ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের এক জরিপে দেখা গেছে, পর্যটন সূচকে বিশ্বের ১১৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৯তম। এ ছাড়া এশিয়া–প্রশান্ত মহাসাগরীয় ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সবার শেষে। বলা যায়, ভ্রমণ ও পর্যটন সূচকে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, যুক্তরাজ্যের সারে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথভাবে এই সূচক প্রণয়ন করেছে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম। দ্বিবার্ষিক এই সূচকে বিভিন্ন উপাদান ও সরকারের নীতি পর্যালোচনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে যে সরকার যথাযথ নীতি প্রণয়ন করলে পর্যটন ও ভ্রমণ খাতের দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন হতে পারে; পরিণামে দেশের সামগ্রিক উন্নয়নেও এই খাত ভূমিকা পালন করতে পারে। এই সূচকে ৭ পয়েন্টের মধ্যে ৩ দশমিক ১৯ পেয়েছে বাংলাদেশ। ফলে দেখা যাচ্ছে, কেবল এশিয়া–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলেই নয়, দক্ষিণ এশিয়ার যে পাঁচটি দেশ এই সূচকে স্থান পেয়েছে, তাদের মধ্যেও বাংলাদেশ সবার পেছনে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবার আগে আছে ভারত। ৭–এর মধ্যে তারা পেয়েছে ৪ দশমিক ২৫। সামগ্রিক ক্রমতালিকায় ভারতের অবস্থান ৩৯। এরপর আছে শ্রীলঙ্কা। ৩ দশমিক ৬৯ পয়েন্ট নিয়ে ক্রমতালিকায় ৭৬তম স্থানে আছে তারা। ৩ দশমিক ৪১ পয়েন্ট নিয়ে ১০১তম স্থানে আছে অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত পাকিস্তান। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, পর্যটন নেপালের রাজস্ব আয়ের মূল উৎস হলেও দেশটির প্রাপ্ত নম্বর মাত্র ৩ দশমিক ৩৪্তঅবস্থান ১০৫তম।
যেসব মানদণ্ডে এই বিচার করা হয়েছে, তার মধ্যে বাংলাদেশ সবচেয়ে ভালো করেছে পর্যটন ও ভ্রমণবিষয়ক সম্পদের মানদণ্ডে। সেটা হলো, যেসব বিষয় মানুষকে নির্দিষ্ট কোনো স্থানে ভ্রমণে উৎসাহী করে, যেমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সাংস্কৃতিক আকর্ষণ এবং সরাসরি ঠিক বিনোদনের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, এমন বিষয়ের উপস্থিতি।
এর অর্থ হলো, বাংলাদেশে ভ্রমণ ও পর্যটনের যথেষ্ট উপকরণ থাকলেও পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনাগত দুর্বলতার কারণে পর্যটকদের আকর্ষণ করা সম্ভব হচ্ছে না। যেমন বিশ্বের বৃহত্তম কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত আর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের কথা চলে আসে। কিন্তু এ রকম আকর্ষণীয় স্থান থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ তেমন একটা পর্যটক আকর্ষণ করতে পারছে না। এর জন্য আনুষঙ্গিক আয়োজন থাকা দরকার, তা না থাকার কারণে এসব স্থানের আকর্ষণ দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে না। সে জন্য এই ‘পর্যটন ও ভ্রমণের স্থায়িত্ব’ মাত্রায় সবচেয়ে খারাপ করেছে বাংলাদেশ।
বিশেষজ্ঞদের অনেকে মনে করেন, বাংলাদেশে পর্যটনও একটি বড় ধরনের বিনিয়োগের আকর্ষণীয় খাত হতে পারে। বাংলাদেশের কুয়াকাটা একটি বিশেষ পর্যটন অঞ্চল। যেখানে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দেখা যায়। এছাড়া কক্সবাজার বৃহত্তম সমুদ্র সৈকত, সিলেট, জাফলং, টাঙ্গুয়া হাওর, সুন্দরবন ম্যানগ্রোভ অঞ্চলের মতো আকর্ষণীয় পর্যটন জোন রয়েছে বাংলাদেশে। তাছাড়াও প্রাকৃতিক অনেক সুন্দর সুন্দর এলাকা বাংলাদেশে রয়েছে। ফলে বড় ধরনের বিনিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে পর্যটন খাতে। মোট কথা হলো, বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ একটি উপযুক্ত দেশ। তাই বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য যা যা করা দরকার, তার ব্যবস্থা করে এক্ষেত্রে অগ্রসর হওয়া জরুরি।
বিশ্ব ভ্রমণ ও পর্যটন কাউন্সিলের (ডব্লিউটিটিসি) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পর্যটন খাত যেভাবে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে, তাতে ২০৩৩ সালের মধ্যে বৈশ্বিক পর্যটন খাতের আকার ১৫ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন বা ১৫ লাখ ৫০ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছাবে। বৈশ্বিক অর্থনীতিতে তখন এই খাতের হিস্যা বেড়ে দাঁড়াবে ১১ দশমিক ৫ শতাংশ। বিশ্লেষকেরা বলেন, যেসব দেশ যথাযথ নীতি প্রণয়ন করবে, তারা এই বাজারের হিস্যা তত বেশি নিতে পারবে।
সে হিসেবে বাংলাদেশের পর্যটন খাতে আয় বাড়ার সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে। প্রয়োজন হবে শ্রম পরিবেশের উন্নতি, ব্যবসা সূচকে উন্নতি, প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়ানোসহ নানা উদ্যোগ। কর্ম পরিবেশ নিশ্চিত করতে কাজের ন্যূনতম মজুরি, কাজের পরিবেশ, শ্রম ব্যবস্থাপনা, শ্রমিকের দুর্ঘটনার ক্ষতিপূরণ এবং মাতৃত্বজনিত ছুটিসহ সুযোগ সুবিধা বাড়াতে হবে। ব্যবসায়ের খরচ কমালে ব্যবসা সূচকে উন্নতি হবে। প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াতে হবে– এর কোনো বিকল্প নেই। বিশ্বের পর্যটন খাত যেভাবে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে, বাংলাদেশকেও সেভাবে অগ্রসর হতে হবে।