজন সুবিধাবঞ্চিত মেয়ের এক বছরের বৃত্তি বাবদ এক লাখ ২০ হাজার টাকার চেক তুলে দেয়া হয় উপলব্ধির প্রতিনিধির হাতে।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন প্রোগ্রাম চেয়ার ক্লাবের অতীত সুপার স্টার প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান সার্ভিস প্রজেক্ট ডিরেক্টর চট্টগ্রামের প্রথম ক্লিনিক্যাল পুষ্টিবিদ হাসিনা আক্তার লিপি। ক্লাব প্রেসিডেন্ট নাসিমা আখতারের সভাপতিত্বে ও ক্লাব সেক্রেটারি লেখক–সাংবাদিক রোটারিয়ান শওকত বাঙালির সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন পিডিজি আব্দুল আহাদ, পিডিজি শহীদ আহমেদ চৌধুরী, পিডিজি প্রফেসর ড. তৈয়ব চৌধুরী ও অ্যাসিস্ট্যান্ট গভর্নর জয় দেব চন্দ্র দাশ জয়। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন পিপি রাকিবুল ইসলাম। ইনভোকেশান পাঠ করেন রোটারিয়ান জোবায়দুর রহমান সাকিব। পবিত্র কোরআন থেকে তেলওয়াত করেন শওকত আল–আমিন।
অনুষ্ঠানে ডিস্ট্রিক্ট ৩২৮২–এর ফার্স্টলেডি অতিরিক্ত কর কমিশনার শামিনা ইসলামসহ প্রায় ৫০টি ক্লাবের প্রেসিডেন্ট ও সেক্রেটারি এবং ডিস্ট্রিক্ট অফিসিয়াল নেতৃবৃন্দ এবং ইস্ট এর চার্টার্ড প্রেসিডেন্ট এ কে এম সাইদুল ইসলাম বাবু, পিপি এ আর খান, পিপি কামরুল ইসলাম, পিপি লে কর্নেল অব. এবিএম জয়নুর রশীদ, রোটারিয়ান নীলুফার আজাদ, পিপি মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ, রোটারিয়ান অধ্যক্ষ শ্যামল মজুমদার, রোটারিয়ান মিজানুর রহমান, রোটারিয়ান বৃজেট ডায়েস, রোটারিয়ান মো. মামুন চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে দেশের খ্যাতিমান যাদুশিল্পী রাজীব বসাক তার অনবদ্য যাদু প্রদর্শনীর মাধ্যমে দর্শকদের বিমোহিত করেন। অনুষ্ঠান উপলক্ষে তরী’র বিশেষ সংখ্যা প্রকাশিত হয়।