‘ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্ল্যান্টের (সদ্য মৃত কোনো মানুষের অঙ্গ প্রতিস্থাপন) প্রথম অঙ্গদাতা সারা ইসলামের নাম বাংলাদেশের চিকিৎসাক্ষেত্রে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।’ গতকাল বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) শহীদ ডা. মিল্টন হলে ব্রেন ডেথ রোগীর অঙ্গদান ও বাংলাদেশে প্রথম সফল ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্ল্যান্ট নিয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলা হয়।
বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাফল্যের তালিকায় আরেকটি মাইলফলক অর্জিত হয়েছে। বুধবার রাতে বিএসএমএমইউ উপাচার্য হিসেবে আমার সার্বিক নির্দেশনায় এবং প্রক্টর, ইউরোলোজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান দুলালের নেতৃত্বে ইউরোলজি, নেফ্রোলজি এবং এ্যানেসথেসিয়া, এনালজেসিয়া এবং ইনটেনসিভ কেয়ার মেডিসিন বিভাগের সার্বিক সহযোগিতায় বাংলাদেশে প্রথম সফল ক্যাডাভেরিক বা ব্রেন ডেথ রোগীর অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।
২০ বছর বয়সী দুরারোগ্যে আক্রান্ত সারা ইসলাম। তার ব্রেন ডেথ হয়েছিল, তার দেহ থেকে দুটি কিডনি বিকল রোগীর দেহে সফলভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। একইসঙ্গে এই সারা ইসলাম দুটি কর্নিয়াও দান করেছেন। সারা ইসলামের দুটি কিডনির একটি মিরপুরের বাসিন্দা ৩৪ বছর বয়সী শামীমা আক্তারের দেহে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কিডনি অপারেশন থিয়েটারে সফলভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়। একইসঙ্গে অপর কিডনিটি কিডনি ফাউন্ডেশনে অপর এক রোগীর দেহে প্রতিস্থাপন করা হয়। কিডনি ও কর্নিয়া দানকারী সারা ইসলামের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার চিকিৎসার সার্বিক দায়িত্বে ছিলেন অধ্যাপক ডা. কামরুল হুদা।
এ সময় রোগ নির্ণয় ও পরবর্তীতে অঙ্গদানের মহৎ উদ্যোগে সারার মা, স্কুল শিক্ষিকা শবনম সুলতানাকে উদ্বুদ্ধ করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিইউর সহকারী অধ্যাপক ডা. আশরাফুজ্জামান সজীব, যিনি ক্যাডাভেরিক সেলের সদস্য। পরবর্তীতে ডা. সজীব ট্রান্সপ্ল্যান্ট মেডিক্যাল টিমকে অবহিত করেন এবং পুরো প্রক্রিয়া শুরু হয়। শিক্ষিকা মা শবনম সুলতানা এবং বাবা শহীদুল ইসলামের জেষ্ঠ সন্তান সারা ইসলাম। সারার একটি ছোট ভাই আছেন। অঙ্গদাতা সারা ইসলাম জন্মের ১০ মাস বয়সে দুরারোগ্য টিউবারাস সিরোসিস রোগে আক্রান্ত হন। তিনি এ রোগ নিয়ে প্রায় ১৯ বছর ধরে লড়াই করে গেছেন। এ লড়াই করার পথ পরিক্রমায় সারা ইসলাম অগ্রণী গার্লস স্কুল থেকে এসএসসি এবং হলিক্রস কলেজ থেকে এইচএসসি কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন। এরপর তিনি ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলভমেন্ট আল্ট্রারনেটিভে (ইউডা) ফাইন আর্টসে ভর্তি হন। সারা ইসলাম ফাইন আর্টসের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি একজন দক্ষ চিত্রশিল্পী ছিলেন।
এদিন বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে সারা ইসলামের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্তরের শিক্ষক, চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা শরীক হন। এরপর তাকে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়।











